Lionel Messi: মরুদেশে কাপ ও মরিচিকার মাঝে মেসি…
Argentina: সব ভালোর মধ্যে একটাই প্রশ্ন। মেসির শেষ বিশ্বকাপ শ্রেষ্টত্বের, নাকি বিশ্বকাপের ট্রফিটা মরিচিকাই থেকে যাবে।
দীপঙ্কর ঘোষাল
মনে হচ্ছে এই তো, সামনেই। চাইলেই হাতে তোলা যায়…। আদতে তা নয়। তার জন্য জিততে হবে। আরও তিনটে ধাপ পেরোতে হবে। অসম্ভব নয়, আবার অসম্ভবের চেয়ে কমও নয়। কাপ আর ঠোঁটের দূরত্ব! সে তো আগেই টের পেয়েছেন লিওনেল মেসি। সেই ২০১৪ সালে। তখনই বিশ্ব ফুটবলে তারকা। দিয়েগো মারাদোনার পর তাঁকে নিয়ে এত প্রত্যাশা। অনেক আশা, আকাঙ্খা নিয়ে ফাইনালে পৌঁছনো। জার্মানির বিরুদ্ধে সেই ফাইনাল এখনও আফশোসের জায়গা আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল মেসির। পরিবর্ত ফুটবলার মারিও গোৎজের বুটের টোকায় স্বপ্নভঙ্গ আর্জেন্টিনার। লিও মেসিরও। ক্লাবের হয়ে সেরা, জাতীয় দলে ব্যর্থ। এমন অপবাদ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। কোপা আমেরিকা জিতে কিছুটা হলেও সেই অপবাদ ঘোঁচাতে পেরেছেন লিও। কিন্তু বিশ্বকাপের ট্রফি ছাড়া শ্রেষ্টত্ব অসম্পূর্ণ থাকে যে! এ বার কি সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে?
প্রশ্ন তোলা সহজ, উত্তর পাওয়া কঠিন। কাতার বিশ্বকাপের শুরুতে কে-ই বা ভেবেছিল আর্জেন্টিনার শুরু এমন ভয়ঙ্কর হবে! দু-বারের বিশ্বকাপ জয়ী, টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত। লিও মেসির পেনাল্টি গোলে এগিয়ে থেকেও ১-২ ব্যবধানে হার। সৌদি আরবের কাছে এমন পরিণতি এক দিকে যেমন বিরাট ধাক্কা ছিল, তেমনই সতর্কবার্তাও। ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনা। জবাব দিয়েছে পারফরম্যান্সে। তবে আসল লড়াইটা যেন এখন শুরু। নকআউট পর্বে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। একটা ছোট্ট ভুলে সব তলিয়ে যাবে মরুদেশের চোরাবালিতে।
মেসির জন্য আর্জেন্টিনা নাকি আর্জেন্টিনার জন্য মেসি! একে অপরের পরিপূরক। ২০১৫ এবং ২০১৬। পরপর দু-বার। কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও হার। দুটোই টাইব্রেকার। প্রতিপক্ষও এক, চিলি। ২০১৫-র পেনাল্টি শুটআউটে মেসি গোল করলেও, পারেননি গঞ্জালো হিগুয়েন, এভার বানেগা। ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা আরও অস্বস্তির। ফুটবলের চেয়ে মারামারিই যেন বেশি হয়েছিল। লাল কার্ড দেখেছিলেন আর্জেন্টিনার মার্কোস রোহো, চিলির মার্সেলো দিয়াজ। নির্ধারিত সময় গোলশূন্য। টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে জেতে চিলি। পেনাল্টি মিস করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মেসি। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন অবসর। তাঁর মান ভাঙাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থাকে। পরে অবসর ভেঙে ফিরে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়। ফুটবলার এবং অধিনায়ক মেসি ভরসা দিয়েছিলেন কোপায়। তাও আবার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে। টুর্নামেন্টে যুগ্মভাবে সর্বাধিক গোলস্কোরার হয়েছিলেন লিও মেসি। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও তাঁর ঝুলিতে। সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতে, জিতিয়ে প্রত্যাশার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মেসি।
কোপা এবং বিশ্বকাপের ফারাক অনেক। এখানে ইউরোপের সেরা দলগুলিও রয়েছে। এখনও অবধি মাত্র দুটি গোল করলেও মেসির পারফরম্যান্স খুবই ভালো। সবচেয়ে বড় দিক, আত্মবিশ্বাস। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর পেনাল্টি রুখে দেন সেজনি। মেসি হতাশায় ডুবে যাননি। পরের মুভেই চেষ্টা করেছেন আরও একটা গোলের পরিস্থিতি তৈরি করার। দলের তরুণ ফুটবলারদের ভরসা দিতে পেরেছেন। মেসির আলোয় তরুণরাও ভালো খেলছেন। জুলিয়ান আলভারেজ, এনজো ফার্নান্ডেজ, ম্যাক অ্যালিস্টার এ বারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিশেষ প্রাপ্তি।
সব ভালোর মধ্যে একটাই প্রশ্ন। মেসির শেষ বিশ্বকাপ শ্রেষ্টত্বের, নাকি বিশ্বকাপের ট্রফিটা মরিচিকাই থেকে যাবে।