‘তিন বছর পর কেন তদন্ত শুরু হল? কোনও বিশেষ কারণ?’ দেহরক্ষী খুনের মামলায় রাজ্যকে প্রশ্ন বিচারপতির

কোনও বিশেষ কারণ আছে, যার জন্য এই মামলার নতুন করে তদন্ত করতে হচ্ছে? প্রশ্ন করলেন বিচারপতি।

'তিন বছর পর কেন তদন্ত শুরু হল? কোনও বিশেষ কারণ?' দেহরক্ষী খুনের মামলায় রাজ্যকে প্রশ্ন বিচারপতির
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 06, 2021 | 6:27 PM

কলকাতা: দেহরক্ষী খুনের মামলায় স্বস্তি মিলল শুভেন্দু অধিকারীর। সকালেই সুরক্ষাকবচ চেয়ে আবেদন করেছিলেন শুভেন্দুর আইনজীবী। আর দুপুরেই সেই মামলায় রক্ষাকবচ পেলেন বিরোধী দলনেতা। দেহরক্ষী খুনের ওই মামলা সহ মোট তিনটি মামলায় স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তিন বছর আগে মৃত্যু হয়েছিল বর্তমানে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষীর। আর সেই মামলায় মাস কয়েক আগে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। কেন এত দিন কেউ মুখ খোলেননি? কেন তিন বছর পর হঠাৎ তদন্ত শুরু হল? সেই প্রশ্নই এদিন তুললেন বিচারপতি। এ দিন মোট শুভেন্দুর বিরুদ্ধে হ্ওয়া পাঁচটি মামলার শুনানি হয়, তার মধ্যে তিনটি মামলর তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও শুভেন্দু অধিকারীকে তলব করল সিআইডি? আদালতে আজ সকালেই এই প্রশ্ন রেখেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য। দেহরক্ষী খুনের সেই মামলায় রাজ্যকেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন বিচারপতি। নন্দীগ্রাম, মানিকতলা, কাঁথি, পাঁশকুড়া ও ফুলবাগানের মোট পাঁচটি মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। দেহরক্ষী খুনের মামলা সহ মোট তিনটি স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলার তদন্ত চলবে, তবে কোনও এফআইআর করতে গেলে হাইকোর্টের অনুমতি নিতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ দিন দেহরক্ষী খুনের মামলায় বিচারপতি রাজশেখর মান্থার প্রশ্ন করেন, ‘কোনও বিশেষ কারণ আছে? যার জন্য এই মামলার নতুন করে তদন্ত করতে হচ্ছে?’ জবাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘শুভেন্দু কেন সিবিআই তদন্তের কথা বলছেন? একজন বিরোধী দলের নেতা, একজন বিধায়ক কিভাবে তদন্ত এড়াতে পারেন?’ এরপর বিচারপতি আরও বলেন, ‘তিন বছর প্রয়োজন হল না কাউকে জিজ্ঞেস করার। এখন কি পরিবেশ বদলাল, যে তদন্ত পুনরায় শুরু করা হল? অ্যাডভোকেট জেনারেলের জবাব, ‘প্রাথমিক তদন্ত চলছিল। এবার আসল তদন্ত শুরু হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের প্রয়োজন হয়।’

কেন এই তিন বছরে স্ত্রীও সামনে এলেন না, সেই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তিনি উল্লেখ করেন, ‘গ্রেফতার আসলে প্রতিহিংসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই দেশে এটাই প্রচলিত, কোনও নতুন কিছু নয়। তিন বছরে কিছু হয়নি৷ এমনকি স্ত্রীও আসেন নি। এটাই উদ্বেগের।’ তিনি আরও বলেন, ‘বলছি না তদন্ত করবেন না। গ্রহণযোগ্য কিন্তু এই মুহুর্তে জরুরি কি না সেটা দেখতে হবে।’

কী সেই দেহরক্ষী খুনের মামলা?

২০১৮ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী তথা বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর। সেই মামলার প্রায় তিন বছর পর গত জুলাই মাসে তদন্তের দাবি তুলে এফআইআর দায়ের করেন শুভেন্দুর প্রাক্তন দেহরক্ষীর স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? সেই প্রশ্ন তুলে, সঠিক তদন্তের দাবিতে এফআইআর করেন নিহত দেহরক্ষীর স্ত্রী। অ্যাম্বুলেন্স পেতে অনেক দেরি হওয়ায় কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় শুভব্রতর। এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর সন্দেহ, ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেদিন দেরিতে এসেছিল? এফআইআর-এর বয়ানে সেই প্রশ্নই তোলেন সুপর্ণা।

জুলাই মাস থেকেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। শুভব্রতর পরিবারের বয়ান রেকর্ড করা হয়। একে একে ডেকে পাঠানো হয় শুভব্রতর তৎকালীন সহকর্মী তথা শুভেন্দুর বাকি দেহরক্ষীদের। আজ, সোমবার তাঁকে ভবানী ভবনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, হাজিরা দেননি তিনি। পাশাপাশি, হাইকোর্টের  কাছে সুরক্ষাকবচ চান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আরও পড়ুন: ‘চ্যালা-চামুণ্ডারাই আপনার নাম বলেছে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করুন’