MS Dhoni: কোটিপতি লিগের সবচেয়ে বড় ‘ব্র্যান্ড’, সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে চলেছে ধোনির দেড় দশকের আইপিএল জার্নি

বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক পরের বছরই ভারতের মাটিতে টি-২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আবির্ভাব। কুড়ি বিশের ফরম্যাটে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক থেকে অনুরাগীদের প্রিয় 'ক্যাপ্টেন কুল' হয়ে ওঠার যাত্রাটার পিছনে আইপিএলকে কিছুটা ধন্যবাদ জানাতেই পারেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

MS Dhoni: কোটিপতি লিগের সবচেয়ে বড় 'ব্র্যান্ড', সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে চলেছে ধোনির দেড় দশকের আইপিএল জার্নি
Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 31, 2023 | 7:04 PM

তিথিমালা মাজী: ২০০৮ সাল থেকে দেখতে দেখতে ২০২৩ সাল। মাঝে ১৫টা বছর বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদন জুগিয়ে আসছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়র লিগ (IPL 2023)। প্রথম সিজন থেকে আজ পর্যন্ত আইপিএলের একটি বিষয় ধারাবাহিক, তিনি হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। আট দলের আইপিএল ১০ দলে এসে ঠেকেছে। মাঝে বিস্তর পরিবর্তন হয়েছে। বদলায়নি শুধু চেন্নাই সুপার কিংস টিমে মহেন্দ্র সিং ধোনির অবস্থান। ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে টি-২০ বিশ্বকাপ জয় ভারতে টি-২০ ফর্ম্যাটের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল এক লহমায়। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং, ২০ ওভারের খেলায় চার-ছক্কার বন্যা ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা পছন্দ করতে শুরু করেন। বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক পরের বছরই ভারতের মাটিতে টি-২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আবির্ভাব। কুড়ি বিশের ফর্ম্যাটে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক থেকে অনুরাগীদের প্রিয় ‘ক্যাপ্টেন কুল’ হয়ে ওঠার যাত্রাটার পিছনে আইপিএলকে কিছুটা ধন্যবাদ জানাতেই পারেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

দেড় দশক ধরে আইপিএলে ধোনি ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব সামলেছেন চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টস- দুটি টিমের হয়ে। এই সময়ের মধ্যে ক্যাপ্টেন হিসেবে সবচেয়ে বেশি আইপিএল ম্যাচ খেলার কীর্তি, উইকেটকিপার হিসেবে সবচেয়ে বেশি শিকারের পাশাপাশি সিএসকে ফ্যানদের প্রিয় ‘থালা’ হয়ে উঠেছেন। ১৫টি সংস্করণের মধ্যে চার বার সিএসকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁরই তত্ত্বাবধানে। যতই ‘ড্যাডিস আর্মি’ নামে ডেকে খোঁচা দেওয়া হোক, আইপিএলের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মহেন্দ্র সিং ধোনিই। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তাঁর পারফরম্যান্স, ফর্ম দুইই আন্তর্জাতিক কেরিয়ার গড়তে সাহায্য করেছে।

ধোনি যুগের সূচনা

ধোনি তাঁর আইপিএলের জার্নি শুরু করেন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার হিসেবে। সেই ২০০৮ সালে সিএসকে তাঁকে সাড় ৬ কোটিতে নিলাম থেকে কিনেছিল। এরপর আর কখনও নিলামে ওঠেননি। IPL-এ নির্বাসিত হওয়ার পর সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মালিকানাধীন রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টস ২০১৬ সালে সাড়ে ১২ কোটি টাকায় ধোনিকে বেছে নিয়েছিল। ২০১৮ সালে ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর ধোনি আবার ফেরেন CSK-তে। ২০১৮ সালের আইপিএলে ১৫ কোটি টাকা দিয়ে ধোনিকে রিটেন করে হলুদ আর্মি। তবে ২০২২ সালের প্লেয়ার রিটেনশনের সময় ১২ কোটি টাকা সেকেন্ড চয়েস হিসেবে ধোনির নাম ওঠে।

চেন্নাই বেসড ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনির যা সম্পর্ক, তা আইপিএলের অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ও ক্রিকেটারের নেই। ফ্যানদের কাছে কবে মাহি থেকে থালা হয়ে গিয়েছিলেন, নিজেও বুঝতে পারেননি। ধোনিও ফ্যানদের প্রত্যাশার মিটিয়েছেন ১৫টা বছর ধরে। প্রথম সিজনে শেন ওয়ার্নের নেতৃত্বাধীন রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ফাইনালে হেরে গিয়েছিল সিএসকে। সেখান থেকেই ধোনি, সিএসকে ও ফ্যানদের ত্রিকোণ প্রেম শুরু হয়।

প্রথম ট্রফি

প্রথম সিজনে ট্রফি জয়ের খুব কাছ থেকে ফিরতে হলেও মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সিএসকে দলকে আইপিএল ট্রফির জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় সিজনের পর টুর্নামেন্টের তৃতীয় সিজন ফেরে ভারতে। সেমিফাইনালে আরসিবির বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা ভুলে ২০১০ সালে ধোনির জাদুর ছোঁয়ায় সিএসকে তুলে নেয় তাদের প্রথম আইপিএল ট্রফি। সে বছরই টি-২০ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে চেন্নাই। পরের মরসুমেও ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। পরপর দুটি মরসুমে ট্রফি জেতে চেন্নাই। জাতীয় দলকে ২৮ বছর পর ওডিআই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করেন তিনি।

