Kali Puja 2022: খালি হাতে ফেরেন না কেউই, কালীপুজোয় বাংলার ৭ জাগ্রত কালীমন্দিরের মাহাত্ম্য জানুন

Kali temples of Bengal: আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উত্‍সবের মধ্যে দিয়ে এই তিথিতে সারারাত কালীর আরাধনায় মেতে থাকেন বাঙালিরা। গোটা পশ্চিমবঙ্গে নানা রূপে দেবী কালীর মন্দির রয়েছে।

Kali Puja 2022: খালি হাতে ফেরেন না কেউই, কালীপুজোয় বাংলার ৭ জাগ্রত কালীমন্দিরের মাহাত্ম্য জানুন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 24, 2022 | 9:15 AM

দুর্গার অন্যরূপ হলেও কালীরও (Goddess Kali) রয়েছে নানা রূপ। সেসবই বিভিন্ন পুরাণে উল্লেখ করা রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার বুকে কালী পূজিত (Kali Puja in Bengal) হয়ে আসছে। বেশিরভাগ মানুষই শাক্ত মতে কালীপুজো (Kali Puja 2022) করে থাকেন। সনাতন ধর্মেও কালী বা কালিকা হলেন শক্তির দেবী। কালীপুজো বা শ্যামাপুজোকে কেন্দ্র করে কার্তিক মাসের অমাবস্য়া তিথিতে অনুষ্ঠিত দেবী কালীর আরাধনা করা হয়। বাংলায় গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপুজো হয়ে থাকলেও এই দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। এদিন দীপান্বিতা কালীপুজো বিশেষ জনপ্রিয়। আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উত্‍সবের মধ্যে দিয়ে এই তিথিতে সারারাত কালীর আরাধনায় মেতে থাকেন বাঙালিরা। গোটা পশ্চিমবঙ্গে নানা রূপে দেবী কালীর মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে এমন কতকগুলি কালী মন্দির রয়েছে যেগুলি খুবই জাগ্রত।

বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যেই দেবী কালীর পূজা করা হয়। দেবী কালীর অসংখ্য নামের মধ্যে দক্ষিণ, সিদ্ধ, গুন্য, ভদ্র, শ্মশান, রক্ষা ও মহাকালী। তন্ত্র অনুসারে, কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত দশজন প্রধান তান্ত্রিক দেবীর প্রথম। দশমহাবিদ্যার ইনি প্রথমা মহাবিদ্যা। শাক্ত মতে, কালী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ। পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে রয়েছে বিশেষ কিছু সতীপীঠ ও জাগ্রত কালী মন্দির। লোকবিশ্বাস সেই সব মন্দিরে দেবীর কাছে যা আশীর্বাদ চাওয়া হয়, কেউ কখনও খালি হাতে ফেরত আসেন না। সকলের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন তিনি। শত শত বছর ধরে এই সব মন্দিরের মাহাত্ম্য লোমুখে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলায় ওই জাগ্রত কালীমন্দিরের নাম ও মাহাত্ম্যের কথা জানুন এখানে…

কালীঘাট মন্দির, কলকাতা: কথিত আছে, দেবী সতীর ডান পায়ের চারটি আঙুল এই স্থানে পড়েছিল। হুগলী নদীর তীরে প্রায় দুই শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরের কালী অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করা হয়। জানা যায়, এই নদীর তীরেই এক ব্রাহ্মণ সাধনা করার সময় তিনি নদীর কাছে ওই স্থানে অলৌকিক আলো দেখতে পান। সেখানে গেলে দেখতে পান আঙুলির একটি মূর্তি পড়ে রয়েছে। সেটি তুলে নিয়ে এসে তিনি পুজো শুরু করেন। মূল মন্দিরের ৬টি খণ্ড। নাটমন্দির,ষষ্ঠী তলা, হাড়কাঠতলা,রাধাকৃষ্ণ মন্দির,চোর বাংলা, কুন্ড পুকুর। বর্তমানে যে মূর্তিটি পূজা করা হয় সেটি কষ্টি পাথরের তৈরি। এছাড়াও সোনা এবং রুপার অলংকার ধাতু নিয়ে এই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। দেবীর খড়গটি ২কেজি সোনা দিয়ে তৈরি। আগে নিয়মিত ছাগবলি দেওয়া হলেও বর্তমানে বিশেষ বিশেষ দিন বলি দেওয়া হয়।

