Diego Maradona: আজ বিশ্ব জুড়ে শুধুই মারাদোনা-আরাধনা

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Nov 25, 2021 | 10:17 AM

স্মৃতি কখনও সুখের হয়। স্মৃতি কখনও দুঃখ দেয়। মারাদোনা সুখেও আছেন, দুঃখেও আছেন। বলা উচিত, মারাদোনা না থেকেও আছেন বলেই হয়তো আজও অসম্ভবের পিছনে ছুটতে জানে পৃথিবী! এই দুনিয়া আর ফুটবল যতদিন থাকবে, মারাদোনাও থেকে যাবেন! ঈশ্বর আবার কখনও মারা যান নাকি!

Diego Maradona: আজ বিশ্ব জুড়ে শুধুই মারাদোনা-আরাধনা
Diego Maradona: আজ বিশ্ব জুড়ে শুধুই মারাদোনা-আরাধনা (ছবি-টুইটার)

Follow Us

অভিষেক সেনগুপ্ত

বিশ্বকাপ হাতে সেই ছবি আজও অমলিন। আটের দশকের সেরা মুহূর্ত হয়ে থেকে গিয়েছে। বুয়েনস আইরেসের শহরতলি কিংবা নাপোলির অলিতে গলিতে দিয়েগো নামের কত বাচ্চা যে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। রাস্তায় কাগজের বল নাচানো ঝাঁকড়া চুলের এক কিশোর কখন যে ঈশ্বর হয়ে গিয়েছিলেন, কে জানে! ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির বাঁ পায়ের জাদুতে আজও মোহিত ফুটবল দুনিয়া। যিনি মার খেতে খেতে একাই বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে (Argentina)। ইতালির নাপোলিকে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব করে তুলেছিলেন। যেন সংগ্রামী মানুষের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা (Diego Maradona)!

এক বছর আগে, ২৫ নভেম্বরই মারা গিয়েছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। ৬০ বছরের মারাদোনার মৃত্যুর খবরে চমকে উঠেছিল সব প্রজন্ম, সব পেশার মানুষ। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাই মারাদোনা-স্মরণে মন মেলাচ্ছেন বুয়েনস আইরেস থেকে কলকাতা। আর্জেন্টিনা তাঁকে আজও ভোলেনি। ভুলবেও না ‘পেলুসা’কে। রোসারিওর সেই ‘ইগলেসিয়া মারাদোনিয়ানা’, যা আসলে ভক্তদের তাঁকে ঈশ্বররূপে বরণ করে বানানো চার্চ, সেখানে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হবে। বুয়েনস আইরেসের সব দেওয়াল হয়ে যাবে মারাদোনার ঝাঁকড়া চুলের নরম মুখ। যাঁর ভীষণ প্রিয় ছিল আকাশ-নীল রং। সেই রংই গালে মেখে মারাদোনা স্মরণ করবেন প্রবীণ থেকে নবীণ।

এজেকুইল রোসি নামের এক স্কুল টিচার বলেছেন, ‘দিয়েগো আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। অনেক স্মৃতি। ভাবতে অবাক লাগে, একটা বাচ্চা নিঃস্ব অবস্থা শুরু করেছিল জীবন। সে পায়নি এমন কিছু ছিল না। আমাদেরও স্বপ্নপূরণ করে দিয়েছিল। দিয়েগোই বোধহয় শিখিয়ে দিয়েছিল, আমরা চাইলে যা ইচ্ছে করতে পারি।’

সাফল্য যাঁকে ঘিরে থেকেছে, খ্যাতি যাঁকে আষ্টেপৃষ্টে রেখেছে, কোথাও তাঁর পা দেওয়া মানে জনবিস্ফোরণ হওয়া, যাঁকে এক বার ছুঁয়ে দেখার আর্তি নিয়ে পৃথিবীর কোন অজানা কোণ থেকে কেউ ছুটে গিয়েছেন আর্জেন্টিনা, সেই তিনি বিতর্কেরও মুখ। মাদক সেবনের জন্য প্রবল সমালোচিত। এতটাই যে বিশ্বকাপ থেকে নির্বাসিত হওয়ায় ধিক্কৃত। তবু কী মহিমা সাড়ে পাঁচ ফুট ছুঁইছুঁই সে মানুষের। ফুটবলকে বুঝতে হলে, ভাবতে হলে, খেলতে হলে মারাদোনাকে অস্বীকার করা যাবে না! মারাদোনা গ্রহণ করলে তবেই ফুটবলকে জায়গা দেওয়া যাবে মনে।

আলেজান্দ্রো স্তেরেলির কথাই ধরা যাক। মারাদোনারই সমবয়সী ওই ভদ্রলোক আজও মারাদোনায় আচ্ছন্ন। ‘আমার জীবনে ওর কী যে প্রভাব, বলে বোঝাতে পারব না। আর সেই কারণে প্লেয়ার মারাদোনার সঙ্গে মানুষ মারাদোনাকে মিশিয়ে ফেলি না।’

১৩ বছর আগে, ২০০৮ সালে এই কলকাতায় প্রথম পা দিয়েছিলেন মারাদোনা। রাত আড়াইটের বিমান থেকে নেমে এসেছিল জীবন্ত স্বপ্ন! হাফহাতা জামা পরা, দু’হাতে ঘড়ি, কানে হিরের দুল আর দু’চোখে একরাশ ঘুম নিয়ে। দমদম বিমানবন্দর সেলিব্রিটি দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু মারাদোনা কখনও দেখেনি। কলকাতা ফুটবলের জন্য পাগল। অনেক দিন আগে মনে ঠাঁই দিয়েছিল পেলেকে। কিন্তু মারাদোনাকে তো দেখেনি! সারা শহর সেদিন একআকাশ বিমানবন্দরে তলায় অপেক্ষা করেছিল। আর তিনি, এই দৃশ্যই বোধহয় দেখতে চেয়েছিলেন। না হলে মার্সিডিজের মাথায় উঠে পড়তেন না। ডানহাত মুঠো করে বুকের বাঁ দিক ঠুঁকে বোঝাতেন না, আমিই তোমাদের মারাদোনা!

যখনই প্রসঙ্গ ওঠে, অনেকেই জানতে চান, আচ্ছা এই শহরে এসে সেই যে পায়ের ছাপ দিয়ে গিয়েছিলেন মারাদোনা, সেটা কোথায়? জোকায় গিয়ে আর খুঁজে পাওয়া যায় না মারাদোনার বাঁ পায়ের ছাপ! কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছে, কোথায় যে খোয়া গিয়েছে, কোথায় যে অবহেলায় পড়ে রয়েছে, কে জানে! কোনও এক জন্মদিনে তা হয়তো ফিরে আসবে। আর সে দিন ঈশ্বরের ‘জীবন্ত’ পায়ের ছাপ আরও একবার দেখার জন্য ভিড় করবে কলকাতা। ২০০৮ সালের সেই রাতের মতো!

স্মৃতি কখনও সুখের হয়। স্মৃতি কখনও দুঃখ দেয়। মারাদোনা সুখেও আছেন, দুঃখেও আছেন। বলা উচিত, মারাদোনা না থেকেও আছেন বলেই হয়তো আজও অসম্ভবের পিছনে ছুটতে জানে পৃথিবী! এই দুনিয়া আর ফুটবল যতদিন থাকবে, মারাদোনাও থেকে যাবেন! ঈশ্বর আবার কখনও মারা যান নাকি!

Next Article