সিএসকে পরবর্তী আইপিএল ট্রফি জিতেছিল ২০১৮ সালে। মাঝে সাতটা বছর অপেক্ষা করতে হলেও মাহি তাঁর অনুরাগীদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস এবং দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন্সির জন্য। ১৫টির মধ্যে ১৩টি মরসুমে সিএসকে-কে প্লে-অফে পৌঁছে দেন। জাতীয় দলের পাশাপাশি সিএসকে জার্সিতে ধোনি ম্যাজিক দিন দিন বেড়েছে বই কমেনি। ২০১৪ সালে সিএসকে জেতে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব।

MS Dhoni

অভিশপ্ত ২০১৫

লাগাতার সাফল্য পেয়ে আসা সিএসকের দৌড় বড় ধাক্কা খায় ২০১৫ সালে। ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে বিদ্ধ হয়ে রাজস্থান রয়্যালস ও চেন্নাই সুপার কিংস ব্যান হয়ে যায় দু’বছরের জন্য। ৮ বছর সিএসকে টিমে কাটানোর পর ২০১৬ সালে ধোনির গায়ে ওঠে অন্য দলের জার্সি। রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের হয়ে খেলেন। স্টিভ স্মিথের ক্যাপ্টেন্সিতে ২০১৭ সালে ফাইনালে ওঠে পুনে। ধোনিরা ১ রানে হেরে যান মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে।

ধোনির প্রত্যাবর্তন

২০১৮ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ধোনির ফেরাটা ছিল ভীষণ ইমেশনাল। কামব্যাকের বছরেই ধোনির নেতৃত্বে তৃতীয় আইপিএল ট্রফি জিতে নেয় সিএসকে। ব্যাটে হাতে ওই সিজনে ধোনি ছিলেন অসামান্য। ৭৫.৮৩ গড়ে ৪৫৫ রান করেছিলেন। ২০১৯ সালে ফের দলকে ফাইনালে তোলেন মাহি। টুর্নামেন্টের দশম সংস্করণে সিএসকের সেটা অষ্টম ফাইনাল ছিল। দুর্ভাগ্যবশত সে বারও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১ রানে বাজিমাত করে যায়।

ঐতিহাসিক ব্যর্থতা ও চতুর্থ খেতাব

২০২০ সালে আইপিএল আরও একবার দেশের বাইরে গিয়েছিল কোভিড ১৯ প্যানডেমিকের কারণে। অতিমারির প্রভাব সিএসকে দলকে প্রভাবিত করেছিল কি না জানা নেই। কারণ টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ওই প্রথমবার প্লে-অফে জায়গা করে নিতে পারেনি সিএসকে। আট দলীয় টুর্নামেন্টে ধোনিরা শেষ করেছিলেন সপ্তম স্থানে। ১৪টি লিগ স্টেজের ম্যাচে জয়ের সংখ্যা মাত্র ৬। ঐতিহাসিক ব্যর্থতার পরের বছরই নিজেদের চতুর্থ খেতাব জেতে সিএসকে। ক্যাপ্টেন ধোনির বয়স ছিল তখন ৩৯ বছর।

পরীক্ষা নীরিক্ষা ব্যর্থ

২০২২ সাল থেকে দশ দলের আইপিএল শুরু হয়। ৪০ বছরের ধোনি চেন্নাইয়ের ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাডেজার হাতে। ধোনির কেরিয়ার সায়াহ্নে, এটা বুঝেই সায় দিয়েছিল সিএসকে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরীক্ষা নীরিক্ষার সিদ্ধান্ত দলের জন্য মোটেও ভালো হয়নি। টুর্নামেন্টের সূচনা হয়েছিল চূড়ান্ত খারাপ ভাবে। লিগের প্রথম চারটি ম্যাচে পরপর হার। পরের চারটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে জয়। অর্থাৎ আটটির মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচ জিতেছিল। প্লে অফের দৌড় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই জাডেজার কাছ থেকে ফের ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব ফিরে যায় ধোনির হাতে। ততদিনে দেরি হয়ে গিয়েছে।

“মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) অসম্পূর্ণ। সিএসকে ছাড়া ধোনি অসম্পূর্ণ।” উক্তিটি চেন্নাইয়ের ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক এন শ্রীনিবাসনের। ধোনি ও সিএসকে একে অপরের পরিপূরক। দল জিতুক বা হেরে যাক, ধোনি এবং আইপিএলের মধ্যে যে মজবুত বন্ধন তার ঝলক আরও একবার দেখা যাবে ১৬তম আইপিএলে। ৩১ মার্চ আরও একবার দর্শকরা মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ব্যাট হাতে নামতে দেখবেন। হলুদ জার্সি গায়ে চড়িয়ে এ যাবৎ প্রচুর সাফল্য পেয়েছেন মাহি। ৪১-এর ধোনির আইপিএল অবসরের জল্পনা ডালপালা মেলেছে। যাওয়ার আগে আরও একবার জাদু ছড়িয়ে বিদায় নিতে চান তিনি।