কীর্তিশ্বরী মন্দির, মুর্শিদাবাদ: ৫১ পীঠের অন্যতম মন্দিরগুলির মধ্যে একটি হল এই প্রসিদ্ধ মন্দিরটি। এটি জেলার অন্যতম প্রাচীন একচি কালী মন্দির। প্রাচীন মন্দিরটিতে মুক্তেশ্বরী মন্দিরও বলা হয়। কথিত আছে,দেবী সতীর মুকুট এই স্থানে পড়েছিল। কিন্তু এই মন্দিরে দেবীর কোনও মূর্তি বাবিগ্রহের পুজো করা হয় না। একটি কালো পাথরকেই বিগ্রহ রূপে পুজো করা হয়। এই মন্দিরের পুরাতন কাঠামো নষ্ট হয়ে গেলেও নতুন আঙ্গিকে এই মন্দিরে ফের গড়ে তোলা হয় উনিশ শতকে। জমিদার দর্পনারায়নের তত্ত্বাবধানে তৈরি হওয়া মন্দিরটি সারা বাংলাজুড়ে প্রসিদ্ধ। ভক্তরা মনে করেন, এখানে দেবীর কাছে ভক্তিভরে পুজো দিলে তাদের মনস্কামনা পূরণ হয়। এই মাহাত্ম্যের জোরেই মন্দিরের খ্যাতি রয়েছে চারিদিকে।

কঙ্কালীতলা মন্দির, বোলপুর: ৫১ পীঠের অন্যতম শেষ পীঠ হিসেবে পরিচিত এই মন্দিরটি বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের কাছেই অবস্থিত। কথিত আছে, দেবী সতীর কঙ্কাল বা কোমড়ের কিছু অংশ পডেছিল। সেই কোমরকে ভগবান শিব এক কুন্ডের মধ্যে গুপ্ত অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন। এই কারণেই মন্দিরের কুণ্ডটি অত্যন্ত পবিত্র কুণ্ড বলে ধরা হয়ে থাকে। এছাড়াও মনে করা হয়, এই কুন্ডলীর সঙ্গে মণিকর্ণিকা ঘাটের গুপ্ত সংযোগ রয়েছে। বছরের কোন সময়ই এই কুন্ডের জল শুকিয়েও যায় না এবং বর্ষাকালেও উপচে উপরেও উঠে আসে না। অত্যন্ত জাগ্রত এই মন্দিরটিতে দেবীর কোনও বিগ্রহ বা মূর্তির পুজো করা হয় না। ভক্তদের মতে, ভক্তিভরে সারাবছর ধরে প্রতিটি অমাবস্যায় এই মন্দিরে পুজো করা হয়। উপস্থিত থাকেন হাজার হাজার ভক্তরা। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে বাৎসরিক পূজার সময় কালীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়ে থাকে।

কনকদুর্গা মন্দির, ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলমহলের চিল্কিগড়ে অবস্থিত এই মন্দিরটি শাক্ত বাঙালির কাছে অত্যন্ত জাগ্রত একটি মন্দির। জঙ্গলেঘেরা গা-ছমছমে এক জায়গায় অবস্থিত এই মন্দিরটি অত্যন্ত জাগ্রত। লোকেদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে এসে মনষ্কামনা পূরণ হয়। ই মন্দিরের আরাধ্য দেবী কনক দুর্গা। কালিকা পুরাণ মতে এবং তন্ত্র মতে এই দেবীর নিত্য পূজা হয়ে থাকে হয়ে থাকে হয়ে থাকে এবং নিত্য পূজাতেও ডিম ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে। প্রাচীন মন্দিরটি একটি বিষ্ণু মন্দির ছিল বলেই অনুমান করা হয়। এখানে দেবী দুর্গার মহাভোগে হাঁসের ডিমও দেওয়া হয়। কথিত আছে এখানে ১০৮টি শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন চিল্কিগড় এর রাজারা।

সর্বমঙ্গলা মন্দির, গড়বেতা: কথিত আছে, রাজা বিক্রমাদিত্য শবদেহের উপর বসে দেবীর আরাধনা করতেন। জনমতে শোনা যায় এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। ভারতবর্ষের মধ্যে এটিই একমাত্র উত্তরমুখী মন্দির। এমনও শোনা যায়, এক রাতেই সাতটি পুকুর খনন করিয়ে তার মধ্যেই মন্দিরটি নির্মিত হয়। দেবী সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি অষ্টধাতু নির্মিত। দেবী সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি অষ্টধাতু নির্মিত।

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির, কলকাতা: কলকাতা শহরের বিখ্যাত কালীমন্দির হল দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির।শুধু কলকাতা নয়, সারা বিশ্বের কাছেই এই মন্দিরের মাহাত্ম্য রয়েছে। কালীভক্তদের অন্যতম জনপ্রিয় তীর্থস্থান এটি। ১৮৫৫সালে রাণী রাসমণি এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন। স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ এখানে মায়ের পুজো করতেন। ভক্তের অগাধ ভক্তি দেখে কালী তাঁকে দেখাও দিয়েছিলেন। এই মন্দিরে দেবী কালীকে ভবতারিণী রূপে পূজা করা হয়। কথিত আছে রাণী রাসমণি মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মূল মন্দিরটি একটি নবরত্ন মন্দির। মূল মন্দির ছাড়াও এই মন্দির প্রাঙ্গনে রয়েছে দ্বাদশ শিব মন্দির। প্রত্যেকটি আটচালা শিবমন্দির।