করোনা, লকডাউন যেমন আমাদের শব্দভান্ডারে নতুন সংযোজন তেমনই করোনা পরবর্তী জীবনেও এসেছে অনেক রকম পরিবর্তন। কিছুটা বাধ্য হয়েই। বলা ভাল জীবন এখন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। মহামারী সব মানুষকেই অনেক কিছু শিখিয়েছে। প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আবার কেউ হারিয়েছেন তাঁর প্রিয়জনকে। তবে দীর্ঘ লকডাউনে প্রায় সকলেরই হেঁশেল বদলে গিয়েছিল ছোটখাট রেস্তোরাঁতে। মোমো থেকে ফুচকা সবই সেখানে তৈরি হয়েছে। লএছাড়াও সংক্রমণ এড়াতে বিশেষজ্ঞরা বারবার জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন ডায়েটে।
সব মিলিয়েই মানুষের খাদ্যাভ্যাসে এসেছে পরিবর্তন। সুস্বাস্থ্যের খাতিরে সকলেই এখন স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার দিকে ঝুঁকেছেন। এমন কিছু খাবার তাঁরা রাখছেন যা আমাদের শরীরের জন্য ভাল। যেখান থেকে পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত পুষ্টি। তুলনায় জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু কমেছে অনেকটাই।
আজকাল সকলেই পরিবেশ নিয়েও সচেতন। বাড়িতে গাছ লাগানোর প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে অনেকখানি। সেই সঙ্গে বাস্তুতন্ত্র নিয়েও অনেকে সচেতন। এছাড়াও শিল্পে গুরুত্ব বাড়ছে খাদ্যের। খাদ্য শিল্প কী ভাবে আরও উন্নতির শীর্ষে যাবে সে বিষয়েও কিন্তু সচেতন ভারতীয় নাগরিকেরা। ডেলয়েটের খাদ্য সমীক্ষায় যে যে তথ্য উঠে এসেছে-
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা- করোনা পরবর্তী সময়ে দৈনন্দিন জীবনযাক্ত্রা নিয়ে সকলেই সচেতন। সুস্থ জীবনযাত্রার অর্থই হল পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং প্রয়োজনমত ঘুম। ১৯৬১ সালে যেখানে মানুষের দৈনিক খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ ছিল ৬৩ শতাংশ, ২০১৭ তে তা নেমে এসেছে ৫৫ শতাংশতে। ২০২০ থেকেই খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনের তালিকায় সবথেকে বেশি পরিমাণে থাকছে ফল আর শাকসবজি। এছাড়াও গ্রিন টি, অলিভ অয়েলের ব্যবহার বেড়েছে।
পুষ্টিকর খাবার- যে সব খাবারের পুষ্টিমবল্য বেশি, ফাইবার বেশি পরিমাণে রয়েছে সেই সব খাবার গ্রহণের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। আর সেই তালিকায় রয়েছে ভাত, ডাল, গমের মতো, আটা, ওটস, ডালিয়াও। বলা ভাল বিকল্প এই খাদ্যগুলিতে- ওটস, কুইনোয়া, ডালিয়ার প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়েছে অনেকখানি।
অরগ্যানিক খাবারে জোর- প্যাকেটজাত খাদ্য, প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা যে কোনও প্যাকড ফুডের দিক থেকে ঝোঁক কমেছে অনেকখানি। বরং বাড়ছে অরগ্যানিক খাবারের চাহিদা। এই ভেষজ/ অরগ্যানিক চাষে অনেক বেশি পরিমাণ লগ্নি করছেন মানুষ। ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রবণতা আরো বাড়বে বলে আশা পুষ্টিবিদদের। বিভিন্ন সংস্থাকেও উৎসাহী করার চেষ্টা চলছে যাতে তাঁরা আরও বেশি জোর দেন অরগ্যানিক প্রক্রিয়াকরণে।
পছন্দে পরিবর্তন- লকডাউন পরবর্তী সময়ে সকলেই জোর দিয়েছেন স্থানীয় বাজারের উপর। স্থানীয় ভাবে যে সব খাবার তৈরি হচ্ছে, স্থানীয় সবজি-ফল অনেক বেশি কিনছেন মানুষ। বাইরের থেকে যে সব খাবার, ফল বা প্যাকেটজাত দ্রব্য আসে সেগুলো কেনাবেচায় আগ্রহ কমেছে। কিউই কিংবা বেরির পরবর্তে অনেক বেশি দেশি ফলে জোর দিয়েছেন সকলে। রেডি টু ইটের পরিবর্তে নিজেরাই খাবার বানিয়ে নিতে আগ্রহী।
খুচরো বিক্রেতাদের বাজার কমেছে- কোভিডের আগেও খুচরো চাল, চিনি, ডাল, নুন যে পরিমাণে বিক্রি হত সেই বিক্রিতে কিন্তু এখন ভাঁটা এসেছে। খোলা বাজারের পরিবর্তে প্যাকেটজাত চা, চিনি, বাদাম-ই মন কেড়েছে বিক্রেতাদের।
অনলাইনে কেনাবেচা বেড়েছে- কোভিড পরবর্তী সময়ে বেড়েছে অনলাইন বেচাকেনা। খাবার হোক কিংবা মুদিখানা- অনলাইনে এখন সবই বেড়েছে। যে ভাবে এই বেচাকেনা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ২০২৫ সালের মধ্যে এই বিক্রি ২৮ শতাংশ থেকে পৌঁছে যাবে ৫৩ শতাংশে এমন কথা কিন্তু উঠে এসেছে সমীক্ষায়। সেই সঙ্গে স্টার্ট আপের সংখ্যা বেড়েছে। নিজের উদ্যোগেই অ্যাপ বানাচ্ছেন, যার মাধ্যমে সহজেই গ্রাহক হাতের মানে পেয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী থেকে খাবার।