Shane Warne: চলে গেলেন ক্রিকেটের বরপুত্র শেন ওয়ার্ন

তাইল্যান্ডে নিজের ভিলাতেই ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা যান বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনও চেষ্টাতেই আর সাড়া দেননি তিনি। স্পিনের ছোবলে, গুগলির চকিত টার্নে যে ভাবে চিরকাল চমকে দিয়েছেন ওয়ার্ন, ঠিক সে ভাবেই চলে গেলেন তিনি।

Shane Warne: চলে গেলেন ক্রিকেটের বরপুত্র শেন ওয়ার্ন
শেন ওয়ার্ন। ছবি: টুইটার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 04, 2022 | 9:30 PM

অভিষেক সেনগুপ্ত

৪০ হাজারেরও বেশি বল করেছেন টেস্টে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ধরলে প্রায় ৭৫ হাজার। মাত্র একটা বল তাঁকে শতাব্দীর সেরার তাকমা দিয়েছিল। মাইক গ্যাটিংকে বোল্ড করা সেই আশ্চর্য বল! এমন গোপন ঘূর্ণি থাকতে পারে কোনও লেগস্পিনারের? এ নিয়ে চিরকাল আলোচনা হয়েছে। গবেষণা হয়তো শুরু হবে এ বার। সোনালি চুল আর ঠোঁটে জিঙ্ক অক্সাইড লাগিয়ে রানআপে হাঁটতেন তিনি। দুলকি চালে হাঁটতে হাঁটতে বোলিং মার্কের দিকে আসা। ডেলিভারির মুখে হঠাৎই পাল্টে যেত সব। অপাঠ্য, দুর্বোধ্য কিছু বেরিয়ে আসত তাঁর হাত থেকে। ক্রিকেট বিশ্বকে সেটাই চমকে দিত বারবার। সেই শেন ওয়ার্নই কিনা শুক্রবার সন্ধেয় হঠাৎই মারা গেলেন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে। তাইল্যান্ডে নিজের ভিলাতেই ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা যান বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনও চেষ্টাতেই আর সাড়া দেননি তিনি। স্পিনের ছোবলে, গুগলির চকিত টার্নে যে ভাবে চিরকাল চমকে দিয়েছেন ওয়ার্ন, ঠিক সে ভাবেই চলে গেলেন তিনি।

ঝলকে ওয়ার্ন

  • টেস্ট অভিষেক  ২ জানুয়ারি, ১৯৯২ বনাম ভারত
  • টেস্ট  ১৪৫
  • উইকেট   ৭০৮
  • সেরা  ৮/৭১
  • ম্যাচে ১০ উইকেট ১০ বার
  • ম্যাচে ৫ উইকেট  ৩৭ বার
  • ওয়ান ডে অভিষেক ২৪ মার্চ, ১৯৯৩ বনাম নিউজিল্যান্ড
  • একদিনের ম্যাচ  ১৯৪ 
  • উইকেট ২৯৩
  • সেরা  ৫/৩৩

শতাব্দীর সেরা বলে মাইক গ্যাটিংকে বোল্ড

১৯৯৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য

২০০৩ বিশ্বকাপের আগে ড্রাগ নেওয়ার অভিযোগে নির্বাসিত

২০০৪-এ নির্বাসন কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরতেই  দুই ইনিংসে ৫ উইকেট

প্রথম বোলার হিসেবে ৬০০ টেস্ট উইকেট নেওয়ার কীর্তি

টেস্ট, ওয়ান ডে মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১ হাজার উইকেট নেওয়ার নজির

২০০৮ সালে রাজস্থান রয়্যালসকে প্রথম আইপিএল ট্রফি দেওয়ার কারিগর

ওয়ার্ন ক্রিকেটের বরপুত্র। যে অস্ট্রেলিয়া পেস বোলারের জন্ম দেয়, সেখান থেকেই উঠে এসেছিলেন এক বিস্ময়কর লেগস্পিনার। যে কোনও পিচে, যে কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যাঁকে বাদ দিয়ে প্রথম এগারো সাজানো যায়নি। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে সিডনিতে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ৪৫ ওভার বল করে ১৫০ রান দিয়ে মাত্র ১টা উইকেট মিলেছিল সে দিন। ভারতের হয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করা ওপেনার রবি শাস্ত্রীর। সচিন তেন্ডুলকর বনাম শেন ওয়ার্ন হয়তো সে দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। ওই ম্যাচে ১৪৮ করে নট আউট থেকে গিয়েছিলেন মাস্টারব্লাস্টার। এরপর মরুঝড় উঠবে। এরপর বিশ্বে যে কোনও প্রান্তে উল্টো দিকে ওয়ার্নকে দেখলেই জ্বলে উঠবেন সচিন। কিন্তু তাতেও ওই দ্বৈরথ শেষ হবে না। সচিন জিতবেন কখনও, কখনও ওয়ার্ন।

