একটা সময় অবধি মনে হচ্ছিল, সেঞ্চুরি শুধুই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু প্লট চেঞ্জ হয় দ্রুতই। ক্যামেরা বারবার ধরছিল বেশ কয়েকটি মুখ। ভারতের ডাগআউট, বাইশগজ এবং গ্যালারিতে একটা ক্লোজআপ মুখ। তার আশপাশে নানা জনের ভিড়। সেই ক্লোজ আপ মুখটা এক টেনশনে থাকা বাবার। মুতিয়ালা রেড্ডি। মেলবোর্নের নায়ক নীতীশ কুমার রেড্ডির বাবা। কখনও জোড়হাতে, কখনও মাথায় হাত। নানা অভিব্যক্তি। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের জন্য সব যেন থমকে গেল। ভারতীয় দল আর একটা উইকেট হারালে!
মেলবোর্ন টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই চাপে ছিল ভারত। দুর্দান্ত একটা জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন নীতীশ কুমার রেড্ডি ও ওয়াশিংটন সুন্দর। ফলো-অন অনেক আগেই পেরিয়ে গিয়েছিল ভারত। লক্ষ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যবধান যত কমানো যায়। তেমনই ব্যক্তিগত মাইলফলকের সামনে ছিলেন প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা নীতীশ। নাথান লিয়ঁর বোলিংয়ে ওয়াশিংটন সুন্দর আউট হতেই ফের চাপ বাড়ে। সে সময় ৯৭ রানে ক্রিজে নীতীশ। প্রশ্ন, সঙ্গীর অভাব হবে না তো নীতীশের!
ক্রিজে যোগ দেন জসপ্রীত বুমরা। দুর্দান্ত একটি কভার ড্রাইভ মারলেও সিঙ্গল নেননি নীতীশ। পরপর তিনটে সিঙ্গল মানা করেন বুমরাকে। স্ট্রাইক রাখতে পারেননি। পরের ওভারে তৃতীয় ডেলিভারিতে বুমরা আউট। প্রতিটা ক্রিকেট প্রেমীর মধ্যেই টেনশন বাড়ছিল। সবচেয়ে চাপে ছিলেন কালো জ্যাকেট পরা সেই ব্যক্তিই। মহম্মদ সিরাজ সেই ওভারের বাকি তিনটি ডেলিভারি সামলে দিতেই গ্যালারিতে ব্যাপক উচ্ছ্বাস। ধারাভাষ্যকাররাও বলতে শুরু করেন, ভারত যেন বিশ্বকাপ জিতেছে, এমনই অনুভূতি গ্যালারিতে।
পরের ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে কয়েক মুহূর্ত নিজেকে শান্ত রাখেন। তারপর মিড অন ফিল্ডারের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি। স্পেশাল সেলিব্রেশন। অন্যদিকে, উচ্ছ্বাসে চোখে জল তাঁর বাবার। সম্প্রচারকারী চ্যানেলের তরফে প্রাক্তন অজি ক্রিকেটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট সাক্ষাৎকার নেন নীতীশের বাবার। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আর এক আত্মীয়। নীতীশের বাবা মুতিয়ালা রেড্ডি বলছেন, ‘আমাদের সকলের কাছে আবেগের মুহূর্ত। স্পেশাল দিন। এই দিনটা জীবনে ভুলতে পারব না। ও ধাপে ধাপে উঠে এসেছে। অনূর্ধ্ব ১৬, ১৭ স্টেট খেলে এই অবধি পৌঁছেছে। প্রচুর চিন্তায় ছিলাম। বুমরা আউট হওয়া এবং সিরাজ আসায় আরও চিন্তা বাড়ে। তবে সকলের ইচ্ছে পূরণ হল।’
শেষ অবধি সিরাজকে নিয়ে অপরাজিতই রয়েছেন নীতীশ কুমার রেড্ডি। নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১০৫। ভারত পিছিয়ে ১১৬ রানে। তবে এখান থেকে অনেক কিছুই হতে পারে। ম্যাচের আরও দু-দিন বাকি। ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজে পেয়েছে টিম। সৌজন্যে NKR-এর দুর্দান্ত ইনিংস।