ইস্টবেঙ্গলে মেসি! নেটপাড়ায় হুলস্থুল কাণ্ড

Leonel Messi : মেসি (LM10)-বার্সা (FC Barcelona) বিচ্ছেদ। মূল কারণ, লা লিগায় ফুটবল রেজিস্ট্রেশনের অর্থনৈতিক বিধি নিষেধ। চুক্তি করতে এসেও আটকে গেল দুই পক্ষই।

ইস্টবেঙ্গলে মেসি! নেটপাড়ায় হুলস্থুল কাণ্ড
— ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে মেসি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 15, 2021 | 2:53 PM

কলকাতা: দীর্ঘ ১৭ বছরের সম্পর্কের ইতি। স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনায় আর খেলবেন না মেসি! বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দিয়ে মেসির সঙ্গে ‘ব্রেক আপ’-এর কথা জানায় বার্সা। বিচ্ছেদের কারণ, লা লিগায় ফুটবলার রেজিস্ট্রেশনে অর্থনৈতিক বিধি নিষেধ।

ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “এফসি বার্সোলনা এবং লিওনেল মেসি (Lionel Messi), দুই পক্ষই নতুন চুক্তি সাক্ষরের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা সত্ত্বেও লা লিগায় ফুটবলার রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত অর্থনৈতিক বিধি নিষেধের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। যার ফলে মেসির আর বার্সেলোনায় থাকা সম্ভব হচ্ছে না। মেসি (Messi) এবং এফসি বার্সেলোনা (FC Barcelona), দুই পক্ষই এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে।” ওই একই বিবৃতিতে লিওনেল মেসির ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনের প্রতি আগাম শুভেচ্ছাও ব্যক্ত করেছে বার্সা।

রাত ১১টা ২১ মিনিটে এফসি বার্সেলোনা টুইটে মেসির ক্লাব ছাড়ার কথা ঘোষণা করে। খবর প্রকাশ হতে না হতেই ফুটবল দুনিয়ায় শুরু হয় শোরগোল। টুইট, রিটুইট, পোস্টের পর পোস্টে ছেয়ে যায় ফেসবুক ওয়াল। যার মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় মিমও। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে লাল হলুদ জার্সিতে মেসির ছবি।

ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) জার্সিতে এলএমটেনের (LM10) ছবি, উপরে ইংরাজি হরফে বড় বড় করে লেখা C A P T A I N। তার সঙ্গে বার্সা তারকার উদ্দেশে লেখা, ‘ওয়েলকাম, লিও মেসি’। এখানেই শেষ নয়। মেসি-বার্সা ‘ব্রেক আপ’-এ জুড়েছে রাজনৈতিক রঙও! একদল মিম বানিয়ে রটিয়ে দিয়েছে, দিলীপ ঘোষের হাত থেকে গেরুয়া পতাকা তুলে নিচ্ছেন ফুটবল যুবরাজ!

Messi East Bengal

ছবি: ফেসবুক

প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে নিজেদের আইএসএল ভবিষ্যৎ নিয়ে বিরাট অনিশ্চয়তার মধ্যে লাল হলুদ। ইস্টবেঙ্গল, শ্রী সিমেন্ট — ক্লাব ও ইনভেস্টরের মধ্যে চলছে চুক্তি বিতর্ক। অতীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় এক প্রকার শেষ মুহূর্তেই আইএসএল-এর টিকিট পাকা করেছিল শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব ইস্টবেঙ্গল। এবারও মুখ্যমন্ত্রী ক্লাবের পাশেই। কিন্তু এতে সুনিশ্চিত কোনও সুরাহা হয়নি। এরই মধ্যে মেসিকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ক্যাপ্টেন চেয়ে ‘রসিকতা’, স্বাভাবিক ভাবেই কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটের মতোই বিঁধছে।

Messi BJP

ছবি: ফেসবুক

লাল হলুদ কর্তার অনুরোধ:

ইস্টবেঙ্গল মহাসচিব ডঃ শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত এমন মনোভাবের সমালোচনা করে বলেন, “বলতে খুব খারাপ লাগছে। অনেকেই খেলার মাঠে নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আসে। নেতিবাচক খবর জানতে ও তা ছড়াতে পছন্দ করে। এর ফলে আমাদের মতো কর্তারা কোনও পদক্ষেপ করতে গেলে পাঁচবার পিছিয়ে আসি। তার মধ্যেও আমরা এগিয়ে যাই। এগুলো ঠিক নয়। স্বাধীনভাবে ভাবার ক্ষেত্রে সমস্যা করে। এই দেখুন হকিতে। আজ হকিতে এই সাফল্যের পেছনে একজনের ভূমিকা প্রশংসনীয়, তিনি নবীন পট্টনায়ক। স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করে আজ হকিকে এই জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।”

