Centralized Referral System: রোগীরা যেন কুকুর-বিড়াল! ‘নতুন’ রেফারেল সিস্টেমে আদৌ বেড মিলবে? কী বলছে বাস্তব চিত্র
Centralized Referral System: হাবড়ার ছোট্ট মেয়েটিকে যখন রেফার করা হয়, তার আগে এটা কেউ নিশ্চিত করেছিল যে সে দ্বিতীয় হাসপাতালে গিয়ে একটা বেড পাবে? বাবা-মাকে হন্যে হয়ে একটা বেডের জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল, এক ডিপার্টমেন্ট থেকে আরেক ডিপার্টমেন্টে ছুটে বেড়াতে হবে না?
হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে, গড়িয়ার প্রৌঢ়কে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ছুটেছিল পরিবার। কিন্তু, চিঠি নিয়ে এসএসকেএমে যেতে যেতে সব শেষ। আর হাবড়ার পাঁচ বছরের শিশুকন্যা, তাকেও তো রেফারের চক্করে পড়ে পরপর হাসপাতালে ছুটে এসএসকেএমে ভর্তি হতে হল। অভিযোগ, সেন্ট্রালাইজড রেফারাল সিস্টেম নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের দাবি যে কতটা অন্তসারশূন্য, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর দুটি ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে দেয়। তাহলেও আদৌও কতটা ঠিকঠাক কাজ করছে এই সেন্ট্রালাইজড রেফারাল সিস্টেম? বদল আসছে কোন কোন জায়গায়? স্বাস্থ্য মহলের পাশাপাশি প্রশ্ন ঘুরছে আম-আদমির মধ্যেও। কিন্তু, অভিযোগের বন্যা এখনই থামছে না।
অভিযোগের অন্ত নেই
৫ বছরের ওই শিশুকন্যাকে হাবড়া থেকে ছুটতে ছুটতে আরজি কর হয়ে এসএসকেএমে আনা হয়, তার কারণ রেফার। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে এলাকাবাসীরা তো মস্করা করেই বলছেন, ‘এখানে চিকিৎসা শুরু হয় রেফার দিয়ে’! অভিযোগ উঠছে, হাবড়ার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি নাকি স্রেফ নাম কা ওয়াস্তে! গেলেই একটা জিনিস প্রায় সবাই শুনতে পান। তা হল, অন্য জায়গায়, অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ! এক-দুজনের ক্ষেত্রে নয়, অভিযোগটা কার্যত সবার গলায়!
এই খবরটিও পড়ুন
এই শিশুর মতো সরকারি হাসপাতালে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেরই আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। বাধ্য হয়ে ছুটতে হয় সরকারি হাসপাতালে। আর সেখানে পৌঁছে রোগীদের, বাড়ির লোকজন চোখের জল ঝরছে! এসব কি চোখে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কীভাবে কাজ করে সেন্ট্রালাইজড রেফারাল সিস্টেম?
নিয়ম বলছে, যে হাসপাতাল থেকে রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হবে তারাই রেফার করা হাসপাতালে বেড বুক করবে। এর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট পোর্টালে রোগীর তথ্য দেওয়া থাকবে। রোগীর নাম, কী সমস্যা রয়েছে, কী ওষুধ দেওয়া হয়েছে এবং কোন ডাক্তার দেখেছেন সেইসব তথ্য দিয়ে রেফার করা হবে। রেফার হয়ে গেলে পরে সেই হাসপাতালে নির্দিষ্ট পোর্টালে একটি মেসেজ এবং আওয়াজ হবে। তখনই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মী বা চিকিৎসকরা বুঝতে পারবেন তাঁদের হাসপাতালে কোন রোগী রেফার হয়ে আসছে। সেই মেসেজ কম্পিউটার স্কিনে আসবে। তাতে ক্লিক করে অ্যাপ্রুভ করলে খুব তাড়াতাড়ি রোগী ভর্তি হতে পারবেন।
কিন্তু হাবড়ার ছোট্ট মেয়েটিকে যখন রেফার করা হয়, তার আগে এটা কেউ নিশ্চিত করেছিল যে সে দ্বিতীয় হাসপাতালে গিয়ে একটা বেড পাবে? বাবা-মাকে হন্যে হয়ে একটা বেডের জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল, এক ডিপার্টমেন্ট থেকে আরেক ডিপার্টমেন্টে ছুটে বেড়াতে হবে না? পরিজনরা বলছেন, বড় বড় কথা হয় সেন্ট্রাল রেফারাল সিস্টেম নিয়ে। বেশ কয়েকটা হাসপাতালে চালু হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কী অবস্থা, সে তো হাবড়ার বাচ্চা মেয়েটির হয়রানি আর দুর্ভোগ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল। যদিও সেন্ট্রালাইজড রেফারাল সিস্টেম নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পাইলট প্রজেক্ট। দক্ষিণ দিনাজপুরের পাশাপাশি তাতে নাম আছে ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলারও। ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাইলট প্রজেক্ট ছিল কেন্দ্রীয় রেফারাল সিস্টেম। পুজোর আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে খাতায় কলমে চালু করা হয়েছে সিআরএস!
