CV Anand Bose: প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভরসার লোক, চিনে নিন বাংলার নয়া রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে

Who is CV Anand Bose: বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর), বাংলার নতুন রাজ্যপাল হলেন সিভি আনন্দ বোস। এর আগে মেঘালয় সরকারের উপদেষ্টা পদে ছিলেন।

CV Anand Bose: প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভরসার লোক, চিনে নিন বাংলার নয়া রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে
বাংলার নয়া রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 17, 2022 | 9:47 PM

কলকাতা: বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর), বাংলার নতুন রাজ্যপাল হলেন সিভি আনন্দ বোস। প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর, অন্তর্বর্তীকালীন রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল লা গণেশনকে। এদিন সেই পদে প্রাক্তন আইএএস অফিসার সিভি আনন্দ বোসকে নিযুক্ত করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর আগে মেঘালয় সরকারের উপদেষ্টা পদে ছিলেন সিভি আনন্দ বোস। তিনি একই সঙ্গে আবাসন বিশেষজ্ঞ, লেখক এবং বক্তাও বটে। একসময় ভারত সরকারের মুখ্য সচিব পদেও ছিলেন তিনি। আসুন চিনে নেওয়া যাক বাংলার নতুন রাজ্যপালকে।

শিক্ষা

ডক্টর সিভি আনন্দ বোস জওহরলাল নেহেরু ফেলোশিপের প্রাপক। এছাড়া তিনি মুসৌরির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল একাডেমি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রথম ফেলো।

কর্মজীবন

১৯৭৭ সালে আইএএস-এ যোগ দিয়েছিলেন সিভি আনন্দ বোস। কেরলে জেলাশাসক, শিক্ষা, বন ও পরিবেশ, শ্রম এবং সাধারণ প্রশাসনের মতো বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রধান সচিব এবং অতিরিক্ত মুখ্য সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন। সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, সুশাসন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, গ্রামোন্নয়ন এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলনের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তিনি জেনেভায় অবস্থিত ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্ন (CERN) এবং ফ্রান্সে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ফিউশন এনার্জি অর্গানাইজেশন বা আইটিইআর (ITER)-এ ভারতের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। একসময় অ্যাটমিক এনার্জি এডুকেশন সোসাইটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাঁকে ‘শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির’-এর কোষাগার সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্ট কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ইংরেজি, মালয়ালম এবং হিন্দিতে উপন্যাস, ছোট গল্প, কবিতা এবং প্রবন্ধ মিলিয়ে তাঁর ৩২টি বই বেরিয়েছে।

‘নির্মিতি কেন্দ্র’

১৯৮৫ সালে কেরলের কোল্লামের জেলাশাসক পদে থাকালানীন, নাগরিকদের সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব বাড়ি প্রদানের জন্য ‘নির্মিতি কেন্দ্র’ গড়েছিলেন। এই নির্মিতি কেন্দ্র পরবর্তীকালে জাতীয় আবাসন নীতির অংশ হয়ে ওঠে। সকল ভারতীয়র জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ি প্রদানের যে লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিয়েছেন, মনে করা হয়, তার মূলে ছিল সিভি আনন্দ বোসের এই প্রকল্পই। ২০১৪ সালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাত করে এই আবাসন প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন।

‘ডিস্ট্রিক্ট ট্যুরিজম প্রমোশন কাউন্সিল’

আজ পর্যটন শিল্পে কেরলের প্রভূত উন্নতির মূলেও সিভি আনন্দ বোসের মস্তিষ্ক ছিল বলে মনে করা হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি কোল্লামে ‘ডিস্ট্রিক্ট ট্যুরিজম প্রমোশন কাউন্সিল’ শুরু করেছিলেন। পরে কেরল সরকার রাজ্যের সমস্ত জেলায় সেই কাউন্সিল স্থাপন করেছিল। জাতীয় পর্যটন নীতিতে দেশের সব জেলায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। কেরলের প্রথম হাউস বোটও তাঁর আমলে কোল্লাম জেলাতেই চালু হয়েছিল। আজ রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রে আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হল এই হাউসবোটগুলি।

‘ধন্বন্তরী কেন্দ্র’

