হ্যালো ম্যাডাম,
আমি বাব্বান মাহাতো। বিহারের শেখপুরার বাসিন্দা। গত তিন বছর ধরে আমি উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় বসবাস করছি। এখানে আমি বিদ্যুৎ বিভাগের চুক্তিবদ্ধ কর্মী। আমি মানুষের বাড়ি থেকে মিটার রিডিং নিই ও বিল দিই। পাশাপাশি গ্রাহকদের অভিযোগও নথিভুক্ত করি। বিদ্যুতের তারের খুঁটি মেরামত বা পরিবর্তনের কাজও করে থাকি। এর পরিবর্তে আমি বেতন পাই ১০ হাজার ৪০০ টাকা। আমাকে প্রায় ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। অফিসারের বাড়ির জন্য সব্জিও কিনে দিতে হয়। এত কিছু করার পরও গত ৫ মাস ধরে আমাদের বেতন আটকে রয়েছে। আমরা অনেক দাবি জানিয়েছি। ধর্না দিয়েছি। বিক্ষোভ দেখিয়েছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। তারপর জানলাম আপনি বাজেটের জন্য সাজেশন নিচ্ছেন। তাই আপনাকে এই চিঠি লিখছি।
ম্যাডাম, সরকার কিছু এজেন্সির মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতে আমাদের মতো শ্রমিকদের কাজের দায়িত্ব দেয়। এজেন্সিগুলো প্রথমে চাকরি দিতে দেড় লাখ টাকা ঘুষ নেয়। এরপর প্রতি মাসে তারা বেতনের একটি অংশও কেটে নেয়। যদি আপনি আমাদের ১৫ হাজার টাকা বেতন দেন তাহলে হয়তো আমরা ১০ হাজার টাকা পাব। পেনশন নেই, বিমা নেই। তবে হ্যাঁ, কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হলে পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আমাদের।
স্থায়ী কর্মচারীরা হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পান। তাঁদের কাজের সময় নির্দিষ্ট এবং তাঁরা আরও কিছু সুবিধাও বিনামূল্যেও পেয়ে থাকেন। সরকারি ক্যান্টিন থেকে সস্তায় গৃহস্থালির জিনিসপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা সে সব কিছু পাই না। সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় আমাদের চাকরি পাকা হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। সে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় না।
এখন জানা গেছে, সরকারি দপ্তরে স্থায়ী চাকরিও কমছে। আমার অনেক বন্ধু বিগত বছরগুলিতে কাজ করতে করতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন। কারণ সংস্থাগুলি যথাযথ সুরক্ষা গ্লাভস বা সরঞ্জাম আমাদের দেয় না। ম্যাডাম, আমাদের কাজের জন্য ঠিকঠাক মইও নেই। ফলে আমাদের সরাসরি খুঁটিতে উঠতে হয়। নাহলে হয় আমাদের আমাদের নিজেদের খরচ করে সরঞ্জাম কিনতে হবে অথবা যিনি অভিযোগ করেছেন তাঁকে নিজেকে সারিয়ে নিতে বলতে হবে।
ম্যাডাম, এজেন্সিগুলো ঘুষ আদায় করতে চাপ দেয়। এজেন্সির ম্যানেজার বলছেন, টাকা সরকারি কর্মকর্তাদের দিতে হয় তাই সাধারণ মানুষের থেকে কাজ করার পরিবর্তে টাকা নিতে। এখন অবস্থা এমন যে আমার বয়স ৪০ ছুঁয়েছে, সন্তানদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর এবং তাদের লেখাপড়া নিয়ে আমি চিন্তিত। বাবা-মা নিজেদের চিকিৎসা ও ওষুধ নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু তাঁদের কাছেও সেই পরিমাণ অর্থ নেই।
সরকারি প্রতিশ্রুতির উপর আমাদের আর আস্থা নেই। ম্যাডাম, আমাদের পরিচয়পত্রও নেই। আমরা কোথাও গেলে মানুষ বিশ্বাসও করে না যে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারি। সরকারি খরচে আমাদের ও আমাদের পরিবারের চিকিৎসার বন্দোবস্ত হলে ভাল হয়। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য কাজ করি। সরকারি কর্মচারীদের মতো আমরা যেন মাসে অন্তত কিছুটা বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পাই। অনেক আশা নিয়ে আপনাকে চিঠি লিখছি। আপনি আমাদের চাকরি পাকা করুন ম্যাডাম।
আন্তরিকভাবে,
বাব্বান মাহতো