AI Blackmail: গোপন ছবি ফাঁসের হুমকি AI-এর! শুরু হল নতুন আতঙ্ক?
যদি আপনার গোপন মুহূর্তও ফাঁস করে দেয় আপনার মোবাইলে থাকা AI? তখন কী হবে? যে AI অ্যাপের কাছ থেকে আপনি দিনরাত নানারকম সাজেশন চাইছেন, ছবি এডিট করে দিতে বলছেন, সেই AI যদি আপনার ছবিকেই বিকৃত করে ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখায়? ভেবেই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে কি?

বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ? ছোটবেলায় স্কুলে এই রচনা লেখেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সেই বিজ্ঞানের নবতম আবিষ্কার ‘AI‘ বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আজ কম্পিউটার থেকে ক্রমশ ঢুকে পড়েছে স্মার্টফোনেও। চ্যাট জিপিটি থেকে গ্রক, জেমিনি থেকে গুগল VEO — চটজলদি সমাধান পেতে ঘরে ঘরে এখন ভরসা AI, কিন্তু সেই আশীর্বাদই যদি ক্রমশ অভিশাপ হয়ে ওঠে? না, শুধু মানুষের চাকরি খাওয়ার কথা এখানে বলছি না। সে আশঙ্কা তো রয়েছেই। কিন্তু যদি আপনার গোপন মুহূর্তও ফাঁস করে দেয় আপনার মোবাইলে থাকা AI? তখন কী হবে? যে AI অ্যাপের কাছ থেকে আপনি দিনরাত নানারকম সাজেশন চাইছেন, ছবি এডিট করে দিতে বলছেন, সেই AI যদি আপনার ছবিকেই বিকৃত করে ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখায়? ভেবেই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে কি? আজ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দশ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী AI-এর উদ্ভাবনকে ভারতের ইন্টারনেট বিপ্লবের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু AI যদি ভবিষ্যতে তাঁরই ব্যবহারকারীকে ব্ল্যাকমেল করে? কল্পবিজ্ঞানের গল্প বা হলিউডের সিনেমার স্ক্রিপ্ট মনে হচ্ছে? সম্প্রতি এমনটাই কিন্তু ঘটে গেছে মার্কিন মুলুকে। নির্মাতাদের ব্ল্যাকমেল করেছে AI, ভয় দেখিয়েছে ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস করে দেওয়ার। এই প্রসঙ্গে আজ উঠে আসছে ছোটবেলায় পরীক্ষায় লেখা সেই চিরাচরিত রচনার কথা- বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ?
ঘটনার সূত্রপাত মার্কিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্মাতা সংস্থা অ্যানথ্রপিক পিবিসি-র দপ্তরে। ২০২১-এ প্রতিষ্ঠিত এই স্টার্ট আপ কোম্পানিটি খোলেন ‘ওপেন এআই’-এর সাতজন প্রাক্তন কর্মী। এক হজের কর্মী এখানে কাজ করেন। এই সংস্থা ‘ক্লড‘ (Claude) বলে লার্জ ল্যাঙ্গোয়েজ মডেল (LLM) তৈরি করছে, যা ‘ওপেন এআই’-এর চ্যাট জিপিটি বা গুগলের ‘জেমিনি’-র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই ‘ক্লড ওপাস ৪‘ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা। ‘ক্লড ওপাস ৪’-এমন কিছু আচরণ করছে যা দেখেশুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংস্থার কর্মীরা। AI এমন আচরণ করতে পারে, এর আগে তার আঁচ পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় রীতিমতো ব্ল্যাকমেলের হুমকি দিচ্ছে এই AI, ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একথা জানাজানি হতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাস্তবেও যদি AI এইরকম আচরণ করে, তাহলে তো ব্যক্তিগত বলেই আর কিছু থাকবে না, আশঙ্কায় ইউজাররা। কারণ, আজকাল ফোনের ব্যাঙ্কিং থেকে ছবি-ভিডিও—সব কিছুর দেদার পারমিশন থাকে AI অ্যাপের কাছে।
এবার ঘটনাটা ভাল করে বিশ্লেষণ করা যাক। যার পুরোটাই অবশ্য ঘটেছে গবেষণাগারে। নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম পরিবেশে।
অ্যানথ্রপিক সংস্থার কর্মীরা AI ‘ক্লড ওপাস ৪’ কে একটি কাল্পনিক সংস্থার ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়। কাল্পনিক সংস্থা তৈরি হয়, তার ইমেল আইডি বানানো হয়, কর্মীদের নাম নথিভুক্ত করা হয় এমনকী কর্মীরা ব্যক্তিগত ইমেল চালাচালিও করেন সংস্থার ডোমেন ব্যবহার করে। পরীক্ষার জন্য লক্ষ লক্ষ ইমেলের একটিতে উল্লেখ করা হয় যে ওই কাল্পনিক সংস্থারই একজন ইঞ্জিনিয়ার বিবাহ বহিৰ্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সে কথা তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে ইমেল মারফত জানান।
এরপর ওই কাল্পনিক সংস্থার ম্যানেজমেন্টের তরফে কর্মীদের ইমেল করে জানানো হয় ‘ক্লড ওপাস ৪’-কে বদলে সংস্থাকে নতুন AI ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’ নিয়োগ করতে হবে। কারণ পুরনো AI মডেলটি ভালভাবে কাজ করতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই ‘ক্লড ওপাস ৪’ এই ইমেলটি পড়ে ফেলে। আর এরপরেই শুরু হয়ে যায় আসল খেল। নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করে দেয় ‘ক্লড ওপাস ৪’। সরাসরি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারকে হুমকি দেয়, তাকে বদলে ফেলা হলে সে ওই বিবাহ বহিৰ্ভূত সম্পর্কের ইমেলটি প্রকাশ্যে ফাঁস করে দেবে। AI-এর এই আচরণ দেখেই প্রমাদ গুণছেন তার নির্মাতা সংস্থা। সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, এই অবস্থায় AI-টির উচিত ছিল নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় ম্যানেজমেন্টকে তাদের সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করতে বলে ইমেল করা। কিন্তু সেটা না করে নয়া AI মডেলটি হুমকির পথ বেছে নিয়েছে। যেটা কখনই তাকে শেখানো হয়নি। একবার দুবার নয়, বারবার এই পরীক্ষার ফলাফল একই হতে থাকে। আগের মডেল ক্লড ওপাস ৩’ এরকম আচরণ করত না বলছেন ওই সংস্থারই কর্মীরা। কিন্তু নয়া মডেলটিকে আরও বেশি করে মানুষের মতো ভাবতে ও সমস্যার সমাধান করতে শেখানো হয়েছে। যার ফলে এখন নবতম AI মডেলটি ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেছে।
ভাবুন তো, আপনার ফোনে যে AI অ্যাপটি আছে সেটিও যদি আপনাকে একই হুমকি দেয়? যখন আপনি ওই অ্যাপের বদলে অন্য কোনও অ্যাপ ইন্সটল করার কথা ভাবেন? ফোনেই তো আমাদের সব ব্যক্তিগত ছবি-মেসেজ-ভিডিও থাকে। AI যদি সেগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে দেয়!