৩২ বছর আগে কেরলে সিভি আনন্দ বোসই ‘ধন্বন্তরী কেন্দ্র’ চালু করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানে হাসপাতালের আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায়। এই কেন্দ্রও পরবর্তীকালে কেরলের সমস্ত জেলায় তৈরি করা হয়েছে। ভারতে প্রথম সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ বিক্রি করা শুরু করেছিল ধন্বন্তরী কেন্দ্রই। পরে কেরল সরকার নিয়মিত ন্যায্য মূল্যে ওষুধ সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিল। ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন ঔষধি পরিকল্পনা’ এই ধন্বন্তরী কেন্দ্রগুলিরই বৃহত্তর রূপ বলে বিবেচনা করা হয়।

‘ফাইল টু ফিল্ড’

জনসাধারণের অভিযোগের প্রতিকার করতে এবং পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ এলাকাগুলির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে, ‘ফাইল টু ফিল্ড’ নামে কেরলের বিভিন্ন স্থানে একটি গণসংযোগ কর্মসূচি চালু করেছিলেন সিভি আনন্দ বোস। এটি একটি প্রশাসনিক উদ্ভাবন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে যা পারে। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী আলফোনস কান্নানথামের মতে, এই প্রকল্পই ছিল কেরলের বিশ্বখ্যাত গণ পরিষেবা ব্যবস্থার অগ্রদূত। যাকে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘও।

‘গ্রামোৎসব কর্মসূচি’

গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের জন্য সাব-কালেক্টর হিসাবে আনন্দ বোস ‘গ্রামোৎসব কর্মসূচি’ তালু করেছিলেন। কেরল সরকার পরবর্তীতে গ্রামীন এলাকায় কার্যকরী উন্নয়ন মডেল হিসাবে ২০০টি পঞ্চায়েত এলাকায় এই কর্মসূচি চালু করেছে।

‘সঞ্জীবনী কেন্দ্র’

সাস্তমকোট্টা হ্রদের তীরে ‘সঞ্জীবনী কেন্দ্র’ গড়ে তুলেছিলেন সিভি আনন্দ বোস। এটি হল, আয়ুর্বেদ চিকিত্সা এবং গবেষণার সুবিধা-সহ একটি বিরাট ঔষধি গাছের বাগান। রাজ্যের অন্যান্য অংশেও পরে একইরকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেরল বন বিভাগ এটিকে তাদের ফ্লাগশিপ প্রকল্প হিসাবে গ্রহণ করেছে।

‘অন্নপূর্ণা সোসাইটি’

মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং মহিলা উদ্যোগপতিদের তুলে আনার জন্য ১৯৮৬ সালে কোল্লাম জেলায় ‘অন্নপূর্ণা সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিভি আনন্দ বোস। অন্নপূর্ণা সোসাইটি চাকুরিজীবী ​​মহিলাদের হোস্টেল চালানো, আউটডোর কেটারিং, স্ট্রিট ফুডের জন্য মোবাইল রেস্তোরাঁ স্থাপন, মহিলাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি-সহ মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বহু কাাজ করে থাকে। অন্নপূর্ণা সোসাইটিকেই কেরলের বিখ্যাত ‘কুদুম্বশ্রী স্বনির্ভর গোষ্ঠী’র অগ্রদূত বলে মনে করা হয়।

ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প

জেলাশাসক হিসেবে সিভি আনন্দ, কোল্লাম জেলার মৎস্যজীবীদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পও চালু করেছিলেন। এটি রেশন কার্ড লোন নামেই পরিচিত। এর ফলে মৎস্যজীবীরা সুদখোর মহাজনদের খপ্পর রক্ষা পেয়েছিল।

পুরস্কার

তাঁর এই সকল অভিনব সামাজিক কাজগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও স্বীকৃতি পেয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তাঁর বিভিন্ন উদ্যোগকে চারবার ‘গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিস’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভারত সরকার তাঁকে জাতীয় বাসস্থান পুরস্কারে ভূষিত করেছে।

বিজেপি ঘনিষ্ঠতা

সিভি আনন্দ বোস বিজেপির জাতীয় নেতাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। সূত্রের খবর, ২০২১ সালে কেরলে বিজেপির ভরাডুবির পর, সিভি আনন্দ বোসকেই বিজেপির খারাপ ফলের কারণ বিশ্লেষণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মোদী। আনন্দ বোস রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের বিষয়ে তিনটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যের নেতাদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং দুর্নীতির অভিযোগই গেরুয়া শিবিরের খারাপ ফলের কারণ। তিনি বিভিন্ন পদ থেকে রাজ্যের নেতাদের সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।