হাসিটুকুই ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। উপচে পড়া কান্না মোছা হাসি? যন্ত্রণা ভোলার? নিজেকে ফিরে পাওয়ার? জবাব দেওয়ার? নাকি এই হাসি স্বস্তির? চার হয়েছে কিনা, জানা ছিল না। কিছুটা বিভ্রান্ত ছিলেন। আম্পায়ারের চারের সিদ্ধান্তের পর হেলমেট খুলে হাসলেন। শিশুর মতো। ১৬ মাস পর টেস্টে সেঞ্চুরির কাহিনিতে ফিরলেন বিরাট কোহলি। এই ষোলোটা মাস কত সমালোচনা শুনেছেন তিনি? অস্ফুটে বলে গেলেন, ‘সে সব জানে অনুষ্কা।’
পিঠোপিঠি উড়ে বেড়াচ্ছে দুটো প্রশ্ন। প্রথমটা, বিরাট কোহলির কি অস্ট্রেলিয়া সফরের পর টেস্ট থেকে অবসর নিয়ে নেওয়া উচিত? আর দ্বিতীয়টা, আহত বাঘকে খোঁচালে কতটা আগ্রাসী হয়? প্রথম প্রশ্নটা যমুনার জলে ভাসিয়ে দিতে হবে। আপাতত যত আলোচনা দ্বিতীয় প্রশ্নটা নিয়েই। রান নেই। শেয়ার বাজারে ধ্বসের মতো পড়ছে ব্যাটিং গড়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সামান্য জ্বলে উঠেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভরাডুবি। এখান থেকে কি ফিরে আসা যায়? যায়, যদি তাঁর নাম বিরাট কোহলি হয়। রিকি পন্টিং খোঁচা দিয়েছেন সফর শুরুর আগেই। তিনিও কি বিরাটকে জাগাতে চেয়েছিলেন? ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরটা শুরু করেছিলেন পারথ দিয়ে। ১২৩ রানের ইনিংস ছিল নামের পাশে। ৬ বছর পর সেই পারথকেই বাছলেন কিং কোহলি।
ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টতে আছে। কিন্তু টেস্টে নেই। বিরাট যেন ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিলেন লাল বলের সাম্রাজ্যে। ২০২৩ সালের ২০ জুলাই, পোর্ট অফ স্পেন এসেছিল শেষ সেঞ্চুরি। ১২১-এর পর হারিয়েই গিয়েছিলেন। যদি আরও একটু পিছনে হাঁটা যায়, সেঞ্চুরির আলো খুঁজে পাওয়া যাবে না সে ভাবে। ২০১৯ থেকে ৫ বছরে মাত্র ৩টে সেঞ্চুরি। সেই বিরাট জাগলেন সেঞ্চুরির মশল জ্বালিয়ে। ৫ বছরে চতুর্থ সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ায় মাঠে সাত নম্বর। ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে এতদিন সচিন তেন্ডুলকরই ছিলেন ভারতীয় হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক। ওই হাফডজন সেঞ্চুরি টপকে অস্ট্রেলিয়ায় সাত নম্বর।
সচিনের পর কভার ড্রাইভের পেটেন্ট রয়েছে তাঁর। স্ট্রেট ড্রাইভ, স্কোয়্যার কাটেরও। পারথ যেন নতুন করে আবিষ্কার করল ৩৭ বছরের এক ‘তরুণ’কে! সুইপ তাঁর দুর্বলতম শট। আউট হয়ে যান বারবার। অজি অফস্পিনার লিয়ঁকে বাছলেন সুইপের জন্য। আজ পর্যন্ত বিরাটকে কি রিভার্স সুইপ মারতে দেখা গিয়েছে? মনে পড়বে না। রিভার্স সুইপেরও ঝলক দেখিয়ে গেলেন। কাট, পুল, হুক, স্টেপআউট— পারথের গ্যালারি যেন ব্যাটসম্যানের শটলিস্টে টিক দিয়ে গেল একের পর এক। বিরাট সেঞ্চুরি করতেই ইনিংস ডিক্লেয়ার করল ভারত।
রান মেশিনেও মর্চে ধরে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ভক্তরা। সেই তাঁদের যেন বিরাট বলে গেলেন, ‘পর্দার পিছনে কী চলছে, সেটা অনুষ্কা একমাত্র জানত। আমার মাথায় কী চলছিল, সেটাও। তবে বরাবরের মতো আমি টিমের জন্য খেলতে চাই। টিমের জন্য অবদান রাখায় নজর দিই। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে কোনওদিন ভাবিনি।’
এ সব কথার কথা? নাহ, বিরাট এমনই। ব্যর্থতায় থাকলেও, সাফল্যে থাকলেও।