‘আমাদের কর্মীরা সাহায্য করবে, পয়সা দিতে হবে না’, কেন ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’? বললেন মমতা
কলকাতা: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ঠিক তার দু’মাস আগে বিশেষ দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। জন সংযোগ তো বটেই, আসলে এই আবহে এই দুটি কর্মসূচি তৃণমূলের ‘কর্মযজ্ঞ’ বলেই ঘোষণা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের দুটি নতুন কর্মসূচি- ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ও ‘দিদির দূত’। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক বিষয়টা ঠিক কী…
‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ বিষয়টি কী?
রাজ্যের প্রায় ২ কোটি পরিবারের কাছে রাজ্য সরকারের ১৫টি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। আর দিদির সাড়ে তিন লক্ষ ‘দূত’ পৌঁছে সেই সুবিধা মানুষ পাচ্ছেন কিনা নিশ্চিত করবেন।
‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ নিয়ে রাজ্যের ১০ কোটি মানুষের কাছে, ২ কোটি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের সাড়ে তিন লক্ষ কর্মী পৌঁছবেন। তাঁরা মূলত ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করবেন। দিদির দূত নামক একটি অ্যাপ মোবাইলের প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। সেটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাবেন। উল্লেখ্য, এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটিতে, রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকবে, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন কোন কোন পরিষেবা তাঁদের পাওয়ার কথা।
রাজ্য সরকারের ৬ টি ক্ষেত্রে ১৫ টি প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকবে ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’এ।
প্রথম ক্ষেত্র: সামাজিক সুরক্ষা
এই বিভাগের মধ্যে থাকছে লক্ষ্মীর ভান্ডার, কৃষক বন্ধু, সামাজিক সুরক্ষা ঘোষণা, বিধবা ভাতা, মানবিক পেনশন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া রয়েছে।
দ্বিতীয় ক্ষেত্র- উপার্জন
এর আওতায় রয়েছে যুবশ্রী।
তৃতীয় ক্ষেত্র – শিক্ষা
এর আওতায় রয়েছে রাজ্য সরকারের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রী, শিক্ষাশ্রী প্রকল্প।
চতুর্থ ক্ষেত্র- স্বাস্থ্য
এর আওতায় রয়েছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প।
পঞ্চম ক্ষেত্র- আবাস
এর আওতায় রয়েছে বাংলার আবাস যোজনা, নিজ গৃহ নিজ ভূমি স্কিম।
ষষ্ঠ ক্ষেত্র- জয় বাংলা
এর মধ্যে রয়েছে জয় জোহার ও তপসিলি বন্ধু প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি। এই কর্মসূচির তৃণমূল কংগ্রেসের সাড়ে তিন লক্ষ কর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের কথা শুনবেন। রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি নিয়ে তাঁদের কোথায় কী অসুবিধা রয়েছে, পরিষেবা আদৌ পাচ্ছেন কিনা, তা সম্যকভাবে জানবেন।
দিদির সুরক্ষা কবচের আরও একটি বিষয় হল, রাজ্য নেতৃবর্গ প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও নগরাঞ্চলে একটা করে রাত থাকবেন। তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ সভা করবেন। পাশাপাশি ‘দিদির দূত’দেরও কাজের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেবেন।
‘দিদির দূত’রা বাড়ি বাড়ি ঘুরে দিদির সুরক্ষাকবচ দেওয়ার ক্যালেন্ডার ও ডোর স্টিকারও বিতরণ করবেন। অর্থাৎ রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির বিষয়ে যাতে কোনওরকমের সংশয় সাধারণ মানুষের মনে না থাকে, তার জন্য চেষ্টার কোনও ক্রটি রাখেনি তৃণমূল কংগ্রেস।
৮ তারিখ থেকে জেলার হেড কোয়ার্টারে পাওয়া যাবে কিট ব্যাগ। এই কিট ব্যাগে থাকবে নির্দেশিকা। কীভাবে কর্মসূচি পালন করবে তা লেখা থাকবে। সঙ্গে একটা চিঠি থাকবে। দিদির দেওয়া সেই চিঠি।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দলীয় কর্মীদের ক্ষেত্রেও এবিষয়ে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। নজরুল মঞ্চের মেগা বৈঠক থেকে অভিষেক বলেন, ” যারা দিদির দূত হয়ে যাচ্ছেন তারা দিদির দূতের মতো আচরণ করবেন। কারণ আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য প্রতিনিধি হিসাবে যাচ্ছেন। মানুষের প্রতি সংবেদনশীল হবেন। আরও বিনম্র, বিনয়ী হতে হবে। ধৈর্যের যেন বিচ্যুতি না ঘটে। প্রতি পরিবারে আধ ঘণ্টা সময় দিতে হবে।”
আরও সর্বোচ্চ বার্তা দিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “হয়তো কোনও ব্যক্তি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া জন্য অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটা পূরণই করতে পারছেন না। আমাদের কর্মীরা তাঁদের সাহায্য করবেন। এর জন্য কোনও পয়সাকড়ি লাগবে না। বিএসকে কেন্দ্র আমরা চালু করছি। প্রত্যেকটা ব্লকে। বিএসকে কেন্দ্রে মানুষের যে কোনও অসুবিধা রেজিস্ট্রার করতে পারবেন। এটা কিন্তু পয়সা দিয়ে নয়।” অর্থাৎ সরকারি সুবিধা পেতে যে আম জনতা কোনও পয়সা দিতে লাগবে না, তাই এদিন আরও একবার স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।