গণেশ উত্সবে গোটা মহারাষ্ট্রই এখন আনন্দোত্সবে মেতে উঠেছে। তবে শুধু মহারাষ্ট্রই নয়, কলকাতা, বিহার-সহ দেশের বিভিন্ন শহরেও ধুমধাম করে গণপতি বন্দনা করা হচ্ছে।
গত ৩১ অগস্ট থেকে শুরু হয়েছে গণেশ চতুর্থী। সেই দিন থেকে গণেশ মূর্তি স্থাপন করে পুজো করা শুরু হয়েছে। তবে এই উত্সবের মধ্য়ে মুম্বইয়ের সবচেয়ে ঐতিহ্যশীল ও জনপ্রিয় পুজো লালবাগের বিঘ্নহর্তার কথা না বললেই নয়।
মারাঠি ভাষায় লালবাগের গণপতিকে লালবাগচা রাজা বলা হয়। প্রতিবারের মত এবারেও লালবাগচা রাজাকে দেখার জন্য প্রচুর মানুষের ঢল নেমেছে মধ্য মুম্বইয়ের লালবাগে। ২০২০ সালে ৮৬ বছরের মধ্য়ে প্রথমবারের জন্য লালবাগচা রাজার দর্শন পাননি ভক্তরা। কোভিড অতিমারিতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই সেই বছর পুজো বন্ধ রাখা না হলেও দর্শনের উপায় ছিল না।
ভারতের অন্যতম বৃহত্তম হিন্দু উত্সবে মধ্য মুম্বইয়ের এই বিখ্যাত লালবাগচা রাজা গণপতি এবার ৮৯ বছরে পা দিয়েছে। মুম্বইকরদের চরম উত্সাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গণপতি বাপ্পাকে বরণ করে নিয়েছে। মহামারির কারণে এই উত্সবে ভাটা পড়লেও এবছর সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি কেউই।
১৯৩৪ সালে মধ্য মুম্বইয়ের লালবাগ বাজারে লালবাগচা রাজা গণপতি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। আসলে বাজারের মধ্যে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জেলেরা মিলে এই পুজো প্রথম শুরু করেছিলেন। জানা যায়, গত ৮৯ বছর ধরে কাম্বলি পরিবার দ্বারা পরিচালিত কাম্বলি আর্টস প্রতিমা তৈরি করা থেকে শুরু করে পুজোর সব দায়িত্ব পালন করে।
রত্নাকর কাম্বলি, যিনি কাম্বলি পরিবারের প্রধান ছিলেন, তিনি ১৯৩৫ সালে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। সেই থেকে পারিবারিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়ে যায়। বর্তমানে রত্নাকর কাম্বলি জুনিয়র প্রতিমার যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। প্রতি বছর কাম্বলি আর্টস ওয়ার্কশপে রত্নাকর কাম্বলি জুনিয়র অত্যন্তযত্নের সঙ্গে প্রতিমার প্রতিটি অংশ তৈরি করেন। প্রতিমার নকশাও পেটেন্ট করা হয়েছে। গণপতির উচ্চতা প্রায় ১৮-২০ ফুট। প্রতি বছর গণেশ চতুর্থীর আগে প্রতিমা উন্মোচন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে খুব ধুমধাম করে পুজো শুরু করা হয়।
লালবাগচা রাজার দর্শন ও আশীর্বাদ পেতে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়। কেউ আসেন তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে, কেউ আসেন দূর থেকে একবার দর্শন পেতে। ইচ্ছেপূরণের জন্য যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের মাঝে মাঝে দুই দিনের বেশি অপেক্ষা করতে হয়।
গণেশ চতুর্থীর শেষদিনকে অনন্ত চতুর্থী বলা হয়। এই বছর ৯ সেপ্টেম্বর অনন্ত চতুর্থী পড়েছে। এই দিন প্রতি বছরের মত গণপতি প্রতিমা বিশাল শোভাযাত্রা বের করে বিসর্জন করা হবে। জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র এইবছর প্রতিমা ডুবিয়ে নিরঞ্জন করা হবে।
গণেশ বিসর্জনের এই আচার সকাল ১০টার দিকে শুরু করা হয়। পরের দিন পর্যন্ত চলে সেই শোভাযাত্রা। তবে এই শোভাযাত্রা ও বিসর্জন শুরু মধ্যে প্রতিমাটি শহরের বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ের চারপাশে নিয়ে যাওয়া হয়।