Sidoor Khela: দশমীতে কেন সিঁদুর খেলেন সধবারা? কোথা থেকে এল এই প্রথা?
Durga Puja Rituals: দেবী দুর্গা তাঁর বাপের বাড়ি থেকে কৈলাসে ফিরবেন। এই বিদায়ের আগে রয়েছে এক বিশেষ রীতি। মায়ের বরণ শেষে মাতবেন সিঁদুর খেলায়। কিন্তু কেন দুর্গাপুজোয় বরণ শেষে সিঁদুর খেলা হয়? কোথা থেকে এল এই রীতি?

দুর্গাপুজো মানে আনন্দ, ভক্তি আর মিলনের উৎসব। ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে চারদিন ধরে দেবী দুর্গার আরাধনা। তারপর বিজয়া দশমী। সেই দিন যেদিন আনন্দের সঙ্গে মিশে যায় মনখারাপের অনুভূতি। দেবী দুর্গা তাঁর বাপের বাড়ি থেকে কৈলাসে ফিরবেন। এই বিদায়ের আগে রয়েছে এক বিশেষ রীতি। মায়ের বরণ শেষে মাতবেন সিঁদুর খেলায়। কিন্তু কেন দুর্গাপুজোয় বরণ শেষে সিঁদুর খেলা হয়? কোথা থেকে এল এই রীতি?
সিঁদুর খেলার আচার
দশমীর সকালে দেবী দুর্গার বিসর্জনের আগে বিবাহিতা নারীরা মায়ের চরণে সিঁদুর নিবেদন করেন। আসলে দেবী এখানে মাতৃ রূপে নয় কন্যা রূপে পূজিতা। তাই সিদুর যেন অক্ষয় হয়, সংসারজীবন সর্বদা সুখের হয়, সেই কামনাতেই পরানো হয় সিঁদুরখেলা। এরপর সধবা মহিলারা একে অপরের কপালে, সিঁথিতে ও গালে সিঁদুর পরিয়ে দেন। হাসি-আনন্দে ভরে ওঠে পুরো পরিবেশ। মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়।
কেন সিঁদুর খেলা হয়?
হিন্দু সংস্কৃতিতে সিঁদুর সৌভাগ্য ও দাম্পত্যজীবনের প্রতীক। বিবাহিত নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরে থাকেন স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার কামনায়। তাই দেবীর চরণে সিঁদুর অর্পণ মানে তাঁর কাছে ভক্তরা সংসারের মঙ্গল ও সুখী গৃহস্থজীবনের প্রার্থনা করেন।
পৌরাণিক ব্যাখ্যা
সিঁদুর ব্রহ্মার প্রতীক। ব্রহ্মা জীবনের সমস্ত কষ্ট দূর করে আনন্দে ভরে রাখেন বলেই হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, সিঁথিতে সিঁদুর পরলে কপালে ব্রহ্মা অধিষ্ঠান করেন। এই কারণে দশমীর দিন সিঁদুর খেলার এই প্রচলন বলে মনে করেন অনেকে।
বিদায়ের বেদনা ও আনন্দ
দশমীর মূল সুর হল বিদায়। মা দুর্গা চারদিনের জন্য বাপের বাড়িতে আসেন, এরপর ফিরে যান কৈলাসে। এই বিদায়ের বেদনা কাটাতে নারীরা আনন্দ ও মিলনের মাধ্যমে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা প্রার্থনা করেন—মায়ের আশীর্বাদে পরিবার যেন অটুট থাকে, মিলন যেন চিরস্থায়ী হয়।
সাংসারিক সমৃদ্ধির প্রতীক
সিঁদুর খেলা শুধু রঙিন উৎসব নয়, বরং প্রতীকীও। লাল সিঁদুর হলো শক্তি, সমৃদ্ধি, প্রেম ও প্রাণশক্তির প্রতীক। নারীরা যখন একে অপরকে সিঁদুর পরান, তখন তাঁরা পরস্পরের সুখ, দাম্পত্য মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
সামাজিক মিলন
সিঁদুর খেলার আরেকটি বড় দিক হল নারীদের মধ্যে মিলন ও বন্ধন। এ সময় বয়স বা সামাজিক অবস্থার পার্থক্য থাকে না। সবাই একই রঙে রাঙিয়ে ওঠেন, যা সমাজে সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।
আজও সিঁদুর খেলা বাঙালি সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। যদিও এর আচার মূলত বিবাহিতা নারীদের জন্য প্রথাগত, এখন অনেক জায়গায় অবিবাহিতা, এমনকি পুরুষেরাও আনন্দে যোগ দেন। ফলে এটি আর শুধু ধর্মীয় আচার নয়, হয়ে উঠেছে এক সামাজিক উৎসব।
