AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ICC Women World Cup 2022: ফিটনেস মন্ত্রে পাকিস্তান ম্যাচে বিস্ফোরণ বাংলার ঝুলনের

রবিবাসরীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে (Pakiatan) হারিয়ে কাপযাত্রা শুরু করল মিতালি রাজের ভারত (India)।

ICC Women World Cup 2022: ফিটনেস মন্ত্রে পাকিস্তান ম্যাচে বিস্ফোরণ বাংলার ঝুলনের
মেয়েদের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১০৭ রানে হারাল ভারত
| Edited By: | Updated on: Mar 06, 2022 | 2:59 PM
Share

সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

ভারত ২৪৪-৭ (৫০ ওভার)

পাকিস্তান ১৩৭ (৪৩ ওভার)

১০৭ রানে জয়ী ভারত

আর কয়েকমাস পর ৪০-এ পা দেবেন… মেয়েদের কথা তো ছেড়ে দিন, ছেলেদের ক্রিকেটেও ৪০-এ কেউ আন্তর্জাতিক আঙিনায় আগুন ঝরাচ্ছেন এমন নাম সচরাচর মিলবে না। এই কারণেই হয়তো ঝুলন গোস্বামী ক্রিকেটের ‘আইডল’। একে মেয়েদের বিশ্বকাপ, তার ওপর পাকিস্তান ম্যাচ। এই রকম একটা উত্তেজক যুদ্ধে বাংলার ঝুলন গোস্বামী আরও একবার প্রমাণ করলেন বয়স তাঁর কাছে শুধুই সংখ্যা। আর যদি সংখ্যা দিয়ে ভাবতে হয় ঝুলন উইকেটের সংখ্যাতেই বাঁচবেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচে ঝুলন ২টো উইকেট নিয়েছেন। ১০ ওভার বল করে ১টি মেডেনসহ ২৬ রান দিলেন। নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মাউঙ্গানুই সুইংয়ের জন্য বিখ্যাত। যতই ৪০ হোক ঝুলনের বয়স, তাঁর বোলিং দেখে মনে হল ৪০ নয়, তাঁর বয়স হয়তো ২৪। ঝুলনের সুইং ও পেসের চমৎকার মিশ্রণ ধরতেই পারলেন না পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। এক দিক থেকে ঝুলন এবং তাঁর সঙ্গে আর এক দিক থেকে রাজেশ্বরী পাকিস্তানকে চাপে ফেললেন। রাজেশ্বরী হয়তো চারটে উইকেট নিলেন, কিন্তু উল্টোদিক থেকে ঝুলন এতটাই চাপ তৈরি করেছিলেন, যে কারণে রাজেশ্বরীর কাজটা সহজ হচ্ছিল।

রবিবাসরীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে (Pakiatan) হারিয়ে কাপযাত্রা শুরু করল মিতালি রাজের ভারত (India)। ওয়ান ডে বিশ্বকাপে এর আগের তিন বারের সাক্ষাতেও ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান, এ বারও তা পারল না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে টসে জিতে শুরুতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক মিতালি রাজ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান তোলে ভারত। ম্যাচ জিততে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২৪৫ রান। কিন্তু রাজেশ্বরী-ঝুলন-রানাদের দাপটে ১৩৭ রানেই আটকে গেল বিসমার দল। ভারত-পাকিস্তান বিশ্বকাপের আগে দুটি করে ওয়ার্ম আপ ম্যাচেই জিতে আজ মাঠে নেমেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিতালি রাজের ভারতকে থামাতে পারল না পাকিস্তান। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে এই প্রথম বার পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিলেন বিসমা মারুফ। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই তা বরাবর ভারতের পক্ষেই রায় দেয়। সাম্প্রতিত অতীতে শুধুমাত্র একবারই ব্যাতিক্রম দেখা গিয়েছে। গত বছরের কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে বিরাট কোহলিররা হেরেগিয়েছিলেন বাবর আজমের পাকিস্তানের কাছে। তবে মেয়েদের বিশ্বকাপে আবার চেনা ছবিই ফিরল।

