Nirmala Sitharaman on Bank Deposits: ব্যাঙ্ক ডিপোজিটে বাড়বে সুদ? কী বলছেন অর্থমন্ত্রী?

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, এমন দু-জন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন ব্যাঙ্কগুলোকে পদক্ষেপ করার কথা বলেন তখন আমরা ধরে নিতেই পারি যে সেটা হবেই। আর সেটা যদি হয়, তা হলে কিন্তু ব্যাঙ্ক ডিপোজিটে সুদ বাড়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

Nirmala Sitharaman on Bank Deposits: ব্যাঙ্ক ডিপোজিটে বাড়বে সুদ? কী বলছেন অর্থমন্ত্রী?
| Updated on: Aug 14, 2024 | 12:05 AM

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, এমন দু-জন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন ব্যাঙ্কগুলোকে পদক্ষেপ করার কথা বলেন তখন আমরা ধরে নিতেই পারি যে সেটা হবেই। আর সেটা যদি হয়, তা হলে কিন্তু ব্যাঙ্ক ডিপোজিটে সুদ বাড়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কোন ধরনের সঞ্চয়ে
কতটা সুদ বাড়তে পারে তা এখনই বলা কঠিন। তা ছাড়া স্বাভাবিক নিয়মেই প্রতিটা ব্যাঙ্কের জন্য আলাদাই হবে

ব্যাঙ্কে টাকা রেখে সুদ পাওয়ার কথা যদি বলা হয়, তাহলে আমরা এখন লো ইন্টারেস্ট রেজিমে বাস করছি। গত ১-২ বছরে ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার কিছুটা বেড়েছে বটে। তবে, সেই আগের মতো সাড়ে ৭ বছরে টাকা ডবলের দিন ফেরেনি। আর, সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদের হার তো ইনফ্লেশন রেটের চেয়েও কম। মানে আপনি যদি সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে রাখেন তাহলে সময়ের সঙ্গে আপনার সঞ্চিত অর্থের মূল্য বাড়ার বদলে কমতে থাকবে। ফলে যেটা হয়েছে, সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কে টাকা রাখার আগ্রহ হারিয়েছেন। নতুন ডিপোজিট তো দূর অস্ত। লোকে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে নিয়ে এখন শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এটা চলতে থাকায় কমবেশি দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কই এখন ফান্ডের সমস্যায় ভুগছে।

আমেরিকা-ইউরোপে ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের একটা বড় অংশ আসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের সিংহভাগ আসে সাধারণ মানুষের জমানো টাকা থেকে। ফলে, সুদের হার ক্রমাগত কমে যাওয়ায় ব্যাঙ্কে আমানতের চরম ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এতে, সমস্যা হলো ব্যাঙ্কগুলো চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে পারছে না। অথবা তারা এখান-ওখান থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকায় লোন বিলি করছে। যার ফলে ব্যাঙ্কের ব্যবসায় ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে এনবিএফসি-গুলো। নগদ জোগানের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোর ওপরই নির্ভর করে দেশের প্রায় সব নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি। কিন্তু, ব্যাঙ্কের নিজের তহবিলই কমে যাওয়ায় এনবিএফসি-গুলো কোথা থেকে ফান্ড জোগাড় করবে তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ওপর আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কড়া নজরদারি আছে। ফলে তাদেরও হিসেব করে ঋণ দিতে হচ্ছে। হাতে টাকা এলেই তারা দুম করে তার সবটা লোন হিসাবে দিয়ে দিতে পারছে না। বিভিন্ন লোনের ক্ষেত্রে এনবিএফসি-গুলো আমাদের দেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পাইপলাইন বলতে পারেন।

এর ফলে, দেখা যাচ্ছে, সামগ্রিকভাবে লোনের ক্ষেত্রে একটা টান তৈরি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। এমন একটা পরিস্থিতিতে বাজেটের পরে গত শনিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেখানে তিনি বলেন, ব্যাঙ্ক ডিপোজিট আর ব্যাঙ্ক লোন হলো একটা গাড়ির দুটো চাকার মতো। কিন্তু লোনের চাহিদার সঙ্গে ডিপোজিট কালেকশন তাল মেলাতে পারছে না। ফলে, অর্থনীতির গাড়ি থমকে যাচ্ছে।

আমাদের সকলেরই অভিজ্ঞতা আছে যে ব্যাঙ্কে গেলে এখন ব্যাঙ্ককর্মীরা এসআইপি বা বিমার মতো বিভিন্ন জিনিস জোর করে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। যা কিনা তাদের মূল ব্যবসা হওয়ার কথা নয়। নির্মলা সীতারামন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই বৈঠক থেকে সমস্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে বলেছেন, জোর দিতে হবে মূল ব্যবসায়। মানে আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ বণ্টন। ডিপোজিট বাড়ানোর জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে আকর্ষণীয় প্রকল্প নিয়ে আসার কথাও বলেন তিনি। তাঁর কথার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও বলেন, সুদের ওপর এখন কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যাঙ্কগুলো সুদের ব্যাপারে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এই কারণেই মনে করা হচ্ছে যে ব্যাঙ্ক ডিপোজিটে সুদ বাড়ার একটা আশা কিন্তু দেখা যাচ্ছে। তবে এই অবস্থায় কয়েকটা কথা মাথায় রাখতেই হবে। প্রথমত, অনেক মানুষেরই হয়তো এফডি রয়েছে। কিন্তু, অটো রিনিউয়াল হয়ে যায় বলে ব্যাঙ্কে গিয়ে আর খোঁজ নেননি। খোঁজ নিয়ে দেখুন, দেখবেন হয়তো সুদ বেড়ে গেছে। সেক্ষেত্রে এফডি-র প্রি-ম্যাচিওর ক্লোজারে গিয়ে রি-ইনভেস্ট করলে আপনি হয়তো লাভবান হবেন। দ্বিতীয়ত, জুলাই মাসে খুচরো পণ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার সাড়ে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে, বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে, ব্যাঙ্কগুলোকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদে ঋণ দেয়, সেই রেপো রেট এইবারে কমতে পারে। রেপো রেট কমে গেলে তখন কিন্তু আবার ডিপোজিটে সুদের হার কমে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকবে। ফলে, এখন যদি দেখেন কোনও ব্যাঙ্কে সুদ বেশি পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে এখনই কিছু টাকা ইনভেস্ট করে দিতে পারলে ভালো। না হলে পরে পস্তাতে হতে পারে। আর শেষে যেটা বলবো, কানাড়া ব্যাঙ্ক, ইউকো ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদার মতো একাধিক ব্যাঙ্ক গতকাল থেকেই লোনের ওপর সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। বাকিরাও এই পথে হাঁটতে পারে। ফলে, আপনাদের যদি লোন থাকে, তাহলে কিন্তু ডিপোজিটের বাড়তি সুদ, লোনের ওপর ইন্টারেস্ট গুণতেই বেরিয়ে যেতে পারে।

Follow Us: