মুম্বই: উপহার দেখে থমকে গিয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য। এতটাই যে সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) কথা বলতে পারছিলেন না। একে জীবনের শেষ ম্যাচ খেলে উঠেছেন সদ্য। চোখের জলে মাখামাখি হয়ে রয়েছেন। একরাশ কষ্টের মধ্যেই টিমের তরুণ ক্রিকেটার এগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর দিকে। ড্রেসিংরুমের কোণে বসে থাকা মাস্টারব্লাস্টারের কাছে গিয়ে দেন এক মূল্যবান উপহার। যা দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সচিন। কিন্তু সেই উপহার নিতে পারেননি। ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন তরুণ ক্রিকেটারকে। প্রায় ন’বছর পর সেই গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন সচিন। আর তা প্রকাশ্যে আসতেই ক্রিকেট ভক্তরা অবাক হয়ে গিয়েছেন। ওই উপহার দেওয়ার মধ্যে দিয়েই বোঝা যাচ্ছে, তিনি কতটা ভালোবাসতেন সচিনকে।
সচিন তেন্ডুলকর ও বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহারথী। ক্রিকেট খেলা শুরু করার পর থেকে, প্রথম জনের একাধিক রেকর্ড ভেঙে আসছেন কোহলি। তবে বিরাট বরাবর সচিনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন। মাস্টার ব্লাস্টারের প্রতি ভিকের ভালোবাসাও অগাধ। দুই ক্রিকেটারের রেকর্ড নিয়ে ক্রিকেটমহলে একাধিক আলোচনা চললেও, দু’জনের সম্পর্কটা এক্কেবারেই নিখুঁত। সচিনই যে কোহলির আদর্শ, তা বিভিন্ন সময় তাঁর কথায়, আচরণে প্রকাশ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে সচিন যখন বিদায় জানিয়েছিলেন, তখন বিরাটের থেকে তিনি এক অমূল্য উপহার পেয়েছিলেন। যা সচিনের চোখে জল এনে দিয়েছিল। সম্প্রতি মার্কিন সাংবাদিক গ্রাহাম বেন সিঙ্গারের ইউটিউব চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে সচিন একথা জানান।
সচিন বরাবরই ভীষণ আবেগপ্রবণ। সচিন নিজের দীর্ঘ ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্মৃতিচারণা করে ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার এখনও মনে আছে। আমি যখন আউট হয়ে গিয়েছিলাম, আমি জানতাম আর কোনওদিন ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামব না। আমি ড্রেসিংরুমে ফেরার পর ভীষণ ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। আমি সেখানে একটা কোনায় বসেছিলাম। মাথাতে তোয়ালে জড়িয়ে। কান্না মুছছিলাম তোয়ালে দিয়ে। বিরাট তখন আমার কাছে এসেছিল। এবং ওর বাবা ওকে একটা হাতে বাঁধার সুতো দিয়েছিল। সেটাই ও আমাকে দিয়েছিল। আমি কিছুক্ষণ সেটা আমার কাছে রেখেছিলাম। তারপর ওকে ফেরত দিয়েছিলাম। ওকে বলেছিলাম এটা অমূল্য। এটা তোমার সঙ্গেই থাকা উচিত, আর কারোর সঙ্গে এটা থাকার কথা না। নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এটা কাছে রেখো। ওই মুহূর্তটা খুব আবেগপ্রবণ ছিল। আজীবন আমার স্মৃতিতে থেকে যাবে।”
এর আগে কোহলি নিজেও গ্রাহাম বেন সিঙ্গারের ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনিও এই ঘটনার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমরা কবজিতে সুতো জড়িয়ে রাখি। ভারতে এটা অনেকেই করে থাকে। আমার বাবা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা একটা সুতো দিয়েছিল। ওটা আমি ব্যাগে রেখেছিলাম। তখন আমি ভেবেছিলাম আমার কাছে সবচেয়ে দামি এই উপহারটাই আছে। আমি সচিনকে বলি, এটা আমার বাবা আমাকে দিয়েছিলেন। আমি এর থেকে দামি কিছু তোমাকে দিতে পারব না। আমি জানি তুমি আমাকে কতটা অনুপ্রাণিত করেছো। আমার কাছে এবং বাকিদের কাছে তোমার জায়গাটা ঠিক কতখানি। আমার এই ছোট্ট উপহারটা তোমার জন্য়।”
ফলে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, কোহলির জীবনে সচিনের জায়গাটা ঠিক কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।