কলম্বো: দু’বছর আগেও মনে হয়নি, আবার ভারতীয় টিমে ফিরবেন তিনি। মনে হয়নি, ক্রিকেটে আবার সেই চেনা ছন্দে দেখা যাবে তাঁকে। বরং ধীরে ধীরে যেন আগুন নিভে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এক অত্যন্ত প্রতিভাবান স্পিনারের উত্থান যেমন দেখা গিয়েছিল, তাঁর পতনেরও সাক্ষী হয়তো থাকতে হল। যাঁরা চ্যাম্পিয়ন হন, তাঁরা কখনও হারিয়ে যান না। বরং ফিরে আসেন প্রবল ভাবে। তাঁদের এই প্রত্যাবর্তন উদযাপন করে সারা দুনিয়া। কুলদীপ যাদবের (Kuldeep Yadav) ক্ষেত্রেও তাই বলতে হবে হয়তো। ২০২১ সালে হারিয়ে যাচ্ছিলেন যিনি, সেই তিনি ভারতের বিশ্বকাপের (World Cup 2023) টিমের ‘অটোমেটিক চয়েস’! কী ভাবে এমন হল? কুলদীপের ফিরে আসার গল্প শোনাচ্ছেন তাঁর কোচ। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
মঙ্গলবার ক্যান্ডিতে বসে বিশ্বকাপের ১৫ জনের টিম ঘোষণা করে দিয়েছেন রোহিত শর্মা। তাতে চমক নেই। এশিয়া কাপের টিম দেখে যা ভাবা হয়েছিল, তাই হয়েছে। শুধু একটাই জিনিস, যুজবেন্দ্র চাহাল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মতো অভিজ্ঞ স্পিনারদের বাদ দিয়ে কুলদীপে আস্থা রাখা হয়েছে। চলতি বছর এখনও ১৩টা ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছেন চায়নাম্যান বোলার। নিয়েছেন ২৩টা উইকেট। হারিয়ে যেতে যেতে ফিরে এলেন কী ভাবে?
কুলদীপের কোচ কপিল পাণ্ডের এক কথায় ব্যাখ্যা, ‘দৃঢ় সংকল্প।’ আরও গভীরে ঢুকে তিনি বলছেন, ‘ওই সময় মন ভেঙে গিয়েছিল ওর। ভারতের হয়ে খেলার কথাই প্রায় ভুলে যেতে বসেছিল। এমনকি, কেকেআরের হয়েও খেলার সুযোগ পাচ্ছিল না। যে কোনও বোলারের ক্ষেত্রেই এটা কঠিন সময়। সে সময় দরকার পড়ে নিজের স্কিল নিয়ে কাজ করা। কুলদীপ হারিয়ে যেতে চায়নি। আমার সঙ্গে রোজ ট্রেনিং করে গিয়েছে। ডেলিভারি স্পিডের মতো বেশ কিছু জিনিস নিয়ে কাজ করেছিলাম। সেটাই ওকে সাহায্য করেছে।’
কঠিন সময়ে কপিল পাণ্ডে যেমন পাশে ছিলেন, তার থেকেও বেশি ছিলেন সুনীল যোশী। ভারতের প্রাক্তন স্পিনার এনসিএতে দিনের পর দিন পড়ে থেকেছেন কুলদীপকে নিয়ে। কী বলছেন তিনি? ‘আমি তখন নির্বাচক কমিটিতে ছিলাম, যখন কুলদীপ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল। ওর মতো প্রতিভাবান বোলার এ ভাবে হারিয়ে যাবে, মেনে নেওয়া যায় না। এনসিএতে যখন ওর সঙ্গে দেখা হল, তখন আমরা একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করি। এ সব ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিষয় নিয়েই কাজ হয়। ওর স্ট্রাইড, আর্ম স্পিড, বলের গতি বাড়ানো, ওর অ্যাকশন এবং মানসিকতায় বদল দরকার ছিল। সেগুলো করেছিলাম আমরা।’
নিজেকে বদলানোর পাশাপাশি আইপিএলে টিম বদলনোরও দরকার ছিল। সেটাই করেছিলেন কুলদীপ। কেকেআর ছেড়ে দিল্লিতে যোগ দেন। কোচ কপিল পাণ্ডের কথায়, ‘কুলদীপ আমাকে বলেছে, দিল্লিতে খেলার সময় কোচ রিকি পন্টিংয়ের সাহায্য পেয়েছে। ও যথেষ্ট ম্যাচ খেলার সুযোগও পেয়েছিল। কোনও প্লেয়ার যদি কোচ আর ক্যাপ্টেনের সাহায্য পায়, তা হলে নিজেকে আবার মেলে ধরতে পারে। যেটা মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে খেলার সময় পেয়েছিল কুলদীপ।’
বিশ্বকাপের টিমে প্রথম পছন্দ হলেও রোহিত শর্মার সেরা অস্ত্র হবেন কুলদীপ, তা মনে করছেন না সুনীল যোশী। তাঁর কথায়, ‘বাঁ হাতিদের বিরুদ্ধে বাইরে বল নিয়ে যেতে পারে। ডান হাতিদের বিরুদ্ধে ভিতরে নিয়ে আসতে পারে। ভারতের জন্য কুলদীপ সেরা অস্ত্র হতে পারে। কারণ, সব টিমেই ৩-৪জন বাঁ হাতি ব্যাটার থাকবে। ও উইকেট শিকারি। মাঝের ওভারগুলোতে ভীষণ কার্যকর হতে পারে।’