যুজবেন্দ্র চাহালকে কী বোলার বলা হয়? সহজ। রিস্ট স্পিনার বা লেগ স্পিনার। কিন্তু কুলদীপ যাদবকে কেন চায়নাম্যান বলা হয়? এই প্রশ্নটা মনে আসাই স্বাভাবিক। শুধু কুলদীপ যাদবই নন, অতীতে এমন অনেক বোলারই এসেছেন। পল অ্যাডামস হোক বা অস্ট্রেলিয়ার ব্র্যাড হজ। তাঁদের চায়নাম্যান বলেই ডাকা হত। কুলদীপ যাদবকেও চায়নাম্যান বোলার ডাকা হয়। যদিও এখন এই চল অনেকটা কমেছে। এর মধ্যে বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের আঁচও রয়েছে। সে কারণেই সহজ যেটা বাঁ হাতি রিস্ট স্পিনার বা লেগস্পিনার বলা হয়ে থাকে। চায়নাম্যান শব্দটা যদিও পুরোপুরি উবে যায়নি। এখনও এই শব্দ ব্যবহার করেন ধারাভাষ্যকাররা। কিন্তু এই শব্দটা এলই বা কেন? আর কেনই বা বাঁ হাতি লেগ স্পিনারকে চায়নাম্যান বলা হয়? এর নেপথ্যেও গল্প রয়েছে।
বাঁ হাতি লেগ স্পিনারদের সামলানো খুবই কঠিন। প্রথমত তাঁদের ব্যতিক্রমী বোলিং অ্যাকশন। ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে কুলদীপ যাদব তেমনই একজন। তাঁকে সামলাতে হিমসিম খায় প্রতিপক্ষ দল। টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৭ সালে প্রবল সমস্যায় পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ধরমশালায় টেস্ট অভিষেক হয়েছিল কুলদীপ যাদবের। অস্ট্রেলিয়ার তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিয়েছিলেন কুলদীপ। এখন আর টেস্টে সেই অর্থে সুযোগ পান না। তবে সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের অন্যতম সেরা অস্ত্র কুলদীপ। এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়েও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাঁর।
আসা যাক, চায়নাম্যান প্রসঙ্গে। বিভিন্ন সময়েই যে বিষয়টা উঠে এসেছে এবং এই ঘটনাকেই বিশ্বাস করা হয়। ঘটনাটি ১৯৩৩ সালের। ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই সিরিজই এই শব্দের উৎস। ম্যাঞ্চেস্টারে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন ইংল্যান্ডের ওয়াল্টার রবিনস। হাফসেঞ্চুরিও করেন। কিন্তু সমস্যায় পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ হাতি আনঅর্থডক্স বোলার এলিস আচংকে খেলতে।
সে সময় ৫৫ রানে ব্যাট করছিলেন রবিনস। আচংয়ের একটি ডেলিভারি অফস্টাম্পের বাইরে পড়ে অনেকটা টার্ন নেয়। বলের লাইন পুরোপুরি মিস করেন রবিনস। উইকেট কিপার ইভান বরো স্টাম্পিংয়ে কোনও মিস করেননি। সেই ডেলিভারির পরই চায়নাম্যান শব্দের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। কিংবদন্তি প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা প্রথিতযশা ধারাভাষ্যকার রিচি বেনো এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, আচংয়ের বোলিংয়ে আউট হয়ে প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন ওয়াল্টার রবিনস। রাগে গজগজ করতে করতে আম্পায়ারকে তিনি নাকি বলেন, ‘ফ্যান্সি বিং ডান বাই আ ব্লাডি চায়নাম্যান’।
এলিস আচং চিন বংশোদ্ভূত। সম্ভবত সেই কারণেই ওয়াল্টার ‘চায়নাম্যান’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন বলে মনে করা হয়। তাঁর বোলিংয়ের স্টাইলের জন্যও এই শব্দটি বলা হয়ে থাকতে পারে। যদিও সেই বিষয়টি হয়নি বলেই ধারনা। বিশ্ব ক্রিকেটে চায়নাম্যান শব্দের উৎস হিসেবে আচংশের চিন-সংযোগকেই বলা হয়ে থাকে।