এই প্রথম বার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করে ইতিহাস গড়তে চলেছে কাতার (Qatar)। বিশ্বকাপ দেখতে আসা কাতারের প্রতিটি দর্শক সেখানকার প্রাকৃতিক নৈসর্গ উপভোগ করার সুযোগ পাবে। কাতার এমন এক দেশ যা আধুনিক এবং ঐতিহ্যের নিখুঁত মিশ্রণ প্রকাশ করে। এক ঝলকে দেখে নিন কাতারের কিছু সেরা দর্শনীয় স্থান...
পার্ল দ্বীপ: প্রায় ৪ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত পার্ল দ্বীপ মুলত এক কৃত্রিম দ্বীপ। এটি পশ্চিম দোহার উপসাগরের উপহ্রদ থেকে ৩৫০ মিটার দূরে অবস্থিত। কাতারের ঐতিহাসিক মুক্তা সেঁচ ও বাণিজ্যের প্রতীক হিসেবে এই দ্বীপটির এই রকম আকৃতি দেয়া হয়েছে। পার্ল দীপে রয়েছে ১২টি এলাকা, যার প্রতিটি স্বতন্ত্র ভূমধ্যসাগরীয় বায়ুমণ্ডল সম্পন্ন। এখানকার বিভিন্ন আঁকাবাকা খাল, রঙিন ভিলা এবং খিলানযুক্ত সেতু পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষিত করে।
দোহার ইসলামী শিল্প জাদুঘর: চাইনিজ স্থপতি আইএম পেইয়ের নকশা করা ইসলামী শিল্প জাদুঘর (Museum of Islamic Art) জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় ২০০৮ সালে। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত এই জাদুঘরকে দূর থেকে একে অপরের উপরে রাখা কয়েকটি বাক্সের স্তুপের মতো দেখায়। এটির ক্রিম রঙের চুনাপাথরের বাহ্যিক অংশটি ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের আভাস দেয়। সূর্যের আলোতে জাদুঘরটির ধারগুলো ঝলমল করে। এই স্থানটিও কাতারে যাওয়া দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
দোহার সামরিক দুর্গ আল কুত: কাতারের এই ঐতিহাসিক দুর্গটি নির্মিত হয়েছে ১৯২৭ সালে। অত্যন্ত সুন্দর এই দুর্গটি কয়েক যুগ ধরেই জাদুঘর হিসেবে পর্যটকদের বিস্ময়ের খোরাক যোগাচ্ছে। এখনে রয়েছে পুরনো কাঠের সাজসজ্জা, প্রাচীন মাছ ধরার উপাদান, তৈল চিত্র এবং পুরনো ছবি। কাতারের ইতিহাস ও এখানকার বাসিন্দাদের জীবনধারা বোঝার জন্য এই দুর্গে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। ইউনেস্কো মনোনীত এই দুর্গে অনেক পর্যটকই উটের পিঠে চড়ে আসেন।
ইনল্যান্ড সমুদ্র: কাতারের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত খোর আল আদাইদ মুলত এক দ্বীপ, যা ঘেরা বিশাল এক জলাধার দিয়ে। একে প্রায়শই ইমল্যান্ড সমুদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২ কিলোমিটার চওড়া এই জলাশয়টি পারস্য উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি গভীর এবং সরু ১০ কিলোমিটার চ্যানেলের মধ্য দিয়ে। এই জায়গাটি কচ্ছপ, গাজেল, অরিক্স, ডলফিন এবং বিপন্ন ডুগং সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল। এ ছাড়া অস্প্রেস, টার্ন্স, সিগাল সহ ফ্ল্যামিঙ্গোর মত পরিযায়ী পাখিও দেখা যায়। পর্যটকদের জন্য এখানে ব্যবস্থা রয়েছে স্যান্ড স্কিইং, কোয়াড বাইকিং এবং উটের পিঠে চড়ার।
সৌক ওয়াকিফ: দোহার বিখ্যাত মার্কেট হল সৌক ওয়াকিফ। যেখানে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জিনিস কেনার, সুস্বাদু খাবার খাওয়ার; এমনকি আকর্ষণীয় স্থানীয় ক্যাফেগুলোতে সময় কাটানো যায়। এখানকার সুস্বাদু কাবাব চেখে দেখতে পারেন ভ্রমনার্থীরা।
ফ্যালকন সৌক: সৌক ওয়াকিফের ঠিক পাশেই অবস্থিত এই সংগ্রহশালাটি শুধুমাত্র বাজপাখি সম্পর্কিত যাবতীয় সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো। এখানে বাজপাখিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। ট্রেনিংপ্রাপ্ত এই বাজপাখিগুলির এক একটির দাম বিভিন্ন বিলাসবহুল গাড়ির চেয়েও বেশি হয়। ফ্যালকন ফেস্টিভেলের সময় দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শকরা হাতে বাজপাখি নিয়ে ছবি তোলেন।
কাটারা সাংস্কৃতিক গ্রাম: কাতারের রাজধানী দোহাতে অবস্থিত, কাটারা সাংস্কৃতিক গ্রাম একটি চমৎকার উদাহরণ, যে কীভাবে তেল এবং রিয়েল এস্টেটের উপর নির্ভরশীল একটি দেশ। এখানে বিনোদনের জন্য বিশেষ মিউজিক্যাল শো আয়োজন করা হয়। এখানকার রেস্তোরাঁয় সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
দোহা মরুভূমি: কাতারে গিয়ে পর্যটকরা মরুভূমি দেখবে না, তা তো হতেই পারে না। দোহা মরুভূমিতে পর্যটকরা সাফারিও করে থাকেন। কাতারের অন্যতম দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পড়ে দোহা মরুভূমি।