Free Train Travel: ৭৫ বছর ধরে যাত্রীরা বিনা টিকিটে ট্রেনে যাতায়াত করেন, ভারতের কোথায় রয়েছে এমন রুট?
Bhakra-Nangal rail route: নেহরা-নাঙ্গাল ড্যাম রেল রুটে ট্রেনে চেপে যেতে গেলে, কোনও টিকিটের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ টিকিট ছাড়া এখানের ট্রেন ভ্রমণ একদম বৈধ।
টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণ অবৈধ। এমন কাণ্ডের জন্য আপনাকে জরিমানাও দিতে হবে। লোকাল ট্রেন হোক বা কোনও দূরপাল্লার ট্রেন—ভারতীয় রেলের এই নিয়ম সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এমনও এক রুট রয়েছে, যেখানে ট্রেনে চেপে গেলে আপনার টিকিটের দরকার পড়ে না। আমরা কথা বলছি নেহরা-নাঙ্গাল ড্যাম রেল রুটের। আপনি যদি এই রুটে ট্রেনে চেপে যেতে চান, কোনও টিকিটের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ টিকিট ছাড়া এখানের ট্রেন ভ্রমণ একদম বৈধ। তবে, এই রুটে যে ট্রেন চলে, তা ভারতীয় রেলের নয়।
নেহরা এবং নাঙ্গাল ড্যাম দুই স্টেশন অবস্থিত পঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের সীমান্ত এলাকায়। দুই স্টেশনের মাঝে দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার। শতদ্রু নদীর তীর বরাবর পাহাড়ি পথ বেয়ে এগিয়ে যায় ট্রেন। যদিও এই ট্রেন ভারতীয় রেল দ্বারা পরিচালিত হয় না। এই ট্রেনের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড।
পঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত বিখ্যাত ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধ। এই বাঁধ এলাকার উপর দিয়ে চলাচল করে এই ট্রেন। মূলত পর্যটকদের এই বাঁধ ঘুরিয়ে দেখানোর জন্যই চালু হয়েছিল। প্রায় সাত দশক আগে এই ট্রেন পরিষেবা শুরু করেছিল ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড। এই বাঁধের সৌন্দর্য, কীভাবে এই বাঁধ তৈরি হয়েছিল এই সব কিছু জানা যাবে, যদি আপনি এই ট্রেনে ভ্রমণ করেন।
স্বাধীনতার পরের বছরেই ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয় ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধ তৈরি কাজ। বাঁধটা চালু হয় ১৯৬৩ সাল। সেই সময় থেকেই চলে আসছে এই ট্রেন পরিষেবাও। প্রথমদিকে, এই ট্রেন পরিষেবা ব্যবহার করা হত শুধু বাঁধে কাজ করা শ্রমিকদের উদ্দেশে। শ্রমিকরা ছিল এই ট্রেনের নিত্যদিনের যাত্রী। বাঁধ তৈরির যন্ত্রপাতিও নিয়ে যাওয়া হত এই ট্রেনেই। তারপর ধীরে ধীরে এই ট্রেন এবং বাঁধ পর্যটন কেন্দ্রের অংশ হয়ে ওঠে। আর ট্রেনে বাড়তে থাকে পর্যটকদের ভিড়। নেহরা এবং নাঙ্গাল ড্যামে কোনও টিকিট কাউন্টার নেই। এমনকী ট্রেনেও কোনও টিটি বা টিকিট পরীক্ষক থাকেন না। সম্পূর্ণ বিনা খরচে আপনি এই ট্রেনে নেহরা থেকে নাঙ্গাল ড্যাম এবং নাঙ্গাল ড্যাম থেকে নেহরা যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রতিদিনই যে এই ট্রেনে পর্যটকদের ভিড় হয় তা নয়। সবমিলিয়ে খুব বেশি হলে শ’তিনেক যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন এই ট্রেন। ১৩ কিলোমটারের রাস্তা হলেও এই অঞ্চলের প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষের কাছে দৈনন্দিন যাতায়াতের মাধ্যমে এই ট্রেন। স্থানীয় মানুষদের কাছে বিনাখরচের এই ট্রেনই ভরসা। মূলত স্কুলের ছাত্রছাত্রী, কলেজ পড়ুয়া এবং শ্রমিকেরাই বেশি যাতায়াত করেন এই রুটে। তাঁদের ৭৫ বছর ধরে পরিষেবা দিয়ে আসছে এই ট্রেন।
প্রথমদিকে এই ট্রেনটি বাষ্পচালিত ইঞ্জিনে চলত। আধুনিকীকরণের জন্য ১৯৫৩ সালে আমেরিকা থেকে তিনটি ইঞ্জিন আনা হয়। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত হলেও, ট্রেন ও রুটের ঐতিহ্য বজায় রাখার চেষ্টা এখনও জারি রয়েছে। যেমন এখন আধুনিক ডিজেল চালিত ইঞ্জিন। কিন্তু ট্রেনের বগি আজও কাঠের। এই ট্রেনে চাপলে মনে হবে, সেই ব্রিটিশ শাসিত ভারতের ট্রেনে চেপেছেন। যদিও প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮ থেকে ২০ লিটার ডিজেল খরচ হয়। আর এই কাঠের বগিগুলোও তৈরি হয় প্রতিবেশী দেশের করাচিতে। ২০১১ সালে ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড পর্যটকদের জন্য এই বিনামূল্যে পরিষেবা বন্ধ করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু আঞ্চলিক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা ভেবে তা আর বাস্তবায়িত করেনি।