Cricket Controversy: অজি ক্রিকেটার মাঠে নামছেন, তাঁর ব্যাট নিয়েই বিতর্কের শুরু
হগকে আরও একবার 'ব্যাট ডেলিভারি বয়' হওয়ার নির্দেশ দেন চ্যাপেল, হগ আর ভয়ে যেতে চাননি। চ্যাপেল নিজেই তখন মাঠে প্রবেশ করেন।
আলো আর অন্ধকার, দুই-ই পা মেলায় ইতিহাসের মিছিলে। উজ্জ্বলতম অতীত যেমন ফিরে আসে স্মৃতিতে, তেমনই চুপিসারে হানা দেয় কলঙ্কও। ক্রিকেট ইতিহাস যেমন রেকর্ড, সাফল্য, নায়কদের খোঁজ দেয়, তুলে ধরে বিতর্কিত ঘটনাও। ক্রিকেট ইতিহাসের মহাবিতর্কিত নানা গল্পের খোঁজ দিল TV9 Bangla। দীপঙ্কর ঘোষাল তুলে ধরলেন সপ্তম কিস্তি।
ব্য়াটসম্যান নন। তাঁর বোলিং হাড় হিম করার মতোই। শিল্পী পেস বোলার। বোলিংয়ের জন্য বহুবার শিরোনামে এসেছেন। ব্যাট হাতে সেই তিনিই যে চমকে দিতে পারেন, সেটা জানাই ছিল না বিশ্ব ক্রিকেটের। শিল্পী পেসারের ডেনিস লিলি। শুধু শিল্পী বললে হয়তো পুরোটা বলা হবে না, বলা উচিত, ভয়ঙ্কর-সুন্দর! ৭০ টি টেস্টে ৩৫৫ উইকেট। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ৬৩ ম্যাচে ১০৩ উইকেট। সেই তিনিই কিনা, ১৯৭৯ সালে বলের বদলে ব্যাট হাতে চমকে দিয়েছিলেন! নাহ, সেঞ্চুরি-টেঞ্চুরি করে নয়, ব্যাট বিতর্কের জন্য। ১৫ ডিসেম্বর দিন যে কারণে আজও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে।
ক্রিকেট মাঠে নামছেন, না যুদ্ধক্ষেত্রে! ব্যাটসম্যানদের কাছে ক্রিকেট মাঠে অস্ত্র ব্যাট। উইলোর বদলে যদি অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট নিয়ে মাঠে নামেন! সেটাই করেছিলেন ডেনিস লিলি। কিংবদন্তি পেসার নেমেছিলেন অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট হাতে। ইংরেজ বোলারদের সংহারে। ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার দ্বাদশ ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল অল্পের জন্য বড় রকমের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচেছিলেন সতীর্থের ব্যাটের জন্যই। বেসবলের ব্যাটে যেভাবে ধাতু ব্যবহার শুরু হয়, সম্ভবত তা থেকেই প্রেরণা নিয়েছিলেন লিলি। এই ব্যাট অবশ্য প্রাক্তন এক ক্লাব ক্রিকেটার গ্রাহাম মনাঘানের মস্তিষ্কপ্রসূত। ডেনিস লিলির কাছের বন্ধু ছিলেন ওই গ্রাহাম। তাঁর অদ্ভূত রকমের ব্যাটের সংগ্রহ ছিল।
ডিসেম্বরের পার্থ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে বিতর্কের আগুন জ্বালিয়েছিলেন লিলি। উইলোর বদলে মাঠে নামেন অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট হাতে। ডেনিস লিলির আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, শুধুই বন্ধু নন, গ্রাহাম ব্যবসায় অংশীদারও ছিলেন ডেনিস লিলির। সেই ব্যাট নিয়ে নামাটা বিজ্ঞাপনী প্রচারের অংশ ছিল।
ইংল্যান্ড সিরিজের আগের কথা। ব্রিসবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেই ব্যাট নিয়েই খেলেছিলেন ডেনিস লিলি। ব্যাটে বলে মিষ্টি সংযোগ হলেও শব্দটা তেমন ছিল না। সেই ম্যাচে অবশ্য অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট দিয়ে বিশেষ কোনও পার্থক্য গড়তে পারেননি লিলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভয়ঙ্কর পেস বোলিংয়ের সামনে অসহায় দেখিয়েছে লিলিকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাটে বলে সংযোগই হয়নি। জোয়েল গার্নার তাঁকে লেগ বিফোর করেন। গল্প সেখানেই শেষ।
