ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে অনেকেই সান্দাকফুকে বেছে নেন। কিন্তু এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা ট্রেক করতে খুব একটা পছন্দ করেন না। কিন্তু সান্দাকফু না গেলে ওই রুতে বেড়াতে যেতে পারবেন না, এমন নয়। মানেভঞ্জন থেকে শুরু হয় সান্দাকফুর যাত্রা। এখান থেকে অনায়াসে আপনি গাড়ি চেপে পৌঁছাতে পারেন। এরপর ধোত্রে, চিত্রে, টংলু, তুমলিং, কালাপোখরি পেরিয়ে পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হয় সান্দাকফু। তবে, গাড়ি চেপে ধোত্রেতেও আপনি যেতে পারেন। সান্দাকফু রুটে ধোত্রে হল শেষ পাহাড়ি গ্রাম যেখানে গাড়িতেও যাওয়া যায়।
প্রায় ৮৫৩০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত ধোত্রে। মেঘ, পাইন আর কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে ধোত্রে। অর্থাৎ পাইনের বনের কোলে দাঁড়িয়ে মেঘেদের দেশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ রয়েছে ধোত্রেতে। সম্ভবত ধোত্রেই সবচেয়ে নিচু পর্যটন কেন্দ্র যেখান থেকে স্লিপিং বুদ্ধার অবয়ব স্পষ্ট দেখা যায়। ধোত্রেতে জনবসতি কম। হাতে গোনা ৩০টি পরিবারের বাস এখানে। থাকার জায়গাও সীমিত। তবে, এখানে বেশ ভালই পর্যটনদের আনাগোনা লেগে থাকে। কিন্তু গ্রাম ছেড়ে দু’পা এগোলেই খুঁজে পেয়ে যাবেন নির্জনতা। দেখতে পাবেন পাইনের বন। আর রয়েছে দু-একটা ভিউ পয়েন্ট। যেখান থেকে দেখা যায় স্লিপিং বুদ্ধাকে।
সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যানের কোলে অবস্থিত ধোত্রে নিজের মতো করে সুন্দর। গ্রামজুড়ে অরগ্যানিক ফসলের চাষ। বাড়ির সামনে একফালি জমিতেই চাষ হচ্ছে কপি, গাজর, মটর, বিনস। গ্রামের পথ ধরে মিনিট পাঁচেক এগিয়ে গেলেই রয়েছে আকাশচুম্বী পাইনগাছের ঘন বন। গরমে এই ধোত্রে যাওয়ার অন্য মজা রয়েছে। এই সময় সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান জুড়ে দেখা যায় রডোডেনড্রন। ঘন সবুজ পাইনের সারির মাঝে উঁকি দেয় লাল রডোডেনড্রন। আর তার সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন রঙের ডেইজি আর অর্কিড। ধোত্রের হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মাঝে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মজাই আলাদা। ঘন পাইনের বন থেকে পাখির ডাকও শোনা যায়।
হোমস্টে ও কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউতে কোনও পরিবর্তন নেই ধোত্রেতে। তবু ধোত্রে সবার থেকে আলাদা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারাবৃত শৃঙ্গে দেখা যায় লাল, হলুদ, কমলার ছটা। ধোত্রের কোলে দাঁড়িয়ে দার্জিলিং, সুখিয়াপোখরি, টংলুর পাহাড় দেখা যায়। যদিও টংলুর যাত্রাপথ শুরু হয় এই ধোত্রে থেকেই। যদিও ধোত্রে ও টংলুর মাঝে রয়েছে আরও পর্যটন কেন্দ্র চিত্রে। এছাড়া ধোত্রেতে রয়েছে একটি ভিউ পয়েন্ট যার পৌঁছতে হয় ধোত্রে মেডিসিনাল প্ল্যান কনসারভেশন এলাকার মধ্য দিয়ে। এই এলাকায় এমন অনেক গাছ রয়েছে, যার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে নানা ওষুধ তৈরি হয়।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ধোত্রের দূরত্ব ১০৪ কিলোমিটার। শেয়ার গাড়িতে যেতে চাইলে আওনাকে ঘুম হয়ে দার্জিলিং থেকে সুখিয়াপোখরি হয়ে পৌঁছতে হবে ধোত্রে। মানেভঞ্জন থেকেও আপনি ধোত্রে যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। মানেভঞ্জন থেকে ধোত্রের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। ধোত্রে থেকে পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারেন টংলু। মাত্র ৬ কিলোমিটারের পথ।