হাঙ্গার অর্থাৎ খিদে আর ক্রেভিং অর্থাৎ খাবারের প্রতি আকর্ষণ, এই দুইয়ের বেসিক ফারাকটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে চলা করোনাভাইরাসের দাপট আর তার জেরে লকডাউন তথা গৃহবন্দি জীবনে খিদে এবং খাবারের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ অনেকেরই জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে গিয়েছে। অবসরে বসে থাকলেই মনে হচ্ছে খিদে পেয়েছে। অথচ খানিকক্ষণ আগেই হয়তো ভরপেট খেয়েছেন। এই লাগামছাড়া খাদ্যাভাসের কারণে শরীরে জমেছে অতিরিক্ত মেদ। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার চূড়ান্ত অনীহা জন্মেছে শরীরচর্চার প্রতি। ফলে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
এই পর্যায়ে হাঙ্গার এবং ক্রেভিং- এর মধ্যে যে সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে সেটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
নিউট্রিশনিস্ট নমামি আগরওয়ালের কথায়, যদি ভরপেট খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই মনে হয় আবার খিদে পাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে সেটা মোটেই হাঙ্গার বা আসল খিদে নয়। এটা আদতে ক্রেভিং। সোজা বাংলায় যাকে বলে চোখের খিদে। বিশেষ করে মধ্যরাতে এই ক্রেভিং হয় মারাত্মক ভাবে। যাঁরা রাত জেগে কাজ বা পড়াশোনা করেন, কিংবা যাঁদের রাত জাগার অভ্যাস রয়েছে, তাঁরা এই ‘মিডনাইট ক্রেভিং’- এর সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত। এই ক্রেভিংয়ের সময় অনেকেরই মিষ্টি জাতীয় কিছু যেমন- মিষ্টি, চকোলেট, আইসক্রিম, পায়েস এইসব খেতে ইচ্ছে করে।
অন্যদিকে, হাঙ্গার বা খিদের ব্যাপারটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। এক্ষেত্রে শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যার ফলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার খিদে পেয়েছে। যেমন- অনেকক্ষণ না খেলে পেটের ভিতর মনে হয় যেন কেমন খালি খালি লাগছে, গা গোলাতে পারে, পেটের ভিতর অদ্ভুত শব্দ পেতে পারেন, হঠাৎ করেই ঝিমুনি ভাব লাগতে পারে। এইসব লক্ষণের অর্থ হল এবার আপনার শরীরের খাবার প্রয়োজন। এরকম হলে, যদি আপনি খাবার খেয়ে নেন, সেটা যা হোক, দেখবেন এইসব লক্ষণ উধাও হবে।
কিন্তু ক্রেভিং ব্যাপারটা আলাদা। এক্ষেত্রে বিশেষ কিছু খাবার অর্থাৎ নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। বিশেষ করে যা যা আপনি খেতে ভালবাসেন, সেই সবই খেতে ইচ্ছে করবে। খিদে পেলে কিন্তু আপনি হাতের সামনে যা পাবেন, তাই খেয়ে নেবেন। কিন্তু ক্রেভিং হলে আপনি পছন্দসই খাবার না হলে খাবেন না। এটাই হল হাঙ্গার আর ক্রেভিংয়ের মূল ফারাক।