AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Kali Puja 2021: তন্ত্রশাস্ত্রের মতে, কালী হলেন দশমহাবিদ্যা! কত রূপে পূজিত হন দেবী কালী?

শাক্তমতে কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। তন্ত্র পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তোড়লতন্ত্র অনুসারে, কালী নয় প্রকার।

Kali Puja 2021: তন্ত্রশাস্ত্রের মতে, কালী হলেন দশমহাবিদ্যা! কত রূপে পূজিত হন দেবী কালী?
ছবিটি প্রতীকী। ফাইল ছবি
| Edited By: | Updated on: Oct 28, 2021 | 1:01 PM
Share

সামনেই কালীপুজো। অশুভ শক্তির ওপর শুভ শক্তির জয়ের এই উদযাপনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে বাঙালিরা। হিন্দু শাস্ত্র মানতে, শক্তির প্রতীক মায়ের এই রূপ। তন্ত্রমতে দেবী কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত । এই দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপেই পুজিত হয় কালী নামে।

কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। এই শব্দের অর্থ ‘কৃষ্ণ’ (কালো) বা ‘ঘোর বর্ণ’। ‘কাল’ শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে: ‘নির্ধারিত সময়’ ও ‘মৃত্যু’। কিন্তু দেবী প্রসঙ্গে এই শব্দের মানে “সময়ের থেকে উচ্চতর”। কালী বা কালিকা হলেন একজন দেবী। তিনি দেবী দূর্গার একটি রূপ । তার অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত সম্প্রদায় আবশ্যিক কালীপূজা করে থাকে। শাক্তমতে কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।

তন্ত্র পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তোড়লতন্ত্র অনুসারে, কালী নয় প্রকার। যথা: দক্ষিণকালিকা, কৃষ্ণকালী, সিদ্ধকালিকা, গুহ্যকালিকা, শ্রীকালিকা, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালিকা, শ্মশানকালিকা ও মহাকালী।

দক্ষিণাকালী- কালীর সবথেকে প্রসিদ্ধ ও জাগ্রত রূপ মনে করা হয় দক্ষিণাকালীর এই রূপকে।তার এই নামের ব্যাখ্যায় শাস্ত্রে বলা হয়েছে,দক্ষিণ দিকের অধিপতি যমরাজ(যিনি জীবন হনন করেন) কালীর এই রূপের ভয়ে পালিয়ে যান। এই কালীর গলায় ঝোলে মুন্ডমালার হার, তিনিই মুন্ডুমালা বিভূষিতা। ত্রিনয়নী দক্ষিণাকালীর বাম দিকের দুই হাতে তিনি ধরে থাকেন সদ্যকাটা নরমস্তক। দুই ডানহাতের একটিতে তিনি ভক্তদের বর দেন এবং অপরটিতে অভয়।তার ডান পা মহাদেবের বক্ষে স্থাপিত থাকে।

রক্ষাকালী- গুণ ও কর্ম অনুসারে দেবী কালীর আরেক রূপ। ইনি মহাদেবের শরীরে প্রবেশ ককে তাঁর কন্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হয়েছেন। শিবের ন্যায় ইনিও ত্রিশূলধানিনী ও সর্পযুক্তা। তিনি যেমন একদিকে অশুভ শকত্রি বিনাশকারিনী তেমনি ভক্তদের বিপদতারিণীও। প্রাচীন কালে নগর বা লোকালয়ের রক্ষার জন্য এই দেবীর পুজা করা হত। এই দেবীর পুজামন্ত্র ভিন্ন এবং বাহন স্থানভেদে সিংহ।

সিদ্ধকালী- সিদ্ধকালী কালীর একটি অখ্যাত রূপ। গৃহস্থের বাড়িতে সিদ্ধকালীর পূজা হয় না; তিনি মূলত সিদ্ধ সাধকদের ধ্যান আরাধ্যা। মায়ের এই রূপ সালংকারা অর্থাৎ গয়না পরিহিতা। কালীতন্ত্র-এ তাকে দ্বিভূজা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। অন্যত্র তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী। দক্ষিণহস্তে ধৃত খড়্গের আঘাতে চন্দ্রমণ্ডল থেকে নিঃসৃত অমৃত রসে প্লাবিত হয়ে বামহস্তে ধৃত একটি কপালপাত্রে সেই অমৃত ধারণ করে পরমানন্দে পানরতা। ডানপদ শিবের বুকে ও বামপদ শিবের উরুদ্বয়ের মধ্যস্থলে সংস্থাপিত।

