বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। সমস্যা হল, আমাদের ত্বকের (skin health) এত জ্ঞানগম্যি নেই। তাই ৩০ বছর বয়সে পৌঁছনো মাত্রই আমাদের শরীরে নানবিধ পরিবর্তন আসতে থাকে। সবচাইতে বড় পরিবর্তন দেখা যায় ত্বকে। ত্বকের সেই কিশোর বা কিশোরীবেলার মতো টানটান ভাব ক্রমশ আলগা হতে থাকে। নজরে আসে ধূসর চুল। হজমের কিছু সমস্যাও শুরু হয়। বাড়ে অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তির প্রবণতা। কমতে থাকে ত্বকের নমনীয়তা! সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ এবং ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ৩০ বছর বয়সে (30 Years Old) পৌঁছনোর পর ত্বকে এমন সূক্ষ্ম বলিরেখা দেখা দেওয়া আশ্চর্য নয়। ত্বকের কোষের দ্রুত বিভাজনের মাত্রা কমতে থাকে এই বয়স থেকেই। ত্বককে টানটান রাখে যে স্থিতিস্থাপক কোষ ও কলা যেমন কোলাজেন ও ইলাস্টিন, সেই কোষগুলির মাত্রা হ্রাস পেতে থাকে ক্রমশ। কমতে থাকে চামড়ার চকচকে ভাব (Bright Skin)। সূর্যালোকের খারাপ প্রভাব আর আগের মতো এড়ানো যায় না। ত্বকে ডার্ক স্পটের মাত্রাও বাড়তে থাকে।
বয়সবৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, দূষণের নেতিবাচক প্রভাব ত্বকে পড়ে। ফলে ত্বক ক্রমশ তার লাবণ্য হারাতে থাকে। তবে শরীরের অন্দরের কুপ্রভাবও ত্বকের শ্রী হারানোর জন্য মারাত্মকভাবে দায়ী থাকে। শরীরের অন্দরের গণ্ডগোল শুরু হয় আবার আমাদের কিছু কুঅভ্যেস থেকেই যেমন— চর্বিপূর্ণ জাঙ্কফুড খাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে তীব্র দুশ্চিন্তায় ভোগা এবং ত্বক পরিচর্যার জন্য ক্ষতিকারক প্রসাধনীর ব্যবহার ত্বকের ভায়বহ ক্ষতি করে ফেলে। তবে সুসংবাদ হল, আপনি চাইলেই ত্বকের স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে তুলতে পারেন! ত্বক হয়ে উঠতে পারে আগের মতোই কোমল ও শ্রীযুক্ত! শুধু দরকার ভিতর ও বাইরে থেকে শরীরকে পুষ্টি জোগানো। প্রশ্ন হল কীভাবে?
প্রাথমিক বিষয়
খাদ্যভ্যাসের সরাসরি প্রভাব পড়ে ত্বকে। সবুজ শাকসব্জি না খেয়ে শুধু প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য খেলে তার কুপ্রভাব শরীর ও ত্বকে পড়বেই। এছাড়া প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার জলপান করতেই হবে। জল আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয় ও ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। ত্বকও হয়ে ওঠে টানটান। এছাড়া ত্বকের রুক্ষতাও দূর করে পযাপ্ত মাত্রায় জল পান। চামড়ায় বলিরেখা পড়া বিলম্বিত করে। আর একটা কথা। ত্বকের সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও সমান প্রয়োজনীয়। ধূমপান, মদ্যপান ত্বকে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
কোলাজেন
ত্বকের কোলাজের উৎপাদন সঠিক থাকলে ত্বক আপনা থেকেই টানটান হয়ে ওঠে। কোলাজেন হল একধরনের প্রোটিন যা ত্বক রাখে টানটান, দীপ্তিময়! শরীরে কোলাজেনের মাত্রা বেশি থাকলে ত্বক আরও যৌবনময় দেখায়! বয়স বাড়লেও কোলাজেনের উৎপাদন আগের মতোই রাখতে হলে পাতে অবশ্যই রাখতে হবে সঠিকমাত্রায় লিন প্রোটিন। একইসঙ্গে খেতে হবে রঙিন শাকসব্জি, ফল। শাকসব্জি ও ফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ধরনের খাদ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও একাধিক জরুরি খনিজ যা শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে।
এসপিএফ ভুলবেন না
বয়স যাই হোক না কেন, ত্বকে এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে ভুলবেন না যেন। এমনকী রোদ্রে বেরতে হোক আর নাই হোক ত্বকে সানস্ক্রিনের প্রতিরক্ষার প্রলেপ দিন অবশ্যই। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন লোশন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবেই আমাদের ত্বক পড়ে ট্যান। ত্বকের কোষগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ত্বক রুক্ষ হয়ে ওঠে। ত্বকে পড়ে বলিরেখা।
মুখমণ্ডলের ম্যাসাজ
প্রতিদিন নিয়ম করে একটা সময় নির্বাচন করুন ফেশিয়াল ম্যাসাজ-এর জন্য। ত্বকের কোষে আরও ভালো রক্তসঞ্চালনের জন্য মুখমণ্ডলের ম্যাসাজের বিকল্প নেই।
নিয়ন্ত্রিত এক্সফোলিয়েট
স্কিন কেয়ার রুটিনে আলাদা সময়ের খরচের দাবি রাখে ‘এক্সফোলিয়েট’। এই প্রক্রিয়ায় ত্বকের উপর জমে থাকা পুরনো মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ফেলা হয় যাতে নতুন প্রাণবন্ত ও সজীব কোষ নজরে আসে। ৩০ বছর বয়সে পৌঁছনোর পর সপ্তাহে অন্তত তিনবার এক্সফোলিয়েট করা জরুরি। এর চাইতে বেশি এক্সফোলিয়েট করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। আর হ্যাঁ এক্সফোলিয়েট করার পর ত্বকে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করুন।
আরও পড়ুন: Tan Remove At Home: এবার ট্যানকে বলুন বাই-বাই! রোদে পোড়া দাগ তুলতে অব্যর্থ এই ৪ ঘরোয়া প্যাক