এবার ইংল্যান্ড সিরিজের পালা। ম্যাচের বয়স মাত্র দু’দিন। সেখানেই বিতর্কের শুরু। প্রথম দিনের শেষে ৮ উইকেটে ২৩২ অস্ট্রেলিয়া। লিলি নামবেন শেষ ব্য়াটসম্যান হিসেবে। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে নেটে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাটে শান দিচ্ছিলেন। অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল, যতটা বেশি সময় ক্রিজে কাটানো, ইংল্যান্ডকে ভয় দেখানো। নেটেই ব্যাটে বলে আওয়াজ বিরক্তি তৈরি করেছিল। ম্যাচে অস্বস্তি। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর পর দ্বাদশ ক্রিকেটার হগকে ডেকে পাঠান চ্যাপেল। বলেন, ওভার শেষ হতেই লিলিকে উইলো দিয়ে, সেই অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট ফেরত আনতে। অধিনায়কের নির্দেশ মেনে মাঠে গেলেও ব্যাট ফেরত দেননি লিলি। উল্টে হগকে ভরা গ্যালারির সামনে ব্যাট দিয়ে মাথায় মারতে গিয়েছিলেন।
ইয়ান বথামের বোলিংয়ে সেই অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট দিয়ে স্ট্রেট ড্রাইভ মারেন লিলি। সেটি যদিও আটকে দেন বথাম। তবে চ্যাপেলের মনে হয়েছিল, বাউন্ডারিও হতে পারত এই শট থেকে। কিন্তু লিলির এই দেখনদারিতেই তাঁর দল একটা বাউন্ডারি পেল না, এমনটাই ধারনা চ্যাপেলের। ফের একবার হগকে ওভার শেষে অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট ফেরত আনার এবং উইলো দিয়ে আসার নির্দেশ দেন চ্যাপেল। মাঠের আম্পায়ার ব্যাট নিয়ে এই বিতর্কে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেন। লিলি দুটি ব্যাটই সঙ্গে রাখেন। কিছুক্ষণ পর লিলি নিজেই ড্রেসিংরুমের দিকে যান, উইলো আনতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন উইকেটরক্ষক রডনি মার্শও। মজা দেখছিলেন। লিলিকে বার্তা দেন, কোন ব্যাট ব্যবহার করবে, সেটা তোমার ব্যাপার, আম্পায়ারের কথা নিশ্চয়ই শুনবে না? এতেই তেতে যান লিলি। উইলো ফেলে ফের অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট নিয়েই মাঠে নামেন। লিলির সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন আম্পায়াররা। হগকে আরও একবার মাঠে যেতে বলেছিলেন চ্যাপেল। হগ আর ভয়ে যাননি। চ্যাপেল নিজেই তখন মাঠে প্রবেশ করেন। লিলির থেকে কার্যত ২২ গজ দূরে চ্যাপেল। হঠাৎই একটা আওয়াজ শুনতে পান। চ্যাপেলের মাথার কিছুটা উপর দিয়ে পেরিয়ে যায় অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট। গ্রেগ চ্যাপেল তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি। সতীর্থের হাতে কাঠের ব্যাট দিয়ে, পড়ে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আউট হন লিলি। রাগে, নাকি ইচ্ছাকৃত, প্রশ্ন থাকতেই পারে।
ডেনিস লিলি পরে দাবি করেছিলেন, চ্যাপেল চেয়েছিলেন ব্যাট নাটক আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে। তাতে মাথা গরম হত লিলির। বোলিংয়ে সেটা কাজে লাগাতে পারতেন। মাইক ব্রিয়ারলি ব্যাট হাতে নামতেই লিলিকে উদ্দেশ্য করে অধিনায়ক চ্যাপেল বলেন, এই কিন্তু তোমাকে অ্যালুমিনিয়াম ব্যাট ব্য়বহার করা থেকে আটকাচ্ছিল।