কলকাতা: রাতারাতি রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদ থেকে চিকিৎসক অজয় চক্রবর্তীকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নতুন দায়িত্ব দিয়ে উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যার ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিসেস বা ডিএইচএস পদে বসানো হয়েছে তাঁকে। অন্যদিকে তাঁর জায়গায় রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন চিকিৎসক সিদ্ধার্থ নিয়োগী। আচমকা এই বদল নিয়ে বিস্তর চাপানউতর শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য মহলে। এরইমাঝে ডাক্তারদের একটি গ্রুপে অজয় চক্রবর্তীর লেখা নিয়ে নতুন করে শোরগোল শুরু হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট একরাশ ‘অভিমান’ নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন তিনি। আচমকা বদলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সুরও ধরা পড়েছে তাঁর লেখায়।
স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদ থেকে সরে যাওয়ার পর অজয়বাবু ওই বিবৃতি স্বরূপ লেখায় লিখেছেন, ‘আমার এই যাত্রাপথে সবাইকে পাশে পাওয়ার জন্য অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। আমাদের সবসময় নিজের কাজ করে যেতে হবে। তাতে হয়তো সবাইকে সব সময় খুশি করা যায় না, আমিও নিশ্চয়ই সবাইকে খুশি করতে পারিনি। কিন্তু আমরা আমাদের সিস্টেমটাকে ওন করি। তাই এরকম যাঁরা আমরা আমাদের সিস্টেমকে ভালোবাসি, তাঁরা চিরকালই আমাদের সিস্টেমের জন্য কাজ করে যাব’। তাঁর এই লেখা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন চাপানউতর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাক্তার জানান, “কলকাতা সহ জেলা স্তরে এমন অনেক সরকারি হাসপাতাল আছে, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অনেক কম। আট ঘন্টার ডিউটি রোটেশন অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগে প্রত্যেকদিন তিন জন ডাক্তার লাগবে, যা অসম্ভব। ডাক্তার অজয় চক্রবর্তী সেই বিষয়টি নিয়েই সোচ্চার হলে তাঁকে পানিসমেন্ট ট্রান্সফার করা হয়েছে”।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের ডাক্তারদের আটঘন্টা কাজের বিষয়টি বাস্তবায়ন করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন চিকিৎসক সিদ্ধার্থ নিয়োগী। যার বিরোধিতা করেছেন অজয় চক্রবর্তী। যে কারণে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের রোষানলে পড়েন বলেও মত ওয়াকিবহাল মহলের একটা বড় অংশের। অন্যদিকে সিদ্ধার্থ নিয়োগী রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিবদের বেশ ঘনিষ্ঠ বলে খবর। রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে পরিকাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে সেক্ষেত্রে আট ঘন্টার কাজের রোস্টার যে কোনও সময়ে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে অনেকটা নীচে নামিয়ে দিতে পারে বলে মত অধিকাংশ ডাক্তারদের। যদিও বিপক্ষের যুক্তিও আছে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অন্তর্গত ৭টি নার্সিংহোমের উপর সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের কোপ নেমে আসে। পরিকাঠামোয় নানা গরমিল থাকার কারণে দায়িত্বে থাকার সময় এই জরিমানা করেন অজয় চক্রবর্তী। কিন্তু এই নার্সিংহোম গুলির বেশিরভাগ মালিক আবার শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে খবর। তাঁরা অজয় চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দলের শীর্ষ স্তরে নানা অভিযোগ করেছেন বলে জল্পনা শোনা যায়।
তবে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে নতুন প্রাপ্ত সিদ্ধার্থ নিয়োগীকে শুভেচ্ছাও জানাতে দেখা যায় প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্তাকে। অজয় চক্রবর্তী লেখেন, ‘ডক্টর সিদ্ধার্থ নিয়োগী অত্যন্ত ভালো মানুষ এবং কর্মদক্ষ। তাঁর হাতে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প অনেক দোষ ত্রুটি শুধরে নিতে পেরেছে। যাতে ডাক্তারবাবুরা সঠিকভাবে রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করেন, হাসপাতাল গুলির পরিষেবা উন্নত হয়, হসপিটাল এডমিনিস্ট্রেশন ব্র্যাঞ্চে জয়েন করার পরই তিনি এই বিষয়ে গতি এনেছেন । আগামী দিনে তার হাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও অনেক উন্নতি করবে এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত’।