লন্ডন: বিশ্ব ক্রিকেট এখন দুটো নতুন শব্দ নিয়ে তোলপাড়। কোন দুটো শব্দ জানেন? ‘কেভিন’ আর ‘স্টিভ’। আপাতভাবে দুটো সাধারণ শব্দ বা নাম মনে হলেও এর পেছনেই লুকিয়ে আছে বর্ণবিদ্বেষের আগুন। কেভিন ও স্টিভ নামে এশিয়ান ক্রিকেটারদের ডাকা হত ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্লাব ইয়র্কশায়ারে (Yorkshire)। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ওপেনার অ্যালেক্স হেলসের (Alex Hales) কুকুরের রং ছিল কালো নাম ছিল কেভিন। তাই তিনি এশিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটারদের ডাকতেন কেভিন নামে, সেই রোগ ছড়িয়ে যায় অন্যদের মধ্যে। এদিকে ইংল্যান্ডে (England) স্টিভ নামে ডাকা হয় সেই সব মানুষদের, যারা সাধারণত কষ্টসাধ্য কাজ করেন। যেহেতু এশিয়ার প্রচুর সংখ্যক মানুষ এই কাজে জড়িত তাই, এশিয়ানদের ডাকার আর একটা নাম স্টিভ। চেতেশ্বর পুজারা (Cheteshwar Pujara) যখন ইয়র্কশায়ারে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গেলেন তখন তাকে ডাকা শুরু হয় স্টিভ নামে। তবে গোপনে নয় প্রকাশ্যেই চলত এই নামের বহর। ইয়র্কশায়ারের সোশ্যাল মিডিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়াতেও নাকি পূজারাকে একাধিকবার স্টিভ নামে সম্বোধন করা হয়েছে। ধারাভাষ্যকার জ্যাক ব্রুস চেতেশ্বর নামটা উচ্চারণ করতে পারতেন না, তাই ধারাভাষ্য সময় তাঁকে ডাকতেন স্টিভ বলে। পরে যদিও এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। চেতেশ্বর পূজারাও জানিয়েছিলেন ইয়র্কশায়ারে খেলতে তার খুব একটা ভালো লাগেনি।
গোটা বিষয়টি সামনে এনেছেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার আজিম রফিক (Azeem Rafiq)। কিছুদিন আগেই ইয়র্কশায়ারে বর্ণবিদ্বেষের বোমাটা ফাটিয়ে ছিলেন তিনি। আঙ্গুল উঠেছিল প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনের দিকে। ইয়র্কশায়ারকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন থেকে সাসপেন্ড করে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগে উথালপাতাল ইংল্যান্ড ক্রিকেট। আসরে নামতে হয়েছে সে দেশের সরকারকে।
প্রশ্ন একটাই, যে দেশটা ক্রিকেটের জন্ম দিয়েছে, যারা নিজেদের সব থেকে সভ্য বলে দাবি করে, সেই দেশে এমনটা হয় কিভাবে? খেলার দুনিয়া থেকে বর্ণবিদ্বেষ সরিয়ে ফেলতে আইসিসি, ফিফা, আইওসি, সব সংগঠনই অত্যন্ত কড়া নিয়ম চালু করেছে। কিন্তু তারপরও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না বরং আরও অবনতি হচ্ছে। তাই খুব সহজে বর্ণবিদ্বেষের এই শিকড় উপড়ে ফেলা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। ফুটবল হোক বা ক্রিকেট বর্ণবিদ্বেষের বরাবরই এগিয়ে থাকা নাম ইংল্যান্ডের। ইউরো কাপের ফাইনালে পেনাল্টি মিস করে নিজেদের দলের কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদেরও মুণ্ডুপাত করতে ছাড়েনি ইংরেজরা। সাধারণ দর্শক তো অন্য কথা, পূজারার ক্ষেত্রে দেখা গেল একজন ধারাভাষ্যকার ক্রমাগত বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে গিয়েছেন একজন প্রতিষ্ঠিত টেস্ট ক্রিকেটের উদ্দেশে। উপযুক্ত ব্যবস্থা না হলে এবং করা শাস্তি না দিলে হয়তো এই রোগ থেকে সহজে মুক্ত হবে না খেলার দুনিয়া।
আরও পড়ুন: ICC T20 Rankings: টি-২০ ব়্যাঙ্কিংয়ে আটেই রইলেন বিরাট, একধাপ নামলেন লোকেশ রাহুল