একদিকে সচিন তেন্ডুলকর, অন্য দিকে মুথাইয়া মুরলীথরন— এই ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অজি ক্রিকেটারের। মুরলির টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ইমারত গড়লেও ওয়ার্ন থেকে গিয়েছেন শিল্পী হিসেবেই। তাঁর লেগস্পিন মুগ্ধ করেছে দুনিয়াকে। জাদুকর বলে ডাকা হয়েছে। ১৪৫টা টেস্ট ম্যাচে সব মিলিয়ে ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন। সেরা বোলিং ৮/৭১। ম্যাচে ১০ উইকেট ১০ বার। ৫ উইকেট ৩৭ বার। ১৯৪ ওয়ান ডে ম্যাচে ২৯৩ উইকেট। সেরা ৫/৩৩। ১৯৯৯ সালে ওয়ান বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ান টিমের অন্যতম সফল মুখ।

যে শুক্রবার বিশ্ব ক্রিকেটের কাছে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ হয়ে গেল, সেই সকালেই ওয়ার্ন সুস্থই ছিলেন। তাইল্যান্ডের ভিলাতে বসেই লিখেছিলেন রড মার্শের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা। টুইট করেছিলেন, ‘রড মার্শ আর নেই, খবরটা শুনে খুব কষ্ট পেলাম। ক্রিকেটের কিংবদন্তি হওয়ার পাশাপাশি এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেরণা ছিল ও। ক্রিকেটের প্রতি রড ভীষণ যত্নবান ছিল। অস্ট্রেলিয়াকে প্রচুর সাফল্য দিয়েছে।’ কে জানত, রড মার্শকে কয়েক ঘণ্টা আগে শেষ শ্রদ্ধা জানানো ৫২ বছরের লোকটাকেই শেষ বিদায় জানাতে হবে!

শেন ওয়ার্ন ক্রিকেটের বরপুত্র। অবাধ্য ছেলেও। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন বারবার। বিতর্কে ফালাফালা হয়েছেন। ড্রাগ নিয়ে সাসপেন্ড হয়েছেন। কিন্তু বাইশ গজে যখন ফিরেছেন, ওয়ার্ন আবার জাদুকর। ক্রিকেট যদি চিরকাল ডন ব্র্যাডম্যানের গল্প শোনায়, ভিভ রিচার্ডস, সচিন তেন্ডুলকর, ব্রায়ান লারাদের বিজ্ঞাপন সাজায়, তা হলে ওই একই বন্ধনীতে রেখে দেবে ওয়ার্নকেও। হাত থেকে বেরিয়ে আসা বল পিচে পড়ে কোন দিকে ঘুরবে, তা নিয়ে দেখার জন্য থমকে থেকেছে দুনিয়া। এক একটা বল যেন মহাকাব্য। যেন ইতিহাস গড়বেন বলেই জন্ম হয়েছিল তাঁর। চিরকাল পেস বোলিং আঁকড়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার মতো একটা দেশ কিনা ওয়ার্নের জন্যই স্পিনিং উইকেট বানিয়েছে প্রতিপক্ষকে দুরমুশ করার জন্য। ক্রিকেট হালখাতায়, ক্রিকেট আবেগে ওয়ার্নই তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী।

২০০৩ বিশ্বকাপের আগে মাদক নিয়ে এক বছর নির্বাসিত হলেন ওয়ার্ন। ২০০৪-এ জাতীয় দলে ফিরেই দুই ইনিংসে ৫ উইকেট। প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ৬০০ উইকেট নেওয়া। টেস্ট, ওয়ান ডে মিলিয়ে ১ হাজার উইকেট নেওয়ার বিরল নজির। ওয়ার্ন তথ্যে, গর্বে, সাফল্যে চিরকাল প্রাসঙ্গিক থেকেছেন। থাকবেনও।

সচিনের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণেই হয়তো ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা ওয়ার্নকে ভালোবেসেছেন বরাবর। ২০০৮ সালে সেই তাঁকেই দেখা গেল প্রথম আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের মেন্টর হিসেবে। তখন ওয়ার্নের বয়স হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণি থেকে গিয়েছে একই রকম। লেগস্পিন একই রকম ধারালো। ওয়ার্ন সে বারও চমক দেখিয়েছিলেন। রাজস্থানকে প্রথম আইপিএল জিতিয়ে।

ক্রিকেট কেন ঋণী থাকবে ওয়ার্নের কাছে? পেস আগ্রাসনের চূড়ান্ত সাফল্যের সময় দুঃস্থ শিল্পের মতো ধুঁকতে থাকা স্পিন বোলিং বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন ওয়ার্ন। ধংস্বের নাম লেগস্পিন হতে পারে। শিল্পের নাম লেগস্পিন হতে পারে। এমনকি কবজির মোচড়ে জন্ম নিতে পারে অফুরান প্রেমও! ওয়ান ছাড়া এত কিছু সম্ভব ছিল না নাকি!

আরও পড়ুন: Virat Kohli: ১০০তম টেস্টে কত রান করবেন বিরাট, আগেই ভবিষদ্বাণী করে দিয়েছেন এক ভক্ত