ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে আলিপুর কারাগারের সুনাম ছিল বিস্তর। ব্রিটিশ শাসনকালে এই কারাগারেই বিভিন্ন সময়ে বন্দি করে রাখা হয়েছিল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নজরুল ইসলাম, বিধানচন্দ্র রায়, জওহরলাল নেহেরু, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বন্দিদের।
হাইকোর্টের নির্দেশ ও রাজ্য সরকারের প্রস্তাবমত আলিপুর জেলের ১০৮ একর জমিতে মিউজিয়াম তৈরি হল। ঐতিহ্যবাহী বিল্ডিংটিকে ঘিরে মামলা-মোকদ্দমা চলার পর এবার ঐতিহাসিক আলিপুর কারাগারটিকে মিউজিয়ামে পরিণত করে সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেনষ। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু বা সুভাষচন্দ্র বসু, এই বিল্ডিংটিতে বন্দি ছিলেন। ছিলেন আরও মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের সম্পর্কে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানুক। আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানুক। বলা যায় এটাই আমাদের পুজোর উপহার।
ঐতিহ্যবাহী ভবনটিতে আগে আলিপুর জেল প্রেস ছিল। সেটি তুলে নিয়ে সরস্বতী প্রেসে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে, হেরিটেজ সাইটকে অক্ষত রেখেই নতুন নির্মাণের কাজ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে মিউজিয়াম।
এই সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত এই জেলেই ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন বিপ্লবী দীনেশ মজুমদার, দীনেশ গুপ্তেরা। তবে যে সব ঘরে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বন্দি ছিলেন, সেইসব ঘরগুলিকে আগেই হেরিটেজ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
কারাগারের ভেতরে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের জন্য চার্জ ধার্য করা হয়েছে ১০০ টাকা। ঐতিহাসিক জেলকে মিউজিয়ামে গড়ে তোলার সময় বিশেষ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।
জাদুঘরের অভ্যন্তরে বেশ কিছু জিনিস যুক্ত করা হয়েছে। যেমন একটি লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র এবং একটি লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো।
আলিপুর জেলের মূল আকর্ষণ হল সেই সেল যেখানে এই মুক্তিযোদ্ধাদের রাখা হয়েছিল। অনেকটা আন্দামান ও নিকোর দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার জেলের মতন অনুভূতি পাবেন এখানে। এদিকে, আলিপুর সেন্ট্রাল কারেকশনাল হোমটিও ১১৬ বছরের পুরনো। ২০১৮ সালের জুন মাসে সাময়িকভাবে বারুইপুরের এক জি+১ কারাগাররে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।