মনবীর-বিপিনদের নতুন ভারতের সূর্যোদয়

Mar 25, 2021 | 9:39 PM

ওমানের বিরুদ্ধে ভারতীয় জার্সিতে ১০ ফুটলারের অভিষেক হয়। ভারতীয় ফুটবলে যা রেকর্ড।

মনবীর-বিপিনদের নতুন ভারতের সূর্যোদয়
সৌজন্যে-ইন্ডিয়ান ফুটবল টিম টুইটার

Follow Us

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

ওমান-১ : ভারত-১
(চিংলেনসানা-আত্মঘাতী ৪৩) (মনবীর ৫৫)

অস্ট্রেলিয়া সফর এবং ইংল্যান্ড সিরিজ যদি ফিরে দেখা হয়, একঝাঁক তরুণের অবিস্মরণীয় উত্তরণের কাহিনি শুনতে হবে। মহম্মদ সিরাজ, ঋষভ পন্থ, শুভমন গিল, ওয়াশিংটন সুন্দরদের ভারতকে এখন অনেকেই ‘নতুন ভারত’ বলে ডাকছে।

বিপিন সিং (Bipin Singh), মনবীর সিংদের (Manvir Singh) এই ভারতকে কী বলা উচিত? র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা টিম মানে, এতদিন হারের গল্প শোনাত। সেই কবে থেকে ‘দারুণ খেলিয়া পরাজিত’র নানা ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ফুটবলমহল। সুনীল ছেত্রী, সুব্রত পাল, গৌরমাঙ্গি সিংদের সময় একটু একটু করে পাল্টাতে শুরু করেছিল ভারতীয় ফুটবল। তা-ই এখন যেন সামগ্রিক ছবি পাচ্ছে। আকাশ মিশ্রর নাম শুনেছেন আগে? সুরেশ সিং ওয়াংজামকে চিনতেন? বিপিন, চিংলেনসানা কিংবা জিকসন, আশুতোষ মেহতা? প্রথম একাদশে ছয় নতুন মুখ। এই তাঁরাই যেন ঋষভ, শুভমনদের মতো নতুন ভারতের জয়গান শোনাচ্ছেন!

র‍্যাঙ্কিংয়ের হিসেবে যাওয়ার দরকারই নেই। ইতিহাস বলছে ওমান এর আগে হাফডজন ম্যাচে ৫টাই জিতেছে ভারতের বিরুদ্ধে। দুবাইয়ের মাঠে তারা যে ফালাফালা করে দেবে ভারতকে, তেমনই ভেবে রেখেছিলেন অনেকে। যাঁরা ভেবেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বিপিন, সুরেশ, মনবীরদের চিনতেন না। আজ থেকে চিনবেন। জানবেন, এই ‘নতুন ভারত’ যেমন ঘুরে দাঁড়াতে জানে, তেমনই পারে স্বপ্ন দেখাতে। তাঁদের হাত ধরেই ওমানের মতো টিমের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করল ভারত।

 

 

প্রথমার্ধের নিরিখে ওমানই ছিল মাঠে। ভারতের অর্ধে, প্রায় পুরো ৪৫ মিনিট। পাল্টা আক্রমণ, বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা, বল পজেশন— ভারতের ঝুলিতে কার্যত কিছুই ছিল না। উল্টে ওমান বারবার হানা দিচ্ছিল ভারতের বক্সে। চাপ রাখতে না পেরে একেবারে শেষ মুহূর্তে ০-১ হয়ে যায় ভারত। একটা থ্রু ধরে জাহির আল আঘবারি ভারতের বক্সে ঢুকেই জোরালো শট নেন। কিপার অমরিন্দর যা আটকাতে পারেননি। চিংলেনসানার শরীরে লেগে বল জালে জড়িয়ে যায়। এই আত্মঘাতী গোল না হলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারত।

 

 

কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে পিছিয়ে থাকা ভারত বরাবরই নির্বিষ হয়ে পড়ে। ফিরে আসার দুরন্ত কাহিনি খুব বেশি শোনা যায় না। বিশেষ করে যে টিমে আবার সুনীল ছেত্রীর মতো স্ট্রাইকার নেই। বিপিন, মনবীররা বোধহয় এত ‘নেই’-কেই মোটিভেশন হিসেবে নিয়ে নিয়েছিলেন। কোচ ইগর স্টিমাচ বিরতিতে কী বলে থাকতে পারেন ফুটবলারদের? হয়তো বলেছিলেন, খেলো মন খুলে, রেজাল্ট নিয়ে ভেবো না। স্টিমাচও বোধহয় জানতেন তাঁর টিমে যত নতুন মুখ, ফিরে আসার স্বপ্ন তত বেশি। এই ‘নতুন ভারত’ পাল্টা দিতে জানে।

 

 

বিরতির ১০ মিনিটের মধ্যে ভারত ধাক্কা দিল ওমানকে। ৫৫ মিনিটের মাথায় আশুতোষ মেহতার লম্বা বল বিপিনকে খুঁজে নিয়েছিল। বক্সের ডান দিক থেকে বিপিনের তোলা নিখুঁত ক্রস থেকে ড্রপ হেডে গোল মনবীরের।

আইএসএলের ফাইনালে মুখোমুখি খেলা বিপিন ও মনবীর এ মরসুমের আবিষ্কার। মনবীর যেমন সুপার সাব হিসেবে নেমে এটিকে মোহনবাগানের অনেক ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। প্রথম ডার্বিতে দুরন্ত গোলও করেছিলেন। আর বিপিন, মুম্বইকে আইএসএল ফাইনাল দিয়েছিল তাঁর দুরন্ত গোলই। ভারতকে সমতায় ফেরাল বিপিন-মনবীর জুটিই।

আরও পড়ুন: নিয়মরক্ষার ম্যাচেও হার সাদা-কালো ব্রিগেডের

ওমান লড়াই করে। মাঠ দখলে রাখে ওমান। ওমান গোল চেনে। ওমান ছাড়খাড় করে দেয় বিপক্ষকে। এই ওমানও বোধহয় বৃহস্পতি-রাত থেকে মেনে নেবে এক ‘নতুন ভারত’এর সূর্যোদয় হয়েছে। যে ভারতকে হারতে হারতেও ফিরে আসতে জানে।

ভারত: অমরিন্দর, আশুতোষ, আকাশ, চিংলেনসানা, সন্দেশ, সুরেশ, রাওলিন, জিকসন, আশিক, বিপিন, মনবীর।

Next Article