টাইটানিকের হার্ট অব দ্য ওসিয়ান মনে পড়ে? ভারতীয় টিমেরও হার্ট যেন হার্দিক। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও তাঁকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের একটা বড় অংশের আচরণ ছিল তেমনই। তার আগের ঘটনায় আসা যাক। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে বড় ভূমিকা ছিল সদ্য জাতীয় দলে আসা হার্দিক পান্ডিয়ার। আরও সেরা হার্দিককে পাওয়া গিয়েছিল ২০১৭ চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল, ফাইনালেও সামনে সেই পাকিস্তান। দ্রুত উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে ভারত। রবীন্দ্র জাডেজাকে সঙ্গে নিয়ে অসম্ভবের দিকে এগচ্ছিলেন হার্দিক। অল্পের জন্য হয়নি। জাডেজার রান আউটে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
আজ আরও একটা ফাইনালে নামছে ভারত। গত ওয়ান ডে বিশ্বকাপের মাঝেই চোট পেয়েছিলেন হার্দিক। যার জেরে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যান। আর বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে ধারাবাহিক হতাশা রাত কেটেছে হার্দিকের। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দল বদল, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেতৃত্ব ডামাডোল, ক্যাপ্টেন্সি, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স, সমালোচনার চক্রব্য়ুহে আটকে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ ছিল না। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতেই এ যেন অন্য হার্দিক।
অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেছে ভারত। উল্টোদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাও অপরাজিত। কিন্তু দু-দলের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন হার্দিক পান্ডিয়া। টুর্নামেন্টের প্রতি ম্যাচেই অবদান রাখছেন। সেটা বোলিংয়ে হোক কিংবা ব্যাটিংয়ে। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বলা হত একটা সময়। সেই সময়টা আবার ফেরাতে পেরেছেন হার্দিক। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে হার্দিকের পারফরম্যান্স জরুরি। গত কয়েক মাস যে ভাবে কেটেছে, তাঁর ক্ষেত্রেও কি বলা হবে রিডেমশন কমপ্লিট?
প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও চিত্রটা কার্যত এক। বল বিকৃতি কাণ্ডের পর স্টিভ স্মিথ-ওয়ার্নাররা জাতীয় দলে ফিরতেই প্রতিপক্ষ গ্যালারি থেকে আওয়াজ উঠত প্রতারক বলে। প্রতি ম্যাচেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ২০১৯ বিশ্বকাপে এমন পরিস্থিতিতেই খেলেছেন স্মিথরা। এরপর অ্যাসেজ সিরিজ। সেখানে পরিস্থিতি আরও কঠিন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে চাপে রাখতে ইংল্যান্ড গ্যালারি যে শান্ত থাকবে না, এটাই প্রত্যাশিত। হয়েছিলও তাই। এখান থেকে ঘুরেও দাঁড়িয়েছিলেন। পরপর সেঞ্চুরির ইনিংস। চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করেছিলেন সেই সিরিজে। যে দর্শকরা চিটার, বিদ্রুপে ভরিয়েছিলেন স্মিথকে, তাঁরাই দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছিলেন।
হার্দিক পান্ডিয়া কোনও অপরাধ করেননি। তবে আইপিএলে তাঁরও জুটেছে বিদ্রুপ। সেখান থেকে অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আজ ফাইনালে নায়কের মতো পারফর্ম করে টিমকে ট্রফি দিয়ে হার্দিকও সকলের হৃদয়ে আলাদা জায়গা গড়ে নেবেন? তা হলে কী বলা হবে? রিডেমশন কমপ্লিট…!