আজ পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে সূচনা হল মাতৃপক্ষের। এই সূচনাকালকেই বলা মহালয়া। মহত্বের আশ্রয় থেকেই জন্ম এই শব্দের। দেবী দুর্গা হলেন সেই আশ্রয় বা আলয়। মহাভারতেও এই মহালয়াকে নানান কাহিনি বর্ণিত রয়েছে। অন্যদিকে, সনাতন ধর্মে মনে করা হয় যে এই বিশেষ দিনে প্রায়ত আত্মাদের মর্ত্যে প্রেরণ করা হয়। আর এই প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় সেটাই হল মহালয়া। একই ভাবে পুরাণ, শাস্ত্র ও আভিধানিক ক্ষেত্রেও মহালয়ার নানান সংজ্ঞা পাওয়া যায়।
আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের এই শেষ লগ্নেই পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা হয়। কিন্তু এই মহালয়া শুভ না অশুভ, এই নিয়ে সমাজে একাধিক কথ্য প্রচলিত রয়েছে। পৌরাণিক বা শাস্ত্রে এই শুভ না অশুভর ব্যাখ্যা না থাকলেও পুরাণকে এখানে বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়। যদিও শাস্ত্রেও পূর্বপুরুষদের নিবেদিতর বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে, তাই এই দিনটি অশুভ হিসাবে বিবেচিত হয় না। আবার যদি মহালয়ার গুরুত্ব মহাভারতের দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয়, তাহলে আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপুরুষকে জলদান করে স্বর্গে ফিরে যাওয়ার কাহিনি উল্লেখ করা একান্ত জরুরি।
পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর পরাজয় নিশ্চিত ছিল কোনও নারীশক্তির কাছে। যখন অসুরদের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন, সেই সময় ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর এই ত্রিশক্তি একত্রে নারীশক্তির সৃষ্টির দেন। আর তিনিই হলেন দেবী দুর্গা। দেবী দুর্গা এই দিনেই মহিষাসুরকে বধ করেন। সেই জন্য বিশ্বাস করা হয় যে, অশুভ শক্তির বিনাশ করে যেহেতু শুভশক্তির সূচনা হয় তাই এই দিনটি শুভ।
মহাভারতের পাশপাশি কৃত্তিবাসের রামায়ণেও মহালয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। শ্রী রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে অকালে দেবীকে এই সন্ধিক্ষণে আরাধনা করেছিলেন আর এই কারণে একে অকাল বোধনও বলা হয়। একাধারে এই দিন দেবীর চোখ আঁকা হয়। সুতরাং পুরাণ, শাস্ত্র, ইতিহাসে যাই লেখা থাকুক না কেন, দেবীর আগমন মানুষের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দ ও সুখ, সেদিক থেকে বিবেচনা করলেও এই দিনটি আসলে শুভ।
আরও পড়ুন: নবরাত্রির নয়দিনের রঙের তাৎপর্য সম্পর্কে জানুন!
আরও পড়ুন: সারা বছর স্বাভাবিক থাকলেও নবরাত্রির দিনগুলিতে এই মন্দিরের দেবীমূর্তির আকার বৃদ্ধি পায়!
আরও পড়ুন: শারদীয়া থেকে কারওয়া চৌথ, অক্টোবরে কোন কোন সময়ে কী কী পুজো-পার্বণ রয়েছে, জেনে নিন