ভদ্রকালী- ভদ্রকালী নামের ভদ্র শব্দের অর্থ কল্যাণ এবং কাল শব্দের অর্থ শেষ সময়। যিনি মরণকালে জীবের মঙ্গলবিধান করেন, তিনিই ভদ্রকালী। অনেক ক্ষেত্রে দুর্গা ও সরস্বতীর ওপর নাম হিসেবেই এই নামটি ব্যবহৃত হয়। কালিকাপুরাণ মতে, ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসীপুষ্পের ন্যায়, মাথায় জটাজুট, ললাটে অর্ধচন্দ্র ও গলদেশে কণ্ঠহার। তন্ত্রমতে অবশ্য তিনি মসীর ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা, কোটরাক্ষী, সর্বদা ক্ষুধিতা, মুক্তকেশী; তিনি জগৎকে গ্রাস করছেন; তার হাতে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও পাশযুগ্ম। গ্রামবাংলায় অনেক স্থলে ভদ্রকালীর বিগ্রহ নিষ্ঠাসহকারে পূজিত হয়।

চামুণ্ডাকালী- চামুণ্ডাকালী বা চামুণ্ডা ভক্ত ও সাধকদের কাছে কালীর একটি প্রসিদ্ধ রূপ। দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুর বধের নিমিত্ত দেবী কৌশীকিরর(পার্বতী) ভ্রুকুটিকুটিল ললাট থেকে উৎপন্ন হন। তার গাত্রবর্ণ নীল পদ্মের ন্যায়, হস্তে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস; পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম; অস্তিচর্মসার শরীর ও বিকট দাঁত। দুর্গাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপূজার সময় দেবী চামুণ্ডার পূজা হয়। পূজক অশুভ শত্রুবিনাশের জন্য শক্তি প্রার্থনা করে তার পূজা করেন।

শ্মশানকালী- গৃহস্থ বাড়িতে এই দেবীর পুজো হয় না। প্রাচীনকালে ডাকাতরা এই দেবীর আরাধনা করতো।কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দেবী চৌধুরানী” উপন্যাসে এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। কালীর “শ্মশানকালী” রূপটির পূজা সাধারণত শ্মশানঘাটে হয়ে থাকে। এই দেবীকে শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনে করা হয়। কাপালিকরা শবসাধনার সময় কালীর শ্মশানকালী রূপটির ধ্যান করতেন। সেকালের ডাকাতেরা ডাকাতি করতে যাবার আগে শ্মশানঘাটে নরবলি দিয়ে ডাকাতকালী ও শ্মশানকালীর পূজা করতেন। ডাকাতদের পূজিতা যেকোনো কালীকেই ডাকাতকালী বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতকালীর পূজা হয়। পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রাচীন শ্মশানঘাটে এখন শ্মশানকালীর পূজা হয়। রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, শ্মশানকালীর ছবিও গৃহস্থের বাড়িতে রাখা উচিত নয়।

আদ্যাকালী- মহানির্বাণ তন্ত্রে এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। কলকাতার আদ্যাপীঠের কালী ও এই দেবীর রূপ কিন্তু এক নয় এবং আদ্যাস্ত্রোত্রের দেবীও ইনি নন। আদ্যাকালীর রং মেঘের মতো ঘন নীল, কপালে চন্দ্ররেখা,ত্রিনেত্রা,রক্তবস্ত্র পরিধানে থাকে। প্রস্ফুটিত রক্তপদ্মে দেবী আসীনা হয়ে,মাধ্বীক পুষ্পের মিষ্টি সুধা পান করে সম্মুখে নৃত্যরত মহাকালের নৃত্য দর্শন করে আনন্দিতা তিনি।

আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: সামনেই কালীপুজো! জানুন দিনক্ষণ ও শুভ সময়

আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: স্বপ্নে কি কালী মূর্তি দেখেছেন? কোন রূপে দেখলে জীবনে কী কী ঘটতে পারে, জানেন?

আরও পড়ুন: কালী পুজোর ইতিহাস ও কাহিনি সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানুন এখানে