মহালয়া মানেই পিতৃপক্ষের অবসান। দেবীপক্ষের শুভ সূচনার ঘোষণা। ভোর চারটেয় উঠে রেডিওয় মহালয়া শোনা। এ যেন বাঙালির চিরন্তন নস্টালজিয়া। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করার ভিড়। উপচে পড়ছে মানুষ। এই ছবি আমাদের সকলের চেনা। কিন্তু কেন মহালয়াতে তর্পণ করা হয়? এর পিছনের যুক্তিটাই বা কী? তর্পণ মানে পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে জলদান করা। কিন্তু কোথা থেকে শুরু হল এই প্রথার?
মহালয়া আর তর্পণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। তর্পণের উল্লেখ রয়েছে ব্যসদেবের মহাভারতেও। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের বাণে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় কর্ণের। বীর যোদ্ধা দ্বাতা কর্ণ স্বর্গে গমন করেন। সেখান থেকে খাদ্য স্বরূপ সোনা, হিরে, মণিমানিক্য দেওয়া হয়। তখন কর্ণ কিছুটা অবাক হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে জিজ্ঞেস করেন এই সব তিনি খাবেন কী ভাবে? খাদ্য রূপে মণিমানিক্য কেন দেওয়া হল?
কর্ণের প্রশ্নের উত্তরে দেবরাজ জানান, জীবিত অবস্থায় দ্বাতা হিসাবে নামডাক ছিল কর্ণের। অনেক দান ধ্যান করেছেন তিনি। এমনকি নিজের জন্মগত কবজ-কুণ্ডল দান করে দিতে পিছপা হননি তিনি। তবে এত সব দান করলেও কোনও দিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জল দেননি। তাই মৃত্যুর পরে স্বর্গে জলপানে অক্ষম কর্ণ। এক পক্ষকালে মর্ত্যে ফিরে গিয়ে কর্ণ পিতৃপুরুষকে জল এবং অন্ন দান করে প্রায়শ্চিত্ত করেন। এই একপক্ষ কালকে পিতৃপক্ষ বলা হয়। আর তার শেষে হয় তর্পণ।
আবার রামায়ণেও এই তর্পণের উল্লেখ পাওয়া যায়। যে কোনও শুভ কাজে যাওয়া আগে পিতৃপুরুষকে জলদানের উল্লেখ পাওয়া যায়। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার আগেও পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করেছিলেন শ্রীরাম। সেই থেকেই এই প্রথার শুরু।
সূর্য কন্যা রাশিতে প্রবেশ করলে শুরু হয় পিতৃপক্ষের। শাস্ত্র মতে এই সময় পিতৃলোক ছেড়ে উত্তরপুরুষদের বাড়িতে অবস্থান করে পূর্বপুরুষরা। এক পক্ষকালের শেষে বৃশ্চিক রাশিতে সূর্য প্রবেশ করলে পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান তাঁরা।