দিন বদলায়, সময় বদলায়, বদলায় কুর্সিতে বসা মানুষ… এ তো দুনিয়ার নিয়ম। জনপ্রিয়তার দিক থেকে শিখর ছুঁয়েছেন। তাঁকে নিয়ে অহরহ আলোচনা। রক্তে বইছে রাজনীতি। আর তিনি জড়িয়ে ক্রিকেট প্রশাসনে। কথা হচ্ছে বছর ৩৫ বছরের জয় শাহকে (Jay Shah) নিয়ে। এই সেপ্টেম্বরেই তাঁর জন্মদিন। কয়েকদিন আগে আইসিসির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। তাও আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ভারতীয় ক্রিকেট মহলে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি আইসিসির (ICC) সর্বকনিষ্ঠ চেয়ারম্যান হয়েছেন জয়। আর তারপর আরও বেশি আলোচনায় গুজরাটের ছেলে। বিশেষ করে এমন পরিস্থিতিতে তিনি আলোচনায়, যেখানে রয়েছে খানিক পাকিস্তান যোগ। অনেকেই অবাক হতে পারেন এ কথা শুনে। মনে হতেই পারে গুজরাটের ছেলে জয়ের আবার পাকিস্তানের (Pakistan) সঙ্গে যোগ ঠিক কি ভাবে?
২২ গজে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনার চোরাস্রোত বয়ে যায়। দুই দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা অতীতের পরিসংখ্যান ও ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে পড়েন। ওয়াঘার এপার ও ওপারের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মাঝে মাঝে হয় বাগযুদ্ধ। আর যখন আসে টিম ইন্ডিয়ার পাকিস্তান সফরে যাওয়ার প্রসঙ্গ, তখন তো যেন হইহই কাণ্ড, রইরই ব্যাপার! এ বার আবার ফেরা যাক, জয় শাহর সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ কিসের? বিষয়টা পরিষ্কার করা যাক। আসলে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে সে দেশে যাবে না ভারতীয় টিম। যে সময় পঁচিশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভেনু হিসেবে পাকিস্তানের নাম ঘোষণা হয়, তার পর থেকে এমনটাই শোনা গিয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে আইসিসির নতুন চেয়ারম্যানের প্রথম দায়িত্ব পাকিস্তানে সুষ্ঠুভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করানো। জয় কি পারবেন নিরপেক্ষ থেকে আইসিসির মসনদ সামলাতে? নাকি ভারত প্রেম, টিম ইন্ডিয়ার প্রতি প্রেম ও বিসিসিআইের প্রতি টান আটকে দেবে জয়কে?
কুর্সি পেলেই কি হয় কিস্তিমাত? এর উত্তর হয়তো সময়ই দেবে। কিন্তু ক্রিকেট মহলে আলোচনা, এমনটা হতেই পারে জয় আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর টিম ইন্ডিয়া আরও বেশি প্রাধান্য পাবে। এমনিতেও ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ড বিসিসিআই। ক্রিকেট বিশ্বে অর্থনীতির উপর ভারতের একটা প্রভাব রয়েছে। এতদিন বিসিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জয় শাহ। এখনও তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব। কারণ, এ বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে আইসিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাবেন জয়।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় শাহ পেয়েছেন আইসিসির গুরু দায়িত্ব
আইসিসির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৬ জন। যে সময় জয় আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাতে ১৫ জন সদস্য সমর্থন করেছিলেন। পাক ক্রিকেট বোর্ডের সমর্থন পাননি জয়। পিসিবি একদিকে জয়কে যেমন সমর্থন করেনি, তেমনই সরাসরি বিরোধিতাও করেনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আইসিসির সর্বেসর্বা হয়েছেন তিনি।
ক্রিকেট প্রশাসনে জয় শাহর কেরিয়ার গ্রাফ
ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের ছাপ রেখেছেন জয় শাহ। তাঁর বাবা অমিত শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে কারণে তাঁর রক্তে রাজনীতি বইছে। ক্রিকেট প্রশাসনে জয়ের বেশ ক্ষুরধার মস্তিস্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি ২০০৯ সালে আমেদাবাদের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ক্রিকেটের এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য হন। এরপর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে গুজরাট ক্রিকেট সংস্থার যুগ্মসচিব হন। ২০১৫ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক্সিকিউটিভ ফিনান্স কমিটির সদস্য হন। এরপর আইসিসি ফিনান্স ও কমার্শিয়াল কমিটির প্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১৯ সালে তিনি বিসিসিআই সেক্রেটারি হন। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে তিনি পুনরায় বোর্ড সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এরই মাঝে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হন তিনি। এ বার ১ ডিসেম্বর থেকে আইসিসির কুর্সি সামলাবেন।
বাবা অমিত শাহর সান্নিধ্যে জয় ক্রিকেট প্রশাসনে দক্ষতা বাড়ান। তাঁর সময়েই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, যা নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম নামে পরিচিত, সেটি তৈরি হয়েছে। ভারতীয় বোর্ডের লক্ষ্মীলাভের দিকটিও জয় শাহর সময়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয় ২০২২ সালের আইপিএলের মিডিয়া স্বত্বের কথা। সে বার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকায় মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি করে বিসিসিআই। যার ফলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছিল।
পঁচিশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভাগ্য নির্ধারণ করবেন জয় শাহ?
আইসিসির মসনদে জয় শাহ বসার পর থেকে পাকিস্তানের একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার বলাবলি শুরু করেছেন, যে সে দেশে নির্বিঘ্নে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করা তাঁর চ্যালেঞ্জ। ১৯৯৬ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে কোনও আইসিসি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আপাতত যার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এই প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে তা নিয়ে খোঁজ নিতে আইসিসির একটি দল পাকিস্তানে যাওয়ার কথা। যারা পিসিবির কাছ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য জানবে। কয়েকদিন আগে জানা গিয়েছিল, এ বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খসড়া সূচিও তৈরি। কিন্তু ক্রিকেট মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এখন আইসিসির মসনদে জয় শাহ বসায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি তাড়াতাড়ি ঘোষণা হবে না। কারণ তিনি দায়িত্ব পেতে পেতে এ বছরের ডিসেম্বর মাস। ফলে এমনও শোনা গিয়েছে, ভারতের যাতে সুবিধে হয়, তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি এখনই ঘোষণা নয়। জয় কি পারবেন, তাঁর দিকে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ থামিয়ে দিতে? প্রশ্ন বড়। উত্তর পেতে একটু সময় তো লাগবেই।