বিশ্বকাপের যাত্রাটা জয় দিয়ে শুরু করলেও ভারতের একটাই মূল সমস্যা, যা টুর্নামেন্টের আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও দেখা গিয়েছিল, যে টপ অর্ডারের ব্যাটাররা এক এক জন এক এক দিন খেলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ একদিন স্মৃতি রান পাচ্ছেন, তো অন্য দিন মিতালি বা হরমনপ্রীত রান পাচ্ছেন। এই বিশ্বকাপের মঞ্চে কিন্তু একটা দলের পারফরম্যান্স মজবুত করার জন্য একটা কোরাস পারফরম্যান্সের প্রয়োজন। এবং সেটা হয় তখনই, যখন টপ অর্ডারের অন্তত দুই-তিনজন যদি বড় রান করে দেন। তা হলে মিডর অর্ডারের ওপর চাপ কমতে থাকে। আর সেটা কিউয়িদের বিরুদ্ধে সদ্য শেষ হওয়া ওয়ান ডে সিরিজে দেখা যায়নি বলেই ভারতকে বাজে ভাবে ৪-১ হারতে হয়েছিল। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ভারত হারাল ঠিকই, কিন্তু তারা ভারতের থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকা একটা দল। ফলে পরের ম্যাচগুলোতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলার সময় টপ অর্ডারকে কিন্তু ভালো পারফর্ম করতেই হবে। এবং মিডল অর্ডারেরও ভালো সহযোগিতা প্রয়োজন।

স্মৃতি-দীপ্তিজুটিতে ভারতকে জয়ের ভিত গড়ে দিলেও ইন্ডিয়ার টপ অর্ডার কিন্তু সেই অর্থে দাগ কাটতে পারেনি। ওপেনার শেফালি বর্মা (০) ব্যর্থ হয়ে মাঠ ছাড়ার পর স্মৃতি ও দীপ্তি দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ৭৫ বলে ৫২ রান করেন ভারতীয় ওপেনার স্মৃতি এবং দীপ্তির ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ রান। ক্যাপ্টেন মিতালি এই নিয়ে কেরিয়ারে ছ’নম্বর ওয়ান ডে বিশ্বকাপে নামলেন। তবে রেকর্ড গড়ার ম্যাচে ব্যাটে রান নেই তাঁর (৭)। সহ-অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের (৫) ব্যাটও নিদাদের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠেনি। বাংলার মেয়ে ঝুলন বল হাতে নজর কাড়লেন, সেই অর্থে প্রথম ওয়ান ডে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দাগ কাটতে পারলেন বাংলার মেয়ে রিচা ঘোষ। ১ রান করে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয় রিচাকে। তবে সপ্তম উইকেটে রেকর্ড গড়ে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখান স্নেহ রানা ও পূজা বস্ত্রকার। স্নেহ-পূজা জুটিতে ১২২ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। টিম ইন্ডিয়ার হয়ে মেয়েদের ওয়ান ডে বিশ্বকাপে সপ্তম উইকেটে জুটিতে স্নেহ-পূজার পার্টনারশিপটাই সবথেকে বেশি রানের পার্টনারশিপ। পাশাপাশি মেয়েদের ওয়ান ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সপ্তম উইকেটে সব থেকে বেশি রানের পার্টনারশিপের বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেললেন স্নেহ-পূজা। ব্যাট হাতে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসের পর, বল হাতেই নিজের কাজটা করে দেখালেন স্নেহ রানা। এবং পূজা ৫৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৬৭ রানের ইনিংস উপহার দিলেন। রানার সঙ্গে ৬ রানে নট আউট থেকে মাঠ ছাড়েন ঝুলন।

এই বিশ্বকাপই হয়তো ঝুলনের শেষ বিশ্বকাপ। অনেকেই ভাবছেন জাতীয় দলের হয়ে হয়তো শেষ বিশ্বকাপটা খেলা শুরু করলেন ঝুলন। তার কারণ, কোনও মহিলা ক্রিকেটার ৪০ বছরেও ক্রিকেট খেলছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে, এ ছবি বিরল। কিন্তু ঝুলন যে নিজেকে কতটা ফিট রেখেছেন, এটা থেকেই বোঝা যায় তাঁর ক্রিকেটের প্রতি টান কতটা। ক্রিকেটের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে, বিরাট কোহলি নিজের ফিটনেস যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন তা যেমন সকলের কাছে একটা বড় উদাহরণ, তেমন ঝুলন এই বয়সেও বল হাতে যে ভেল্কি দেখাচ্ছেন তাও আগামী প্রজন্মের কাছে বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ২৪৪-৭ (পূজা ৬৭, স্নেহ ৫৩*; সান্ধু-২-৩৬)

পাকিস্তান ১৩৭ (সিদরা ৩০, দিয়ানা ২৪; রাজেশ্বরী ৪-৩১, ঝুলন ২-২৬)