অনন্ত নাগ, বাসুকি নাগ, শঙ্খ নাগ, পদ্ম নাগ, বাসুকি নাগ এমন কত কত নামের সর্পদেবদেবীর পুজো করা হয় নাগপঞ্চমীর দিনে। হিন্দু ক্য়ালেন্ডার অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণ পঞ্চমী অর্থাৎ পূর্ণিমার পরে যে কৃষ্ণপক্ষ তার পঞ্চম দিনে নাগপঞ্চমী পুজো করা হয়ে থাকে। পৌরাণিক কাহিনি মতে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, নাগলোক বা পাতাল থেকে নাগ বা সর্পকূল মানবের উদ্দেশে এদিন আশির্বাদ প্রেরণ করেন। পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য এই আশীর্বাদকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন ভারতীয়রা। সঙ্গে আসে অর্থ ও সম্মান ৷
বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী কালসর্প দোষ বা কালসর্প যোগ হল জন্মকুণ্ডলীর এমন একটি অবস্থা, যেখানে জ্যোতিষবিদ্যার সাত গ্রহ তথা বুধ, শুক্র, মঙ্গল, রবি, চন্দ্র, বৃহস্পতি এবং শনি সবাই রাহু ও কেতুর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। এই সাত গ্রহই যদি এক সমান্তরাল লাইনে চলে আসে, তাদের ওপর রাহু ও কেতুর ছায়া পড়ে, তবে তা পূর্ণ কালসর্প দোষ। আর যদি একটি গ্রহ এই ছায়ার বাইরে থেকে যায়, তাকে বলে আংশিক কালসর্প দোষ। এই সর্পোপাসনার উৎস কোথায়, খোঁজ নিতে বসলে প্রথমেই চোখ যায় পুরাণ ও মহাকাব্যের দিকে। সাপের ভয় এবং সাপের কামড় থেকে মুক্তি পেতে নাগ পঞ্চমীতে পুজো করা হয়।
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, এই কালসর্প দোষ কাটানোর জন্য চেন্নাইয়ের থিরুপ্পামপুরমে রয়েছে একমাত্র মন্দির, যেখানে এই দোষ থেকে মানুষের মুক্তি মেলে। জানা যায়, চোলান রাজবংশের আমল থেকে এই মন্দির নির্মিত করা হয়। কাম্বোনকোনাম থেকে কিছুটা দূরের জঙ্গল পথে এই মন্দিরটি অবস্থিত। এই মন্দিরে শিবপুজো নিষ্ঠা সহকারে সব নিয়ম মেনে করলে কালসর্প দোষের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে ধারণা।
ইতিহাস
পুরাতত্ত্ববিদের মতে; নাগবংশী নাগলোক সমুদ্রতল অথবা গোড়া থেকেই উষ্ণকোটিবন্ধীয় পর্বতমালায় থাকতেন। তারা খুব পরিশ্রমী এবং জ্ঞানী ছিলেন।
মহাভারতে এই নাগেদের উল্লেখ আছে। কথিত আছে; নাগকন্যা খুব সুন্দরী ছিলেন। অর্জুনের স্ত্রী উলুপি ছিলেন এমনই এক নাগকন্যা। মহাভারতে জানা যায়, কুরু বংশীয় রাজা পরীক্ষিত তক্ষক নাগের আঘাতে মারা গেলে তাঁর পুত্র জন্মেজয় প্রতিজ্ঞা করেন পৃথিবী থেকে নাগ বংশকেই ধ্বংস করবেন। তিনি এক যজ্ঞ শুরু করেন, যেখানে হাজার হাজার সাপ যজ্ঞের আগুনে এসে পড়তে থাকে। জরৎকারু মুনির পুত্র আস্তিকের হস্তক্ষেপে এই যজ্ঞ বন্ধ হয়। যে দিনটিতে সর্প যজ্ঞ বন্ধ হয়, সেই দিনটা ছিল শ্রাবণ মাসের শুক্ল পঞ্চমী।
অন্যদিকে, গরুড় পুরাণ থেকে জানা যায়, ব্রহ্মার পুত্র কাশ্যপ মুনির তৃতীয় স্ত্রী রুদ্র ছিলেন নাগবংশের কন্যা। তিনিই আবার নাগকূলের জননী। অন্যদিকে কাশ্যপ মুনির অন্য এক স্ত্রী জন্ম দেন গরুড়ের। এই কারণে, রুদ্র অতন্ত্য বিরূপ ছিলেন তাঁর প্রতি। ছোটবেলা থেকে মায়ের প্রতি দ্বিচারিতা দেখে, গরুড় প্রতিজ্ঞা করে নাগ কূলকে ধংস করবে।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন তিলে তিলে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ! কোথায় জানেন?