Cyclone Freddy: অস্ট্রেলিয়া থেকে জিম্বাবোয়ে! ৩৩ দিন পরও ‘বেঁচে’ রেকর্ডভাঙা ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডি

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়

Mar 10, 2023 | 11:43 AM

Longest-lasting Tropical Cyclone: ৬ ফেব্রুয়ারি ঘূর্ণিঝড় তকমা পায় ‘ফ্রেডি’। তখন অবস্থান ইন্দোনেশিয়া-অস্ট্রেলিয়া লাগোয়া ভারত মহাসাগর। তার পর ক্রমাগত পশ্চিমে সরেছে ‘ফ্রেডি’। এখন থেকে দীর্ঘায়ু ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় পয়লা নাম ফ্রেডিরই। এর আগে নজির ছিল ২৯ বছর আগের ঘূর্ণিঝড় ‘জন’-এর।

Cyclone Freddy: অস্ট্রেলিয়া থেকে জিম্বাবোয়ে! ৩৩ দিন পরও বেঁচে রেকর্ডভাঙা ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডি
নাছোড় এক ঘূর্ণিঝড়। লয় নেই, ক্ষয় নেই। নাম, ‘ফ্রেডি’। বয়স, ৩৩ দিন!

Follow Us

কমলেশ চৌধুরী

‘আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ে, ঝড় এল রে আজ।’ সপ্তাহখানেক ধরে খরাপ্রবণ মোজাম্বিক-মাদাগাস্কারের যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে রবি ঠাকুরের এই গান! নেপথ্যে, নাছোড় এক ঘূর্ণিঝড়। লয় নেই, ক্ষয় নেই। নাম, ‘ফ্রেডি’। বয়স, ৩৩ দিন!

৩৩ দিন? এতদিন বাঁচে নাকি কোনও ঘূর্ণিঝড়?

রেকর্ডের খাতা বলছে, বাঁচে না। ঘূর্ণিঝড়ের এমন লম্বা ইনিংস আজ পর্যন্ত দেখেনি দুনিয়া। এখন থেকে দীর্ঘায়ু ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় পয়লা নাম ফ্রেডিরই। এর আগে নজির ছিল ২৯ বছর আগের ঘূর্ণিঝড় ‘জন’-এর। জন্ম হয়েছিল উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে, তাই শুরুতে ‘হারিকেন’ তকমা দেওয়া হয়। পরে উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে ঢুকে পড়ে ‘জন’, তাই জোটে ‘টাইফুন’ তকমাও। শেষমেশ ৩১ দিন পর্যন্ত টিকেছিল জন। সেই রেকর্ড ভেঙে গেল। পাকাপাকি সিলমোহর দিতে তদন্ত কমিটিও বসিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।

ঘূর্ণিঝড় ‘জন’ ১৩,২৮০ কিলোমিটার পেরিয়েছিল। গোটা পথে কোনও স্থলভাগ না পড়ায় বিরাট কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বৃষ্টিবাদলা আর অল্পবিস্তর ঝোড়ো হাওয়া ছাড়া তেমন কিছু টের পায়নি হাওয়াই দ্বীপ। ‘ফ্রেডি’ এত স্বস্তি দেয়নি। উল্টে ক্ষতির মাসুল গুনেই চলেছে আফ্রিকা।

৬ ফেব্রুয়ারি ঘূর্ণিঝড় তকমা পায় ‘ফ্রেডি’। তখন অবস্থান ইন্দোনেশিয়া-অস্ট্রেলিয়া লাগোয়া ভারত মহাসাগর। তার পর ক্রমাগত পশ্চিমে সরেছে ‘ফ্রেডি’। ভারত মহাসাগর আড়াআড়ি পেরিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আছড়ে পড়ে মাদাগাস্কারে। এর ঠিক তিন দিন পর ‘ফ্রেডি’র ল্যান্ডফল আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে, মোজাম্বিকে। সাধারণত, স্থলভাগে ঢুকে পড়লে ক্রমাগত শক্তি হারায় যে কোনও ঘূর্ণিঝড়। ‘ফ্রেডি’র ক্ষেত্রে তা হয়নি। উল্টে জিম্বাবোয়ে থেকে প্রায় ইউ-টার্ন নিয়ে আবার সাগরে প্রত্যাবর্তন হয়। ফের পৌঁছে যায় মাদাগাস্কারের কাছে। পূর্বাভাস বলছে, আরও একবার মোজাম্বিকে আছড়ে পড়বে ‘ফ্রেডি’।

