IPL 2022: আইপিএলের মঞ্চেই আবার অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরছেন হার্দিক পান্ডিয়া

ফিটনেস বিতর্ক, বোলার হার্দিকের হারিয়ে যাওয়া, ব্যাটে রান না থাকা, বোর্ডের কোপে পড়া--- অ-নে-ক কিছু ঘিরে ফেলেছিল তাঁকে। তিনি হাসছেন, তবু সেই হাসি যেন যন্ত্রণা মাখা।

IPL 2022: আইপিএলের মঞ্চেই আবার অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরছেন হার্দিক পান্ডিয়া
IPL 2022: আইপিএলের মঞ্চেই আবার অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরছেন হার্দিক পান্ডিয়া
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 26, 2022 | 8:00 AM

অভিষেক সেনগুপ্ত

অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরতে কতটা সময় লাগে? কারও লেগে যায় কয়েক বছর। কারও হয়তো কয়েক মাস। প্রচারের সার্চলাইট থেকে পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে আশ্চর্য প্রত্যাবর্তন হয় কারও। তিনি নিজেই হয়তো দু’হাত মেলে দাঁড়ান। বুঝিয়ে দেন, হারিয়ে যেতে আসেননি। এসেছেন প্রতিভার বিদ্যুৎ ঝলক দেখাতে। সাময়িক বিপর্যয় দিয়ে মাপা যাবে না তাঁকে। হঠাৎ বিতর্কে ছিটকে যাবেন না। তিনি এসেছেন সাফল্যের স্থায়ী ইমারত বানাতে। কিংবদন্তি হতে।

হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya) কি এই কথাগুলোই নীরবে আউড়ে যাচ্ছিলেন বুধবার? ইডেনের গ্যালারি পোস্টারে ছয়লাপ। গাঢ় নীল জার্সিতে ঘেরা। অসংখ্য মুখ জ্বলছে, হার্দিকের মতো। সেই ভিড়ে যেন সুখের বলয় তৈরি করেছেন নাতাশা স্তাঙ্কোভিচ। ক্রিকেটমহল যাঁকে চেনে শ্রীমতি হার্দিক পান্ডিয়া নামে। হিলহিলে চেহারার ২৮ বছরের যুবক কি এ সব দেখতে পাচ্ছিলেন? হয়তো না! টিমকে সদ্য জেতানো বরোদার ছেলে হয়তো হারিয়ে যাচ্ছিলেন ফেলে আসা অন্ধকারের দিন-রাত্রিগুলোয়। ফিটনেস বিতর্ক, বোলার হার্দিকের হারিয়ে যাওয়া, ব্যাটে রান না থাকা, বোর্ডের কোপে পড়া— অ-নে-ক কিছু ঘিরে ফেলেছিল তাঁকে। তিনি হাসছেন, তবু সেই হাসি যেন যন্ত্রণা মাখা।

এই আইপিএল কত কি দেখল এ বার? তিন শূন্যে জর্জরিত বিরাট কোহলি। পাঁচবার আইপিএল জেতা রোহিতের মুম্বইয়ের বিপর্যয়। রবীন্দ্র জাডেজার ক্যাপ্টেন হওয়া এবং ছাড়া। চল্লিশের ধোনির ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি। রাজস্থানে ফিরে যুজবেন্দ্র চাহালের দুরন্ত ফর্ম। আর? হার্দিক পান্ডিয়ার জবাবের আইপিএল। গত বছর অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অনেক আগে থেকেই খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রত্যাশা মেটাতে পারছিলেন না। ব্যাটে রান ছিল না। চোটের কারণে বলও করতে দেখা যাচ্ছিল না। কুড়ি-বিশের আসরে তাঁকে আরও ম্রিয়মান দেখিয়েছিল। বিতর্কের শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। নিজের চোট সম্পর্কে ঠিকঠাক আপডেট তিনি দেননি। চোট যখন রয়েছে, তখন জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কেন যাননি? বিশ্বকাপের পর আরও চাপে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। যে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স থেকে উঠে আসা, সেই টিমই রিটেন করেনি তাঁকে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, লাল বলের ক্রিকেটে আর নয়। সাদা বলের ক্রিকেটকেই আঁকড়ে ধরবেন আরও বেশি। বরোদার রঞ্জি টিম থেকে নাম তুলে নিয়েছিলেন। মুম্বইয়েই গোপনে নিজেকে ফিট করার কাজটা শুরু করে ফেলেছিলেন। আইপিএলের ঠিক আগে নতুন টিম গুজরাত টাইটান্স তাঁকেই বেছে নিয়েছিল ক্যাপ্টেন। ওটাই হার্দিককে মোটিভেট করেছিল ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য।

