Nimtita Jamidarbari: ‘জলসাঘর’ পেল হেরিটেজ তকমা, মুর্শিদাবাদ গেলে নিমতিতার জমিদার বাড়ি আর মিস করবেন না
Murshidabad: নিমতিতার জমিদার বাড়ির প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস ও সংস্কৃতি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জমিদার বাড়ির ভগ্নপ্রায় অবস্থা। তবে, এবার জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করা হবে বাড়িটিকে।
বাঙালির উইকএন্ড ট্রিপে মুর্শিদাবাদ থাকে। হাজারদুয়ারি প্যালেস, কাটরা মসজিদ, মতিঝিল পার্ক, ইমামবাড়া ইত্যাদি ঘুরে দেখেন অনেকেই। এবার এই ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর সঙ্গে যোগ হতে চলেছে আরও একটি জায়গা। নিমতিতার জমিদার বাড়ি। সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ তৈরি হয়েছিল যে জমিদার বাড়িতে, সেটাই হল এই নিমতিতার জমিদার বাড়ি। সম্প্রতি এই বাড়ি তকমা পেয়েছে হেরিটেজের। পর্যটন কেন্দ্র রূপে সেজে উঠছে নিমতিতার জমিদার বাড়ি।
প্রায় ১৮০ বছরের ইতিহাস জড়িয়ে নিমতিতার জমিদার বাড়ির সঙ্গে। ১৮৫৫ সালে গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরী মুর্শিদাবাদের নিমতিতায় তৈরি করেন এই জমিদার বাড়ি। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে মুর্শিদাবাদের এই অঞ্চলে শুরু হয় চৌধুরীদের জমিদারি। ব্রিটিশ শাসনে তৈরি হওয়া এই জমিদার বাড়িতে লক্ষ্য করা যায় ইটালিয়ান ধাঁচের স্থাপত্যকীর্তি। পাঁচটি উঠোন আর প্রায় দেড়শোটি ঘর নিয়ে তৈরি রাজপ্রাসাদ। সেই সময় মুর্শিদাবাদ জেলার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজো হত নিমতিতার জমিদার বাড়িতে। এই জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোও প্রায় ২০০ বছরের পুরনো।
নিমতিতার জমিদার বাড়ির প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ১৮৯৭ সাল থেকে নিমতিতার জমিদার বাড়ি হয়ে ওঠে নাটকের আঁতুড়ঘর। দ্বারকানাথ চৌধুরীর পুত্র মহেন্দ্রনারায়ণ এই রাজপ্রাসাদের এক অংশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হিন্দু থিয়েটার রঙ্গমঞ্চ। সেকালের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ হত এই জমিদার বাড়িতে। আসতেন নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ীর মতো বহু বিশিষ্ট মানুষ। এরপর ১৯৫৭ সালে সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘জলসাঘর’ ছবির শুটিংয়ের জন্য বেছে নেন নিমতিতার জমিদার বাড়িকে। ‘জলসাঘর’-এর পর ১৯৫৯ সালে ‘দেবী’, ১৯৬০ সালে ‘সমাপ্তি’রও শুটিং হয়েছে এখানে। এছাড়া নিউ জ়িল্যান্ডের বিখ্যাত ফোটোগ্রাফার ব্রায়ান ব্রেক সেই সময় অপর্ণা সেনকে নিয়ে ‘মনসুন ইন ইন্ডিয়া’ নামে ফোটোস্টোরি শুট করেছিলেন এই নিমতিতার জমিদার বাড়িতে।
ঐতিহ্য, ইতিহাস নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে নিমতিতার জমিদার বাড়ি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জমিদার বাড়ির ভগ্নপ্রায় অবস্থা হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে কোনও সংস্কার করা হয়নি। তবে, এবার জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করা হবে বাড়িটিকে। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন থেকে হেরিটেজ স্ট্রাকচার ট্যাগ পেয়েছে। বাড়িটির অনেক অংশ ইতিমধ্যে গঙ্গার জলে ক্ষয়ে গিয়েছে। এমনকী বাড়ির যে অংশে হিন্দু থিয়েটার রঙ্গমঞ্চ গড়ে উঠেছিল, সেটাও প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। জরাজীর্ণ হলেও বাড়ির গৌরব আজও জীবিত। বাড়ির একটা বিশাল বারান্দা, সিঁড়ির ভগ্নপ্রায় দশা, ভরে গিয়েছে আগাছায়। তাই সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু হতে চলেছে নিমতিতার জমিদার বাড়িতে। আর গড়ে উঠতে চলেছে মুর্শিদাবাদের পর্যটন কেন্দ্র।