Tram in Kolkata: এ শহর জানে তার প্রথম সব কিছু, প্রথম প্রেম ভোলা কী এতই সহজ?
Tram in Kolkata: ১৮৬৯ সালে এই কামিনী দেবী একটা চিঠি লিখলেন তত্কালিন বাংলার লেফটান্যান্ট গর্ভনর জর্জ ক্যাম্পবেলকে। চিঠিতে আর্জি, হুজুর আমার পাল্কি নেওয়ার ক্ষমতা নেই। বাড়ির সামনে ঘোড়ার গাড়িও আসে না। আমার ছেলে স্কুলে যেতে পারছে না। আপনি কী কোনও একটা বিহিত করতে পারেন না? ক্যাম্পবেলের কাছে কীভাবে যেন চিঠি পৌঁছেও গেল।
কলকাতা: তিনি আছেন, আবার তিনি নেইও। মানে তিনি আছেন বলে আমরা জানি। কিন্তু পথেঘাটে তাকে খুব একটা দেখা যায় না। তার কথা এলেই অনেকেরই আজও কলেজের জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর রুটটা। ময়দানের সবুজ ঘাসের ভিতর থেকে যাওয়া। কলকাতার বুকে কম পয়সায় পারফেক্ট জয়রাইড। সেসব দিন বোধহয় এখন থেকে শুধু স্মৃতিতেই রাখতে হবে। শহর থেকে পাকাপাকি ভাবে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পর্যটকদের কথা ভেবে খালি একটি রুটে দিনে একটিই ট্রাম চলবে। বাকি সব রুট বন্ধ করবে পরিবহণ দফতর। খবরটা শুনে এক বাঙালি মহিলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে অনেকেরই। তিনি কামিনী দেবী।
১৮৬৯ সালে এই কামিনী দেবী একটা চিঠি লিখলেন তত্কালিন বাংলার লেফটান্যান্ট গর্ভনর জর্জ ক্যাম্পবেলকে। চিঠিতে আর্জি, হুজুর আমার পাল্কি নেওয়ার ক্ষমতা নেই। বাড়ির সামনে ঘোড়ার গাড়িও আসে না। আমার ছেলে স্কুলে যেতে পারছে না। আপনি কী কোনও একটা বিহিত করতে পারেন না? ক্যাম্পবেলের কাছে কীভাবে যেন চিঠি পৌঁছেও গেল। এই চিঠি পেয়েই শহর কলকাতার পরিবহণ নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন ক্যাম্পবেল। পরের বছর সিদ্ধান্ত হল, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট রুটে চলবে ঘোড়ায় টানা ট্রাম। তবে ট্রাম তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার উপর নির্দেশ ছিল, এই যান শুধু মালপত্র পরিবহণের জন্য। লোকজনের যাতায়াত করার জন্য নয়। ১৯৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন প্রথমবার শহর কলকাতায় প্রথম ট্রাম চলল, তখন সেখানে মালপত্র বিশেষ ছিল বলে তো জানা যায় না। বরং মানুষের ভিড়ে ঠাসা ছিল সেই ট্রাম। রাধারমন মিত্রের লেখায় তার বিস্তারিত বর্ণনা আছে। তবে প্রথম ট্রামের মেয়াদ খুব বেশিদিন হয়নি। চালু হওয়ার কয়েকমাসের মধ্যেই থেমে যায় ট্রামের জার্নি। ১৮৮০ সালে ট্রাম কোম্পানির হাত ধরে আবার ট্রামযাত্রা শুরু।
১৯০২ সালের ২৭ মার্চ যখন কলকাতায় প্রথমবার বিদ্যুত চালিত ট্রাম চলল, তখন শহরে ট্রামের ৪টি রুট। সবমিলিয়ে ২৪ বার ট্রাম যাতায়াত করে। দেড়শো বছরের সেই পরম্পরা এবার সত্যিই ইতিহাস হওয়ার পথে। ট্রামের সঙ্গে কলকাতার সম্পর্ক কোনওদিনই মুছে ফেলার নয়। তাই রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে অনেকেই ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ নস্ট্যালজিকও বটে। ভালোবাসা- ভাললাগা তো আছেই, সঙ্গে দূষণহীন যান। জয়রাইড। ছোটবেলা বা প্রথম প্রেমের স্মৃতি। বৃষ্টিমাখা দিনে মন খুশ করে দেওয়া কিছু মুহূর্ত – এমন আরও অনেক কিছু। এসবই আবেগের কথা। কলকাতার ট্রাম নিয়ে জট, জটিলতাও কম নয়। আজ থেকে নয়, বেশ কিছু বছর ধরেই। কমতে, কমতে এখন দিনে হাতে গোণা ট্রামই চলে শহর কলকাতায়। এবার সে পাটও উঠছে। যে এসপ্ল্যানেড-খিদিরপুর রুটের কথা দিয়ে শুরু করলাম, সেই রুটও আমফানের পর থেকে বন্ধ। দেখুন, ২০১৫ সালেও কলকাতায় ২৫টি রুটে ট্রাম চলত। এখন ট্রাম চলে মাত্র ৩টি রুটে। রাজ্য সরকারের যুক্তি, হাতে গোনা রুটে ট্রাম চালানো খরচ সামলানো সম্ভব নয়। কলকাতায় রাস্তা কম। তাই ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। অন্যপক্ষ বলছে, এসব স্রেফ বাহানা। রাজ্য সরকার স্রেফ দায় ঝেড়ে ফেলতে ট্রাম তুলে দিচ্ছে।