কোনও ভূখণ্ডে একই ঘূর্ণিঝড়ের এমন বারবার হামলা বিরল বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। এই ঘটনা কিছুটা হলেও মনে পড়িয়ে দিচ্ছে ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনকে। পারাদ্বীপে আছড়ে পড়ার পর ওড়িশার জাজপুর লাগোয়া এলাকার উপর দীর্ঘক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়েছিল সুপার সাইক্লোন। আসলে জোড়া উচ্চচাপ বলয়ের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় কিছুতেই এগোতে পারেনি ঘূর্ণিঝড়। পরে আবার বঙ্গোপসাগরে ফিরে যায় সুপার সাইক্লোন। তার পরই তাণ্ডবে দাঁড়ি পড়ে।

‘ফ্রেডি’র জীবনে দাঁড়ি পড়তে-পড়তে আরও অন্তত ১-২ দিন। তার আগেই অজস্র নজির গড়ে ফেলেছে ফেব্রুয়ারির ঘূর্ণিঝড়। ভারত মহাসাগরের দীর্ঘ যাত্রাপথে ক্যাটেগরি ফাইভ হারিকেনের তকমা পেয়েছে ‘ফ্রেডি’। সে সময় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছে ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটারেও। অর্থাত্‍, ২৪ বছর আগে পারাদ্বীপ সুপার সাইক্লোনের চেয়েও শক্তিশালী। রেকর্ডের খাতা বলছে, আজ পর্যন্ত কোনও ঘূর্ণিঝড় ৬ বার দ্রুতহারে শক্তিবৃদ্ধির নজির গড়তে পারেনি। ‘ফ্রেডি’ পারল। যে কোনও ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা আর স্থায়িত্ব বিচার করে ‘অ্যাকুমুলেটেড সাইক্লোন এনার্জি’ মাপেন আবহবিদরা। সমুদ্র থেকে কতটা শক্তি শুষে নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, তারই প্রতিফলন মেলে ‘অ্যাকুমুলেটেড সাইক্লোন এনার্জি’র অঙ্কে। এই নিরিখে ২০০৬ সালের হারিকেন আইওকের পরেই থাকবে ‘ফ্রেডি’।

এ যেন একাই একশো! কোন জাদুবলে এমন দীর্ঘায়ু-প্রাপ্তি?

আইআইটি বম্বের অধ্যাপক গুড্ডু মুর্তুগুড্ডের ব্যাখ্যা, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের রসদ আসে সমুদ্র থেকে। গোটা পথে ভারত মহাসাগরের জলতলের তাপমাত্রা যথেষ্ট বেশি ছিল। বিশেষ করে যে অংশ ধরে ‘ফ্রেডি’ এগিয়েছে। শুধু এ বছর নয়, কয়েক দশক ধরেই ওই তল্লাটে জলতলের তাপমাত্রা বেশি থাকছে। সাধারণত স্থলভাগে ঢোকার পর ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়, কিন্তু মাদাগাস্কারের আকার খুব একটা প্রতিকূলতা তৈরি করতে পারেনি।’’ একই কথা পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কলের মুখেও। রক্সির কথায়, ‘‘এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ভারত মহাসাগরের গরম জল যে ক্রমাগত জলীয় বাষ্প জুগিয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’’

জ্বালানির নিরন্তর জোগান ‘জন’কে পিছনে ফেলে এগিয়ে দিল ‘ফ্রেডি’কে। আর টানা বিপদের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল আফ্রিকাকে। কী বলা যায় একে? প্রকৃতির প্যাঁচ?

Next Article