‘যোগ সারায় রোগ’! এই প্রবাদ বহু প্রাচীন। বহু যুগ ধরে ভারতের বিশিষ্ট ঋষি-মুণিরা নিয়মিত যোগব্যায়াম করতেন। সুষম খাদ্যাভাস ও যোগব্যায়ামের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতেন। শুধু তাই নয়, মন ও শরীর উভয়ই সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে। আর তাই দেশে এখনও যোগব্যায়ামকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে দেশ ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বের দরবারেই এই যোগ-ব্যায়াম এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। করোনা মহামারির সময় থেকেই মানুষ নিজের শরীর নিয়ে বেশি সচেতন। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও যোগব্যায়ামের মাধ্যমেই সুস্থ ও সবল রাখার চেষ্টা করা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
সাফল্যের তিনটি জিনিস থেকে আসে। সম্পদ, খ্যাতি ও মানসিক শান্তি। এই তিন জিনিস যদি একজনের মধ্যে থাকে তাহলে তিনি খুব সহজেই মানসিক শান্তি পাওয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল যোগব্যায়াম। ২১ জুন যোগ দিবস পালিত হয় প্রতি বছর। যোগব্যায়াম করার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। যোগব্যায়াম শুধুমাত্র দীর্ঘায়ু হতে নয়, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে, মনকে শান্ত ও মজবুত করতেও সাহায্য করে।
কেন ২১ জুন যোগ দিবস পালিত হয়?
পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, ২১ জুন হল উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন। এদিন ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে, গ্রীষ্মের অবিচ্ছিন্নতার পরে সূর্য দক্ষিণায়ণে পড়ে। গ্রীষ্মকালীন অয়নকাল। গ্রীষ্মকালের পর সূর্য দক্ষিণায়নে। এই দিনে সূর্য খুব তাড়াতাড়ি উদয় হয়, তারপর দেরি করে অস্তও যায়। দক্ষিণায়নের কারণে সূর্যের তেজ কমে যায়। কথিত আছে, সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় আধ্যাত্মিক কৃতিত্ব অর্জনে অত্যন্ত খুব উপকারী বলে প্রমাণিত। এছাড়া এর জেরে পরিবেশ দূষিত হয়, জীবাণু উৎপন্ন হয় সবচেয়ে বেশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এদিন। এই কারণেই এদিন যোগাব্যায়াম করে শরীর ও মন থাকে সুস্থ ও মজবুত।
কোন দেবতা সর্বপ্রথম যোগব্যায়াম শুরু করেন?
যোগ বিদ্যায়, শিবকে ‘আদি যোগী’ বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ ভগবান শিব ছিলেন যোগের জনক। বেদ অনুযায়ী, যোগ হল আত্মা ও পরমাত্মার মিলন। যোগ অহংকে ধ্বংস করে। যে মুহুর্তে মনের প্রবৃত্তি বন্ধ হয়ে যায়, তখনই যোগের কণা শুরু হয়।
ইতিহাস
২০১৫ সাল থেকে সারা বিশ্বে যোগ দিবস প্রথম পালিত হয়েছিল। সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর যোগ দিবস পালিত হয়। এমনকি করোনা অতিমারির সময়ও বিশেষ ব্যবস্থা মেনে যোগা দিবস পালিত হয়েছিল। প্রতি বছর যোগ দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য একটি করে থিম রাখা হয়। এই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস 2023-এর থিম হল ‘মানবতা’। যোগ দিবস বিশ্বের মানুষের কাছে যোগের অনেক শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই দিবস ধুমধাম করে পালিত হয়।