ইতিহাসবিদরা বলেন, ১৭৭০ সালে বাংলায় দেখা দিয়েছিল ভয়ঙ্কর এক দুর্ভিক্ষ। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৪৩ সালে বাংলায় দেখা দিয়েছিল ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ, মারা যান প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষ। আবার ১৯৭৪ সালে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশেও এক ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ৭৪-এর দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত। বেসরকারি হিসেবে প্রায় ১৫ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল সেবার! পরিসংখ্যানগুলি দেওয়ার কারণ একটাই, জাতিসংঘের মহাসচিব (United Nation Chief) অ্যান্টেনিও গুতেরাস সতর্কবাণী দিয়েছেন— চলতি বছরে একাধিক দুর্ভিক্ষ (Famine) দেখা দেওয়ার বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে। তিনি নানা দেশের মন্ত্রীদের অনুরোধ করেছেন খাদ্যসুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিতে ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে।
বার্লিনে আয়োজিত এক সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, সারা বিশ্বই নজিরবিহীনভাবে খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছে। তিনি আরও বলেন, এমনিতেই বিশ্ব উষ্ণায়ন, কোভিড ১৯ অতিমারীর ফলে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার গতি মন্থর হয়ে পড়েছিল, তার উপর আবার ইউক্রেনে জারি থাকা যুদ্ধ (Russia-Ukraine War) সমস্যাটিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বা ‘সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তা পর্যায় শ্রেণীবিভাগ’ অনুসারে ইতিমধ্যেই সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং দক্ষিণ সুদানের ৪ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। জাতিসংঘ দ্বারা নিয়োজিত সংস্থা, আঞ্চলিক সংস্থা, সাহায্যকারী গোষ্ঠী কিছু পরিমাপক দ্বারা খাদ্য নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করেছে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, কোনও এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণার আগে সাধারণত এই ধরনের সার্ভে চালানো হয়। ইতিমধ্যে আরও ৩৪ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
‘২০২২ সালে একাধিক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ২০২৩ সালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’— সাবধান করেছেন গুতেরাস। তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন, ‘২১ শতকে দাঁড়িয়ে মানুষের এমন তীব্র ও ব্যাপকহারে অনাহারে থাকা মেনে নেওয়া যায় না।’ তিনি আরও জানান, অবিলম্বে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ থামানো উচিত। কারণ যুদ্ধ না থামা অবধি এই সঙ্কটের সঙ্গে মোকাবিলার আলাদা কোনও পথ নেই। কারণ সমগ্র বিশ্বের গমের চাহিদার ২৯ শতাংশ রপ্তানি দেশ দু’টি!
সমস্যা হল, প্রতিবেশী দেশটিকে আক্রমণ করেই থেমে নেই রাশিয়া। ইতিমধ্যে ইউক্রেন থেকে রপ্তানি করার খাদ্যশস্যপূর্ণ জাহাজগুলিকে পর্যন্ত সাগরে ভাসতে বাধা দিচ্ছে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়ার উপর নানা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মস্কো চাইছে তাদের দেশ থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খাদ্যশস্য রপ্তানির আগে এভাবে চাপ সৃষ্টি করতে যাতে পশ্চিমী দেশগুলি সেই ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলি উঠিয়ে নেয়।
টালমাটাল পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ এবং টার্কি মধ্যস্থতা করার প্রায়াস চালিয়ে যাচ্ছে। গুতেরাস এই প্রসঙ্গে বাড়তি বক্তব্য রাখতে অসম্মত হন, কারণ তাঁর বিবৃতি থেকে পুনরায় কোনও জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা পুরোপুরি দূর করা যায় না।