তাঁর মতে ইতিবাচক মানসিকতা অত্যন্ত জরুরি। শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তের অনুরোধ, “সবকিছুতে এত নেতিবাচক মানসিকতা কেন? প্লিজ, আপনারা ইতিবাচকভাবে ভাবুন।”

ইস্টবেঙ্গলে আর্জেন্টাইন:

উল্লেখ্য, অতীতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেই খেলে গিয়েছেন প্রাক্তন আর্জেন্টাইন তারকা জুলিয়ান ক্যামিনো। ১৯৮৮ সালে ডুরান্ড কাপে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে রাইট ব্যাকে নজর কেড়েছিলেন দিয়েগো মারাদোনার এই সতীর্থ। ছিয়াশির বিশ্বকাপ দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের কোচিং স্কোয়াডেও ছিলেন ক্যামিনো। কাজ করেছেন আলেজান্দ্রো সাবেল্লার সহকারি হিসেবেও।

শুধুই কি ক্যামিনো? একেবারেই না। আইএসএল (ISL) যুগে ভারতে এসে পেশাদার ফুটবল খেলে গিয়েছেন ইতালির বিশ্বকাপার দেল পিয়েরো, ব্রাজিলিয়ান তারকা রবার্তো কার্লোস (Roberto Carlos) সহ নিকোলাস আনেলকার মতো বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার। তাহলে কি মেসি নিয়েও স্বপ্ন দেখা যায়?

ময়দানি ছবি:

আইএসএল-এ দিল্লি ডায়নামো, মুম্বই সিটি এফসি-র মতো ধনী ক্লাব বিশ্বকাপারদের এনে চমক দিয়েছে। হালফিলে আইলিগ কাঁপিয়ে নাম করে গিয়েছেন হাইতিয়ান স্ট্রাইকার মোহনবাগানের সোনি নর্দে। গতবার ইস্টবেঙ্গলে খেলে নাম নজর কেড়েছেন নাইজেরিয়ার ফরোয়ার্ড ব্রাইট। তিনিই ছিলেন ইস্টবেঙ্গলে সাম্প্রতিক সময়ে সবথেকে দামী ফুটবলার। গত মরসুমেই আইএসএল খেলেছেন মেসির দেশের ফরওয়ার্ড ম্যাক্সিমিলিয়ানো। আর্জেন্টিনার তারকাকে পেতে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র খরচ হয়েছিল ৬ কোটি টাকারও বেশি। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এই ম্যাক্সিমিলিয়ানো এবং টিউনেশিয়ার মহম্মদ লার্বিই এখনও পর্যন্ত সবথেকে দামী ফুটবলার। এই হিসেবে মেসিকে এক মরসুমের জন্য খেলাতে কম করে ব্যয় হবে ১২ হাজার কোটি (মেসির সঙ্গে বার্সার চার বছরের চুক্তি ছিল প্রায় ৫০ হাজার কোটি)। যেখানে ইস্টবেঙ্গল সর্বোচ্চ ৫০ কোটি দিয়ে দল গড়েছে, সেখানে অন্তত দুশো গুণ বেশি টাকায় এলএমটেনকে আনা, স্বাভাবিকভাবেই অলীক কল্পনাই বটে।

তাহলে কোন ক্লাবে মেসি?

কোপা আমেরিকার সময়ই খবর প্রকাশিত হয়েছিল, অর্ধেক টাকাতে বার্সেলোনায় থেকে যাচ্ছেন মেসি। মাসখানেকের মধ্যেই সেই জল্পনায় জল! বার্সায় থাকছেন না। তাহলে এবার কোন ক্লাবে মেসির দ্বিতীয় ইনিংস? জল্পনায় ম্যাঞ্চেস্টার সিটি এবং পিএসজি।

ম্যান সিটিতে এখন ম্যানেজার পেপ। অতীতে এই জুটি বার্সেলোনায় সোনা ফলিয়েছে। পেপ গুয়ার্দিওয়ালা ম্যানেজার থাকাকালীনই দু, দু’বার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতে বার্সা। মেসির ঝুলিতে আসে ব্যালন ডি’অরের হ্যাটট্রিক। সুতরাং, মেসি ম্যান সিটিতে আসতে চাইলে কিংপিন হতে পারেন গুয়ার্দিওলাই।

অন্যদিকে নেইমারের বন্ধুতাকে কাজে লাগিয়ে মেসিকে তুলে নিতে পারে ফরাসী ক্লাব পিএসজিও। অতীতে এই ক্লাবেই খেলেছেন মেসির প্রিয় সতীর্থ রোনাল্ডিনহোও।