আটের দশকের কপিল দেবের ঝলক দেখতে পান অনেকেই। কপিল খোদ কী বলেন? বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন বলেছেন, বোলার হার্দিককে আরও নিয়মিত হতে হবে, আরও ধারালো হতে হবে। ঠিকই তো, কপিলের মতো অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে হলে দুটো ভূমিকাতেই ধারাবাহিক হতে হবে। এই আইপিএলে যেন সেটাই করে দেখাচ্ছেন হার্দিক। প্লে-অফের কথাই ধরা যাক— একটা উইকেট নিয়েছেন। ৪০ নট আউট থেকেছেন ব্যাট হাতে। আর পুরো আইপিএলটা ধরলে? ৪৫৩ রান করেছে। সর্বোচ্চ নট আউট ৮৭। জস বাটলারের মতো তিনিও সবচেয়ে বেশি ৪টে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। ঝুলিতে মোট ৫ উইকেট।

হার্দিককে কি শুধু ব্যাট-বলেই মাপা উচিত? আইপিএল ১৫ ধরলে, না! নেতা হার্দিকেও ঢুকতে হবে। আইপিএলের আসরে পুরনো, অভিজ্ঞ আটটা টিম যা করতে পারেনি, যা দিতে পারেনি, তাই করছে গুজরাত। আসলে ক্যাপ্টেনের গুণে তৈরি হয় টিম। ঠান্ডা মাথা, টিমকে আগলে রাখা, তরুণদের পাশে থাকা, এ সব তো ছিলই। নেতা হার্দিক যোগ করেছে ‘টিমম্যান’ হার্দিককে। যিনি তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত খেলার মোড় বদলে দিয়েছেন। বল হাতে বিপক্ষকে ধাক্কা দিতে পারেন। এমন ক্রিকেটার হাতে থাকলে যে কোনও ক্যাপ্টেন স্বস্তিতে থাকবেন। নেতা হার্দিক এতটাই মুগ্ধ করছেন যে, পুরো সমীকরণটাই পাল্টে দিচ্ছেন। ভারতের ভবিষ্যতের ক্যাপ্টেন কে হবেন? লোকেশ রাহুল কিংবা ঋষভ পন্থকেই দাবিদার ধরা হচ্ছে। হার্দিক তালিকাতেই ছিলেন না। সেই তিনিই কিনা পন্থকে পিছনে ফেলে রাহুলের কট্টর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন। যদি চোটে জর্জরিত না হন, যদি ছন্দ না হারান, সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁকে নেতা হিসেবে দেখা যেতে পারে অচিরেই।

গুজরাতকে আইপিএলের ফাইনালে তোলার পিছনে ত্রিমুখী হার্দিক। কোন হার্দিকে এগিয়ে থাকবেন? ব্যাটার হার্দিক, বোলার হার্দিক, নাকি ক্যাপ্টেন হার্দিক? একই মোড়কে অনেক রূপ। আত্মপ্রকাশেই গুজরাত আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হলে হার্দিককে নিয়ে হয়তো বলা হবে, কপিল পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা অলরাউন্ডার তিনিই!