শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের শরীরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হল খাবার (Food)। শরীর যদি সঠিক পুষ্টি না পায় তাহলে কিন্তু একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এই পুষ্টি সুস্থ থাকতে (Women Health) সারা জীবনই প্রয়োজন। ছেলেদের আর মেয়েদের শারীরিক গঠনের বিশেষ কিছু পার্থক্য থাকে। আর এই পার্থক্যের জন্যই কিন্তু শারীরিক ভাবে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় দুর্বল। আর তাই ছেলেদের ও মেয়েদের পুষ্টির চাহিদার মধ্যেও বেশ কিছু ফারাক থাকে। বরাবরই মেয়েদের হাড়ের গঠন দুর্বল হয়। এছাড়াও মেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও (Immunity Power) তুলনায় কম হয়। সে কারণেই কিন্তু মেয়েদের একেবারে ছোটবেলা থেকে শুরু করে মেনোপজ পরবর্তী সময় পর্যন্ত সুষম আহারের প্রয়োজন হয়।
ক্যালোরি- উচ্চতা, দৈনিক কার্যকলাপ এবং বয়সের নিরিখে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শরীরে কম ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। এর কারণ হল পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকে। যে কারণে বিএমআই কম। আর এই বিএমআই কম বলেই কিন্তু মেয়েদের ওজন কমাতে বেশি সময় লাগে। তবুও মেয়েদের নিয়ম করে শাকসবজি, দুধ, প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাট খেতেই হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য শরীকরে অনেকটা পুষ্টির প্রয়োজন হয়। মায়ের থেকেই কিন্তু শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার যায়। যে কারণে সুস্থ থাকতে মায়ের সুষম আহারের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও সন্তানকে স্তন্যপান করানো মায়ের অনেক বড় দায়িত্ব। যে কারণে ভাল খাবারের প্রয়োজন আছে। আর এই স্তন্যপানের মাধ্যমেই কিন্তু মায়েরা ওজন কমাতে সক্ষম হন। মেনোপজ পরবর্তী সময়ে পেটে চর্বি জমার আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। যেখান থেকে বাড়ে পরবর্তী রোগ ঝুঁকি। আর তাই খাবার সব সময় ক্যালোরি মেপে হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কিছু শরীরচর্চা কিন্তু করতেই হবে।
আয়রন- আয়রন সব বয়সের সব মহিলাদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলায় বেড়ে উঠতে যেমন আয়রন অপরিহার্য তেমনই গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও খুবই প্রয়োজনীয় হল এই আয়রন। বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে অনেক মেয়েই অ্যানিমিয়ার সমস্যায় ভোগেন। সেই সময়ে আয়রন খুবই দরকারি। প্রসবের সময়ও প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে দরকার আয়রন। মেনোপজ পরবর্তী সময়ে মহিলারা শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকের তুলনায় একটু কমই থাকে আয়রন। সেই সময়েও কিন্তু আয়রনের সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। সবুজ শাক-সবজি, মাছ, ফল, অঙ্কুরিত ছোলা, ভিটামিন সি আয়রনের ভাল উৎস।
ফলিক অ্যাসিড- ভিটামিন বি৯ হল ফোলিক অ্যাসিড। যা ডিএনএ আর আরএনএ সংশ্লেষণের জন্য দায়ী। লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনও ক্রিয়াকলাপের জন্য এবং রক্তের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় এই ফলিক অ্যাসিড। ফলিক অ্যাসিডের অভাব হলে গর্ভস্থ সন্তানের জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়। এছাড়াও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হলে হোমোসিস্টাইনের উৎপাদন বাড়ে। যেথান থেকে আসে হৃদরোগের সম্ভাবনা। আর তাই শাকসবজি, ছোলা, মুগ, বিভিন্ন রকম বাদাম. ডিম এসব রোজ খান।
ক্যালসিয়াম- মেয়েদের শরীরে এমনিই ক্যালসিয়াম কম থাকে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি জনিত সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। আর তাই এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে নিয়মিত দুধ, ছোলা, সোয়াবিন, রাজমা, বিভিন্ন রকম বাদাম এসব খান। এতে গর্ভস্থ শিশুর যেমন হাড় ও দাঁতের বিকাশ হয় তেমনই মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান হয়। এছাড়াও ক্যালসিয়াম শিশুর জন্মের সময় প্রিক্ল্যাম্পসিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। স্নায়ুর কার্যকারিতা ও পেশির স্বাস্থ্য ভাল রাখতেই ক্যালসিয়াম বেশি করে খান।