Bodyline Series: ক্রিকেট ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায়ের গল্প জানেন কী?

বডিলাইনের পরিকল্পনা কি জার্ডিনেরই মস্তিষ্ক প্রসূত? ১৯৩০ ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২৩২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ব্র্যাডম্যান।

Bodyline Series: ক্রিকেট ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায়ের গল্প জানেন কী?
Image Credit source: OWN Photograph
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 16, 2022 | 10:00 PM

দীপঙ্কর ঘোষাল

যেন আগুনের গোলা আছড়ে পড়ছে! কানের পাশ দিয়ে এক-একটা বল উড়ে যাচ্ছে মুহূর্তে। ব্যাটসম্যান কেঁপে কেঁপে উঠছে সেই বলের মুখোমুখি হয়ে। অনেক পরে ওই সব ডেলিভারিকে ডাকা হবে গালভরা নামে— চিন মিউজিক। যে সময়ের গল্প, তখন অবশ্য অতর্কিত বিমার কিংবা বাউন্সারকে আলাদা নামে ডাকা শুরু হয়নি। তবে ভয়ঙ্কর ডেলিভারি সত্ত্ব সে সময় নিয়ে রেখেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাইকেল হোল্ডিংকে বলা হত হুইসপারিং ডেথ। ক্লাইভ লয়েডের টিমের বোলিং কার্যত বিভীষিকা হয়ে উঠেছিল ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলোর কাছে। ক্যারিবিয়ান পেসারদের একচ্ছত্র আধিপত্যে থাবা বসাতে পারেননি কেউই। কিন্তু আলোচনায় উঠে এসেছিল। তবে সেই চর্চায় বেড়েছিল নিন্দা।

লেগ প্যাকড ফিল্ডিং। ডান হাতি ব্যাটারকে করা হচ্ছে রাউন্ড দ্য উইকেট বোলিং। লেগ-মিডল স্টাম্পে বল পড়ে কখনও তিরের মতো এসে বিঁধছে পাঁজরে, বুকে। কখনও আছড়ে পড়ছে মাথার খুলিতে। এখনকার মতো উন্নত ক্রিকেট সরঞ্জামও ছিল না। বিখ্যাত বডিলাইন সিরিজ এ ভাবেই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। অবশ্য, স্ট্র্যাটেজি থেকে ভাবনা, সব অর্থেই ডগলাস জার্ডিনের টিম ‘কুখ্যাত’ হয়ে উঠেছিল।

BODYLINE 1

মাঠে নামছে ইংল্যান্ড দল।

ক্রিকেট জেন্টলম্যান্স গেম। ভদ্রলোকের খেলা। স্পোর্টসম্যান স্পিরিট সর্বস্ব। বডি লাইন সিরিজে এ সবের ধার ধারেনি ইংল্যান্ড। অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা ডন ব্র্যাডম্যান এবং তাঁর অস্ট্রেলিয়াকে থামাতে এমন ‘পরিকল্পনার’ আশ্রয় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সরাসরি সম্প্রচার নামক বস্তু তখন জন্মই নেয়নি। একমাত্র ভরসা ছিল রেডিও। তাতে বলিলাইন সিরিজ ঘিরে নিন্দার শেষ নেই। অন্তত দলিল, দস্তাবেজ তাই বলছে। ১৯৩২-৩৩ সেই সিরিজ কেন ‘বডিলাইন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল? তার অন্যতম কারণ বোধহয় হ্য়ারল্ড লারউড।

BODYLINE 2

অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এখনকার মতো পাঁচ দিন কিংবা দিনে ৯০ ওভারের নিয়মও ছিল না। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি সহজে জিতেছিল ইংল্যান্ড। ওই ম্যাচে খেলতে পারেননি ডন ব্র্যাডম্যান। এরপরই ইংল্যান্ডের আতঙ্ক শুরু হয়। সহজ কথায়, অস্ট্রেলিয়া নয়, ইংল্যান্ডের মূল আতঙ্ক ছিল কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যানই। তাঁকে থামাতেই মূলত বডিলাইন তত্ত্বের আমদানি। এর মস্তিষ্ক ছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন। তাঁর এই পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার রান রেট কমানো গিয়েছিল। বিতর্ক তৈরি হয়েছিল বেশি। অ্যাডিলেডে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে বুকে বলের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছিলেন অজি অধিনায়ক বিল উডফল।উইকেট রক্ষক বার্ট ওল্ডফিল্ডের মাথার খুলিতে চিড় ধরে গিয়েছিল।

বডিলাইনের পরিকল্পনা কি জার্ডিনেরই মস্তিষ্ক প্রসূত? ১৯৩০ ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২৩২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ব্র্যাডম্যান। দীর্ঘ ইনিংসের মাঝে একটা সময় প্রবল চাপে ছিলেন ব্র্যাডম্যান। বৃষ্টির পর পিচ আরও ব্যাটিং-বিরোধী হয়ে উঠেছিল। কিছু ডেলিভারি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বাউন্স হচ্ছিল। প্রচন্ড গতির এই বোলিংয়ে অস্বস্তিতে পড়েন ব্র্যাডম্যান। বিষয়টি নজর এড়ায়নি সারে অধিনায়ক পার্সি ফেন্ডারের। ইউরেকা বলে চেঁচাতে বোধহয় বাকি রেখেছিলেন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক জার্ডিনের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ব্র্যাডম্যানের দুর্বলতম দিক। ইংল্যান্ড অধিনায়ক পরে ম্যাচের ফুটেজ দেখে বুঝে গিয়েছিলেন, রানমেশিনকে থামাতে হলে কী করতে হবে!

BODYLINE 3

নটিংহ্যামশায়ার অধিনায়ক আর্থার কার এবং দুই পেসার হ্যারল্ড লারউড-বিল ভোসকে নিয়ে লন্ডনের এক হোটেলে বিশেষ মিটিং করেন জার্ডিন। লেগ সাইডে ফিল্ডার ভরিয়ে বডিলাইন বোলিংয়ের পরিকল্পনা তৈরি হয়। লারউড-ভসকে নিজের পরিকল্পনা জার্ডিন জানতে চান, তারা পারবেন কী না? অস্ট্রেলিয়া সফরের পরিকল্পনা গড়তে ফ্র্যাঙ্ক ফস্টারের সঙ্গেও দেখা করেন জার্ডিন। ১৯১১-১২ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলেন ফস্টার। অজি ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলেছিলেন পেসার ফস্টার। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ, পরিস্থিতি সম্পর্কে জার্ডিন মূল্যবান টিপসও দিয়েছিলেন ফস্টার। যা চমৎকার বাস্তবায়িত করেছিলেন জার্ডিন।

সিরিজে ইংল্যান্ড ৪-১ জিতলেও বিশ্ব ক্রিকেটে খলনায়ক হয়ে গিয়েছিলেন অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন। এমনকি, আজও তিনি এবং তাঁর বলিলাইন সিরিজ ক্রিকেটের কালো অধ্যায় হয়ে থেকে গিয়েছে। বিশ্ব ক্রিকেটে নেতিবাচক ভাবমূর্তিও তৈরি হয় জার্ডিনের। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট সমর্থক, সংবাদমাধ্যম জার্ডিনের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। ইংল্যান্ডের কয়েকজন ক্রিকেটার জার্ডিনের বডিলাইন পরিকল্পনায় মত দেননি। তবে অ্যাসেজ জিতে দেশে ফিরে কিন্তু বীরের সম্মান পেয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।