Microplastics: আমাদের জীবনে প্রতিটা পদক্ষেপে প্লাস্টিকের ব্যবহার। সবজি কিনতে যাই, মুদিদ্রব্য কিনতে যাই আর রেস্তোরাঁর কোনও খাবার বাড়িয়ে নিয়ে আসি, যা কিছুই বহন করি না কেন প্লাস্টিক আমাদের দরকারই। দিনের পর দিন যথেচ্ছ ভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করতে-করতে আমরা যেন পরিবেশটাকেই বিষিয়ে তুলছি। এখন অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক যে, গবেষণায় বলা হচ্ছে একটি শিশু তার জন্মের পরের লগ্ন থেকেই পুরুষত্বহীন হওয়ার দিকে ঝুঁকছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটির তরফে করা গবেষণায় খাবারে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করার জন্য দুই ধরনের খাবারের আইটেম সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে একটি ছিল প্লাস্টিকে মোড়া এবং অপরটিতে কোনও প্লাস্টিকের আবরণ ছিল না।
এখন যে খাবারটি প্লাস্টিকে প্যাক করা ছিল, তাতে প্রায় 2.30 লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় খাবারের আইটেমটি, যাতে প্লাস্টিকের আবরণ ছিল না, সেটায় দেখা গিয়েছে 50,000 মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ছিল। গবেষকরা দাবি করছেন, এই রকম পরিমাণে যদি মাইক্রোপ্লাস্টিক বের হতে থাকে শুধু প্যাক করা খাবারগুলি থেকেই, তাহলে প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন 10 গ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রাস করছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (NIN) এর গবেষণা অনুসারে, প্লাস্টিকের পাত্রে সঞ্চিত খাবার খাওয়ার পরে গর্ভবতী মহিলারা সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের জন্য প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার খাওয়া এতটাই ভয়ঙ্কর যে, তার বিষ তাঁদের শিশুর শরীরেও পৌঁছে যেতে পারে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক কী
প্লাস্টিকের অতি সূক্ষ্ম কণাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। প্রতি সপ্তাহে গড়ে 0.1 থেকে 5 গ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন উপায়ে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। একজন ব্যক্তি প্রতি বছর গড়ে 11,845 থেকে 1,93,200 মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা গ্রহণ করেন, যা প্রকৃত অর্থে 7 গ্রাম থেকে 287 গ্রাম পর্যন্ত। এখন বুঝতেই পারছেন, মানুষের জীবন কতটা প্লাস্টিক নির্ভর হয়ে যাচ্ছে।
কেন মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের অসুস্থ করে তুলছে?
খাবার বা জল মজুত রাখতে আমরা যে প্লাস্টিকের পাত্র বা বোতল ব্যবহার করি, সেগুলি তৈরি হয় পলিকার্বোনেট প্লাস্টিক থেকে। সেই প্লাস্টিককেই নমনীয় করার জন্য তাতে যোগ করা হয় বিসফেনল এ বা BPA। এটি শিল্পে ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক। দিল্লির আইসিএমআর এবং হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন (এনআইএন) এর গবেষকরা দেখেছেন যে, গর্ভাবস্থায় বিপিএ রাসায়নিকগুলি একজন শিশুর ফার্টিলিটি সিস্টেমের উপর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইঁদুরের উপরে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। তার জন্য গর্ভবতী ইঁদুরদের দুটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। একটি গ্রুপ গর্ভাবস্থায় চার থেকে 21 দিনের জন্য BPA রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসেছিল এবং অন্য গ্রুপকে এর থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। ফ্যাটি অ্যাসিড BPAর কাছাকাছি বসবাসকারী ইঁদুরগুলিতে জমা হতে শুরু করে। এই ফ্যাটি অ্যাসিডকে শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য মেমব্রেন বা পর্দার চারপাশে ক্ষতি করতে দেখা গিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মলিকুলার সায়েন্সে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে, বিপিএ রাসায়নিক হরমোনকে প্রভাবিত করে এবং ক্যানসার ও বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। কিন্তু এখন জন্মের আগেই প্লাস্টিক একজন শিশুর স্বাস্থ্যকে ভয়ানক ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এনআইএন-এর গবেষণা অনুসারে, প্রত্যেক মানুষের বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত। এই ধরনের পাত্রে জায়গা অনেক বেশি ধরে ঠিকই, তবে আপনি যখন সেটিকে মাইক্রোওয়েভে ঢুকিয়ে গরম করছেন, তখন সেই প্লাস্টিক থেকে খাবারে বিপিএ রাসায়নিকের প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশনের প্রধান গবেষক ড. সঞ্জয় বসাক বললেন, “একটি রান্নাঘরে দুই ধরনের প্লাস্টিক থাকে। তার মধ্যে একটি হল ডিসপোজ়েবল জলের বোতল বা প্যাকেজিং প্লাস্টিক এবং অন্যটি প্লাস্টিকের পাত্র যার উপর ফুড গ্রেড বা BPA বিনামূল্যে উল্লেখ করা হয়। সংস্থাগুলি দাবি করে যে, বিপিএ-মুক্ত ফুড-গ্রেড প্লাস্টিক কোনও ক্ষতি করে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এর সঙ্গে এক্কেবারেই সহমত নন।”
মাইক্রোপ্লাস্টিক মূলত যেখানে দেখা যায়
1) মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলি সাধারণত কলের জলে এবং প্লাস্টিকের বোতল বা প্যাকেজ দ্বারা সংরক্ষিত জলে পাওয়া যায়। পরিবেশে বিদ্যমান প্লাস্টিক বর্জ্য মাটি, তার নিচে, সাগর ও নদীতে পর্যন্ত মিশে গিয়েছে।
2) ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটির গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন খেলনা এবং কাপড় থেকে 7000 মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে।
আপনার দৈনন্দিন জীবন থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক মুক্ত রাখবেন কীভাবে
* রান্না করা খাবার কখনও প্লাস্টিকের কন্টেনারে রাখবেন না।
* মাইক্রোওয়েভিং প্লাস্টিক ব্যবহার করবেন না।
* প্লাস্টিকের পরিবর্তে স্টিল বা কপারের বোতল থেকে জলপান করুন।
* আপনার বাড়ির নিকটবর্তী আবর্জনা ফেলার জায়গায় কখনও প্লাস্টিক ফেলবেন না। এটি পুনর্ব্যবহারকারী সংস্থাকে দিন বা আলাদাভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য নিক্ষেপ করুন।
* প্লাস্টিক যখন আবর্জনার সঙ্গে মিশে যায়, তখন তা পুনর্ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
* সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ভারত প্রতি বছর 3.5 মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন করে। আর সেই জায়গায় আমাদের প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করার ক্ষমতা তার অর্ধেকেরও কম।