‘যদা যদা হি . সম্ভবামি যুগে যুগে’ – গীতায় কৃষ্ণের এই বাণী অত্যন্ত পরিচিত। পৃথিবীকে ভারমুক্ত করার জন্য এর আগেও তিনি একাধিকবার এসেছিলেন। দুষ্টের বিনাশ করতে এবং জগত সংসারে শান্তি ছড়িয়ে দিতে বিষ্ণুর অবতার রূপে মর্ত্যে আবির্ভূত হন। ‘শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা’ ও মহাভারতের কাহিনি অনুসারে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বহুবার দুঃস্থ ও দুর্গতদের রক্ষা করেছিলেন। জানা যায়, বাল্য বয়স থেকেই বিভিন্ন রাক্ষসদের বধ করেছিলেন তিনি। এবং সেই রাক্ষসগুলি এক একটি বিষয়ের প্রতীক হিসেবে গন্য করা হয়।
• পুতনা- একেবারে শৈশবে রাক্ষসী পুতনাকে বধ করেন কৃষ্ণ। কংস পুতনাকে প্রেরণ করেছিলেন শিশু কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য। পুতনা মূলত ছদ্ম গুরুর প্রতীক।
• শকটাসুর- শকটার ছদ্মবেশে থাকা এক দানবকে কৃষ্ণ বাল্যকালে বধ করেন। এই সংহার অহংকার, আলস্য ইত্যাদি দোষকে ধ্বংস করার কথা বলে।
• তৃণাবর্ত- বাতাসের ঘুর্ণির রূপধারী দানব। পার্থিব অহংকারের প্রতীক।
• দুই অর্জুন গাছের ছদ্মবেশে থাকা নলকুবের ও মণিগ্রীব- ঔদ্ধত্যের প্রতীক।
• বত্সাসুর- বাছুরের ছদ্মবেশে থাকা দানব। লোভ ও নষ্টামীর প্রতীক।
• বকাসুর- ধূর্ততা ও প্রতারণার প্রতীক।
• ধেনুকাসুর- গাধার বেশে থাকা আধ্যাত্মিক অজ্ঞতা।
• নরকাসুর- কদর্য প্রবৃত্তির প্রতীক।
আজ শ্রীকৃষ্ণের অঘাসুর বধের কাহিনি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল এখানে…
অঘাসুর বধের কাহিনি
পুরাণ অনুযায়ী, একদিন শ্রীকৃষ্ণ বনে প্রাতঃকালীন ভোজন সম্পাদন করবার ইচ্ছায় খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে, মধুর স্বরে তাঁর বাঁশি বাজিয়ে গোপসখাদের ঘুম ভাঙান এবং গোবৎসদের সামনে নিয়ে বৃন্দাবনের বনের দিকে যাত্রা করেন। এইভাবে কৃষ্ণ তাঁর হাজার হাজার বন্ধুদের একত্রিত করে বনভোজনে যান। তাঁদের সকলেরই হাতে ছিল লাঠি, বাঁশি, শিঙ্গা এবং খাবারের থলি। তাদের প্রত্যেকে হাজার হাজার গোবৎস তত্ত্বাবধান করছিল। বনভোজনের সম্ভাবনায় তাঁরা সকলেই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। গোরু চরাতে চরাতে সবাই নানারকম খেলাধুলা করতে লাগে। সেই সময় কংসের আদেশে অঘাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য বৃন্দাবনে আসেন। অঘাসুর ছিল পুতনা ও বকাসুরের ছোট ভাই। কৃষ্ণকে দেখে এক নরশিশুই মনে করেছিল ওই মহাসুর। সে মনে মনে ভীষণ প্রতিশোধস্পৃহায় আগুনের মতো জ্বলতে থাকে। কৃষ্ণকে দেখে অঘাসুর ভাবে, এই ছেলেই তাঁর বোন ও ভাইকে হত্যা করে। যেভাবেই হোক কৃষ্ণকে সে বধ করবেই।
অঘাসুর কৃষ্ণকে বধ করার জন্য জঙ্গলের মধ্যে নিজেকে বিশাল অজগর সাপে পরিণত করে পর্বতের গুহাসদৃশ মুখ প্রসারিত করে কৃষ্ণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সর্পরূপী অঘাসুরকে দেখে কৃষ্ণের গোপবালকরা তো ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। আবার তাদের মধ্যে একাংশের দাবি ছিল, ওই অজগর সাপের মতো দেখতে একটি প্রাকৃতিক গুহা। সেই গুহার ভিতরে যাওয়ার কৌতূহল প্রকাশ করে তাঁরা। সকলেই জানে, তাঁদের রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণ তো রয়েছেই। বিপদ এলে সেই তাঁদের প্রাণে বাঁচিয়ে তুলবে। সেই কথামতো গোপবালকরা ওই অজগর সাপ সদৃশ গুহার ভিতরে প্রবেশ করে। কৃষ্ণের জন্য অপেক্ষা করছিল অঘাসুর। তাই তাঁদের তখনই গিলে ফেলল না।
এদিকে বালক কৃষ্ণ সব বুঝতে পেরে সঙ্গীদের রক্ষা করার জন্য অঘাসুরের মুখগহ্বরে প্রবেশ করেন। আর তারপরই অজগর সাপটি তার মুখ বন্ধ করে সব পথ বন্ধ করে দিল। কিন্তু সেটাই কাল হল। কৃষ্ণ তার দেহ প্রসারিত করে অজগরের মুখের সব পথ রুদ্ধ করে দেন। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে অঘাসুরের চোখদুটি বাইকে বেরিয়ে আসে। সেখানেই মৃত্যুবরণ করে।
আরও পড়ুন: Janmashtami 2021 Special: শ্রীকৃষ্ণ নিয়ে ১০টি অজানা কথা, যা আপনার অবশ্যই জানা উচিত