খাতায়-কলমে নয় কী বলছে বাস্তব ছবি?
সিংহভাগ জায়গাতেই বাস্তবের ছবিটা কিন্তু বলছে অন্য কথা। অভিযোগ, ভর্তি হতে আসা রোগীর পরিবারের সুবিধার্থে বসানো হয়নি কোনও প্রজেক্টর। এমনকী জানানো হচ্ছে না হাসপাতালের বেডের সংখ্যা কতটা কী আছে। সিআরএস প্রজেক্টটা কী আদপে তা জানেই না হাসপাতালের অধিকাংশ কর্মচারী থেকে রোগীর পরিবারের লোকজনেরা! তার মানে সবটাই হয়ে গিয়েছে। হয়ে আছে। কিন্তু, আসলে কিছুই হয়নি। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যালে রেফারেল নিয়ে কিছু বললে রোগীর পরিজনেরা আকাশ থেকে পড়ছেন! হাটে হাড়ি ভেঙে দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের কয়েকজন। তাঁরা বলছেন, সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমে রোগী ভর্তি এবং রোগী ট্রান্সফার চালুই হয়নি!
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল বা হাবড় স্টেট জেনারেল হাসপাতাল বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, প্রায় সর্বত্রই রেফার রোগ। অন্যদের দিকে ঠেলে দেওয়া। রোগীর পরিজনরা তো খানিক ক্ষোভের সুরেই বলছেন, হাবড়া হাসপাতালে এলেই কার্যত চিকিৎসা না করিয়ে অন্যত্র যেতে হবে। হাসপাতালে সুপারকে প্রায়ই দেখা যায় না। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারও ডুমুরের ফুল! অভিযোগ, কার্যত অভিভাবকহীন অবস্থায় চলছে হাসপাতাল। হাসপাতাল আছে পরিকাঠামো নেই। রাখঢাক না করে মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের আধিকারিকরা।
কী বলছে পরিসংখ্যান?
৬ নভেম্বর, ২০২৪: পরপর হাসপাতাল ঘুরে গড়িয়ার বাসিন্দার মৃত্যু
নভেম্বর, ২০২৩ : ৪ হাসপাতাল ঘুরে ‘অমিল’ বেড, মৃত্যু হরিপালের বাসিন্দার
ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ : ২ হাসপাতাল ঘুরে চিকিত্সা ‘অমিল’, মৃত্যু শ্রমিকের
ডিসেম্বর, ২০১৯: পথ দুর্ঘটনায় জখম, একাধিক হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যু আমতলার বাসিন্দার। সব মৃত্যুই রেফার ‘রোগে’। দাবি রোগীর পরিজনদের।
দুশ্চিন্তার মধ্যেও আশার আলো
তবে এই দুশ্চিন্তার মধ্যে একটা আশার আলো আছে, তা হল উত্তরবঙ্গের এক জেলা। যেখানে বঞ্চনার অভিযোগ বারবারই ওঠে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জুড়ে শুরু হয়েছে সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম। ইতিমধ্যে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে তপন ও কুমারগঞ্জ থেকে রেফার রোগী ভর্তি হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যেই সেন্ট্রালাইজড রেফারেল সিস্টেম চালু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে এখানে আবার ঝামেলা অনেক কম। যাঁরা ভর্তি হয়েছেন তাঁদের কোনওরকম বেগ পেতে হয়নি বলেই জানাচ্ছেন। সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমে রোগী রেফার হলে রোগীর পরিবারকেও কোনওরকম ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না বলেই দাবি।
প্রথম কয়েক দিনে বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল থেকে অন্য কোনও হাসপাতালে রোগী রেফার করা হয়নি। তবে তপন গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে একজন রোগী বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমে রোগী রেফার করায় রোগীকে ভর্তি করাতে কোনওরকম সমস্যা হয়নি পরিবারের।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)