Supriya Pandit: ছিল না বুট কেনার টাকা, সন্তোষ জিতে এ বার নতুন টার্গেট সেট হুগলির সুপ্রিয় পণ্ডিতের

Sanath Majhi | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Jan 07, 2025 | 1:17 PM

Football: ছেলেবেলা থেকে খালি পায়ে ফুটবল খেলেছেন তিনি। নিয়মিত মাঠে কঠোর অনুশীলন করে গিয়েছেন। তার ফলও পেয়েছেন। সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের সুপ্রিয়র স্বপ্ন দেশের জার্সি গায়ে তুলে সকলকে গর্বিত করা।

Supriya Pandit: ছিল না বুট কেনার টাকা, সন্তোষ জিতে এ বার নতুন টার্গেট সেট হুগলির সুপ্রিয় পণ্ডিতের
Supriya Pandit: ছিল না বুট কেনার টাকা, সেই সুপ্রিয় পণ্ডিত এখন সন্তোষজয়ী

Follow Us

যে পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা, সেই বাড়ির ছেলে হয়ে ফুটবল খেলার স্বপ্ন যেন বিলাসিতা। অনেক কষ্টে ফুটবলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে পা বাড়িয়েছেন সুপ্রিয় পণ্ডিত (Supriya Pandit)। বাংলা ফুটবল টিমের সন্তোষজয়ী দলের সদস্য তিনি। ছেলেবেলা থেকে খালি পায়ে ফুটবল খেলেছেন তিনি। নিয়মিত মাঠে কঠোর অনুশীলন করে গিয়েছেন। তার ফলও পেয়েছেন। সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের সুপ্রিয়র স্বপ্ন দেশের জার্সি গায়ে তুলে সকলকে গর্বিত করা।

২০২৪ সালের শেষে কেরলকে ১-০ হারিয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতেছে বাংলার ফুটবল দল। সেই টিম বাংলার মাটিতে পা রাখার পরই বিভিন্ন মহল থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে দলের ফুটবলারদের। বাংলা দলকে যাঁরা সন্তোষ ট্রফি জিতিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হল হুগলির নালিকুলের বন্দিপুর গ্রামের বছর ২৮ এর সুপ্রিয় পণ্ডিত।

দারিদ্রতাকে জয় করে স্বপ্ন সফল হয়েছে হুগলির হরিপালের বন্দিপুর গ্রামের ছেলে সুপ্রিয় পণ্ডিতর। আগামীর লক্ষ্য এখনই ঠিক করে ফেলেছেন তিনি। ছেলের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না সুপ্রিয়র বাবা, মা।

এই খবরটিও পড়ুন

গ্রামের সকলে সুপ্রিয়কে বাবাই নামেই চেনে। এখন হুগলির গৌরব বাংলার এই তরুণ ফুটবলার। তবে সুপ্রিয়র এই ফুটবল আঁকড়ে বেড়ে ওঠা ও সাফল্যের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। ভালো জুতো কিনে দেওয়ার মত সামর্থ ছিল না সুপ্রিয়র বাবার। তাই ছেলেবেলা থেকেই মাঠে খালি পায়ে অনুশীলন করতেন সুপ্রিয়। পেশায় তাঁর বাবা ভাগ চাষী।ফলে কোনও রকমে সংসার চলত তাঁদের। ধীরে ধীরে ভালো খেলার সুবাদে সুপ্রিয়র সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল প্রথমে রেনবো, ভবানীপুর তারপর পিয়ারলেস দলে। সেখানে তিন বছর ধরে খেলেছেন সুপ্রিয়। বর্তমানে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

কলকাতার দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের খেলা দেখতে ছেলেবেলা থেকেই ভালোবাসতেন সুপ্রিয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। যখনই সময় পেতেন তিনি, মাঠে গিয়ে ফুটবল নিয়ে প্র্যাকটিস করতেন। তবে তাঁর এই খেলা মোটেও ভালোভাবে নিত না তাঁর পরিবার। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সেখানে ইতি টানতে হয়েছিল তাঁকে। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে আর তাঁর লেখাপড়া হয়নি। তাঁর বাবা কাশীনাথ ও মা কৃষ্ণা পণ্ডিত ছেলেকে ফুটবল খেলতে দেখলেই বকাবকি করতেন। ছেলে যে ফুটবল খেলে বড় নাম করবে, সেটা ছিল তাঁদের কাছে স্বপ্নাতীত।

ছেলেবেলা থেকেই সুপ্রিয় ছিলেন জেদি। বাবা মায়ের বকাবকি সত্ত্বেও চালিয়ে গিয়েছিলেন নিজের খেলা। বিভিন্ন জায়গায় খেলে তাঁর ঝুলিতে আসতে থাকে একাধিক পুরস্কার। প্রথম প্রথম তাঁর মা ছেলের খেলাধুলা মেনে নিতে না পারলেও পরবর্তীতে ছেলেকে উৎসাহ দিতে শুরু করেন। ছেলে খেলতে গিয়ে কোথাও চোট আঘাত লাগলে তা দেখেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতো বাবা মায়ের। এখন ছেলের খেলা দেখা মিস করেন না বাবা মা। ছেলের খেলা আছে জানতে পারলেই কাজকর্ম সেরে বসে পড়েন টিভির সামনে।

সুপ্রিয়র কোচ সুবিমল সিনহা। তাঁর হাত ধরে প্রথমে মানকুন্ডু ও বর্তমানে বৈদ্যবাটি কৃষ্টিচক্রের মাঠে প্র্যাকটিস করেন সুপ্রিয়। তিনি জানান, ছেলেবেলা থেকেই কষ্ট করে বাবা তাঁকে মানুষ করেছে। এ বার সন্তোষ ট্রফিতে খুব কঠিন টিম ছিল তাঁদের গ্রুপে। সেখানে কাশ্মীর, রাজস্থান, তেলেঙ্গনার মত কঠিন দল অংশগ্রহণ করেছিল। সেমিফাইনালেও লড়াই ছিল কঠিন। প্রতিপক্ষ যতই শক্ত হোক না কেন, ছাড়ার পাত্র ছিলেন না সুপ্রিয় ও তাঁর সতীর্থরা। বাংলা দলের সকলের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরি ঘোষণা করেছেন। এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিয়। তবে দু’চোখে তাঁর স্বপ্ন ভারতীয় ফুটবল টিমে খেলার।

ছেলের সাফল্যে আপ্লুত সুপ্রিয়র মা। চোখে জল নিয়ে কৃষ্ণা পণ্ডিত বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। মেরেছি, বকেছে তবু খেলা ছাড়োনি। এখন ছেলে অনেক ভালো জায়গায় পৌঁছেছে। আর সেটা দেখেই আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এখন চাই ছেলে অনেক বড় হোক।’

সুপ্রিয়র বাবা কাশীনাথ পণ্ডিতও ছেলের সাফল্যে চোখের জল ধরে রাখতে পারননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। সংসার চালাতে পারতাম না। ছেলের জন্য একটা বুট কেনার পয়সাও ছিল না। বই কেনার পয়সাও ছিল না। অন্যের জমিতে চাষ করতাম। ওকে অনেক বকাবকি করেছি। আজ ছেলে অনেক বড় হয়েছে। খুব আনন্দ হচ্ছে।’

 

Next Article