জামাইষষ্ঠীর (Jamai Sasthi 2022) কথা মনে পড়লেই চোখে ভাসে, আম-কাঁঠাল, ভাপা ইলিশের বড় পেটি, কচি পাঁঠার মাংস, হরেক রকমের মিষ্টি, পাঁচ রকম ভাজা, চিকেনের একটি পদ-সহযোগে দারুণ ভুরিভোজ। পঞ্চব্যঞ্জন সাজানো থালার সামনে জামাইয়ের ভিমড়ি খাওয়া মুখ। পাশে বসে শাশুড়ি হাত পাখা দিয়ে সমানে হাওয়া করে চলেছেন। এমন দৃশ্যে খুবই কম দেখা যায়। কারণ আধুনিক জামাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মডার্ন শাশুড়ির জামাই আদরের ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। সাধারণত, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে পালন করা হয় জামাইষষ্ঠী। এ বছর আগামী ৫ জুন, ২১ জ্যৈষ্ঠ, রবিবার পালিত হবে এই শুভ অনুষ্ঠান (Hindu Ritual)। হিন্দু মতে, ষষ্ঠী (Devi Sasthi) হলেন সন্তানাদির দেবী। তিনি গর্ভবতী হওয়ার আশীর্বাদ দেন। জামাইষষ্ঠীর মুখ্য উদ্দেশ্য হল, মাতৃত্ব, বংশবৃদ্ধি । মেয়ে যাতে সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে, তার জন্য মঙ্গল কামনাতেই এই ষষ্ঠী পালন করা হয়।
মেয়ের স্বামীকে পরম আদরে পঞ্জব্যঞ্জনে সাজিয়ে দেওয়া হয় জামাইয়ের পাত। আম-কাঁঠাল-দাম, ইলিশ মাছ, কচি পাঁঠার মাংস, রকমারি মিষ্টি, দই-সন্দেশ সহযোগে দুর্দান্ত ভুরিভোজ। আগেকার দিন নিয়ম ছিল, জামাই আদর না করলে মেয়ে সুখী দাম্পত্যজীবন কাটাতে পারে না। তাই জামাইকে আদর-যত্ন করার জন্য ও কন্যা যাতে দ্রুত গর্ভবতী হয়ে ওঠে, সেই লক্ষ্যেই জামাইষষ্ঠীর মতো রীতি চালু হয়ে আসছে।
জামাই ষষ্ঠীর শুভ সময়
পঞ্জিকা অনুসারে ২১ জ্যৈষ্ঠ , দুপুর ২টো ২২ মিনিট থেকে ষষ্ঠীর শুভ তিথি আরম্ভ। ২২ জ্যৈষ্ঠ সন্ধ্যে ৬টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত ষষ্ঠীর সময় সমাপ্তি হবে।
জামাই ষষ্ঠীর লৌকিক আচার
জামাই ষষ্ঠীর দিন জামাইকে ঘিরে শাশুরিদের এই অনুষ্ঠান বর্তমানে এক উত্সবের আকার ধারণ করেছে। ষষ্ঠীকে সন্তান-সন্ততি দেবী বা দেব বহির্ভূত লৌকিক দেবী ও বলা হয়। ঘর ও মন্দিরের বাইরে বট, করমচার ডাল পুঁতে প্রতীকী অর্থে অরণ্য রচনা করে এই পুজো করা হয়। এই জন্য জামাই ষষ্ঠীকে অরণ্য ষষ্ঠীও বলা হয়। বর্তমানে, নতুন বস্ত্র, উপহার, ফল- ফলাদি, পান-সুপারি, ধান- দূর্বা, বাঁশের করুল, তালের পাখা, করমচা দিয়ে শাশুড়ি মায়েরা উদযাপন করেন জামাইষষ্ঠী।
জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয়
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় রীতি বা প্রথা ছিল যে যতনদিন না কন্যার কোনও সন্তান হচ্ছে, ততদিন বাপের বাড়ি থেকে কেউ অর্থাত বাবা-মা কন্যার শ্বশুড়িবাড়িতে পা দেবেন না। এদিকে, আগেকার দিনে অল্পবয়সে গর্ভবতী হয়ে যাওয়াতে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিত, অপুষ্টির কারণে সন্তানধারণে সমস্যা ও সন্তানের মৃত্যুর ফলে বাড়ির মেয়ের আর বাড়িতে আসা হত না। এদিকে মেয়ের চিন্তাতে ঘুম উড়ে যেত বাবা-মায়ের। দীর্ঘদিনের অপেক্ষাতে মন বসত না মেয়ের বাবা-মায়ের। তাই মেয়ের মুখ দেখতে জামাই আদরের পরিকল্পনা করা হলে জ্যৈষ্ঠামাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে জামাইষষ্ঠী হিসেবে পালন করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারগুলির ভোল বদলেছে। কন্যার মুখ দেখার জন্য এই নিয়ম পালিত হলেও. বর্তমান দিনে সংস্কারের মূল্য বিশেষ গুরুত্ব পায় না। তবে মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করে বিশাল আয়োজন করে পালন করা হয় এই ষষ্ঠী।